আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে শেষ ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি : হাসান
নব্বই দশকজুড়ে ব্যান্ড সংগীতজগতের ছিল রমরমা অবস্থা। সেই ক্যাসেট-ফিতার যুগে একটি মিক্সড অ্যালবাম বের হলেই লেগে থাকত দোকানগুলোতে ভিড়। একসঙ্গে উচ্চারিত হতো তিনটি নাম—আইয়ুব বাচ্চু-জেমস-হাসান।
এঁদের মধ্যে গত বছরের ১৮ অক্টোবর না-ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর সঙ্গে নানা স্মৃতি রয়েছে সে সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্কের ভোকাল হাসান। আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে নিজের সুখস্মৃতির কথা বলেছেন হাসান, বলেছেন আক্ষেপের কথাও।
এনটিভি অনলাইন : গত এক বছরে আইয়ুব বাচ্চুকে আপনি কতটা মিস করেছেন?
হাসান : আমি এখনো হোঁচট খাই, যখন বুঝতে পারি আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। এটা খুব বেশি বেদনাদায়ক। তিনি ছিলেন আমার একজন প্রকৃত অভিভাবক। তিনি নেই, এটা বিশ্বাস করতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। এই কষ্ট প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।
এনটিভি অনলাইন : শেষ কবে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
হাসান : রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে গত বছরের শুরুতে একটা কনসার্ট করেছিলাম। ওই কনসার্টে বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়। আমাকে তিনি বলেছিলেন, ‘তুই কখনো গান ছাড়বি না। আবার নতুন করে সবকিছু শুরু কর।’
বাচ্চু ভাই সব সময় আমাকে গান করতে উৎসাহ দিতেন। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মিষ্টিভাষী। কখনো বকা দেননি।
এনটিভি অনলাইন : আপনারা দুজন অডিও ইন্ডাস্ট্রির সহযোদ্ধা ছিলেন। সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে?
হাসান : বাচ্চু ভাইয়ের ব্যস্ততা অনেক বেশি ছিল। বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট করতেন তিনি। অডিও ইন্ডাস্ট্রির সময় আমি তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ছিলাম। একসঙ্গে দেশে-বিদেশে অনেক কনসার্ট করেছি। অনেক অনুষ্ঠানে আমাদের একসঙ্গে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল। এসব এখন শুধুই স্মৃতি। কারণে-অকারণে সব স্মৃতি চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে। ইতিহাসের একটা অধ্যায় হয়ে আছেন আইয়ুব বাচ্চু। সেই ইতিহাসের একটা অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। তবে কষ্টও আছে, কারণ বাচ্চু ভাই আর নেই।
এনটিভি অনলাইন : আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে আপনার কোনো আফসোস আছে?
হাসান : আমরা যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতাম, তখন অন্যরা আমাদের ছবি তুলতেন। কিন্তু আমরা কখনো নিজেদের ছবি তুলিনি। আসলে তখন ছবির গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। আমার কাছে বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে তোলা কোনো ছবি নেই। গুগলে মাঝেমধ্যে আমাদের একসঙ্গে ছবি দেখে পুরোনো দিনে হারিয়ে যাই। অবাক হই। এখন ভাবি, ছবি না তুলে কী ভুলই না করেছি।
এনটিভি অনলাইন : কোনো অপূর্ণ ইচ্ছা আছে?
হাসান : আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে শেষ ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। আমার একটা গোপন স্বপ্ন ছিল। খুব করে চেয়েছিলাম, আমার সুরে আইয়ুব বাচ্চু গান গাইবেন, আমিও তাঁর সুরে গান গাইব। এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন কিছু ছিল না। আমরা করতে পারতাম। কিন্তু এই উদ্যোগ আমি কখনো নিইনি। এটা ভেবে এখন কষ্ট হয়।
এনটিভি অনলাইন : আইয়ুব বাচ্চুর গান স্টেজে অনেক গেয়েছেন। তাঁর গান নতুন করে কাভার করার ইচ্ছা আছে?
হাসান : নতুন করে এখন যদি কোনো গান কাভার করি, তাহলে বাচ্চু ভাইয়ের গানই করব। সেটা যে তাঁর খুব জনপ্রিয় গান হবে, তা নয়। যেই গান আমার ভালো লাগবে, সেই গানই আমি কাভার করব।
এনটিভি অনলাইন : আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
হাসান : বাচ্চু ভাইকে নিয়ে আমার একটা গান লেখার ইচ্ছা রয়েছে। সেই গানের সুর আমি নিজেই করব। কণ্ঠও দেব আমি। তবে কবে কাজটা করব, সেটা এখনো ঠিক করিনি। হয়তো একদিন হঠাৎ করেই লিখব সেই গান।
এনটিভি অনলাইন : দর্শকের উদ্দেশে কিছু বলুন।
হাসান : আইয়ুব বাচ্চু কতগুলো গান গেয়েছেন, এটা সবাই জানেন। তবে অনেকেই জানেন না, তিনি অনেক শিল্পীর পাশে থেকেছেন। অনেক শিল্পীকে দিয়ে গান করিয়েছেন। ব্যান্ড সংগীতকে এগিয়ে নিতে তাঁর অবদান অপরিসীম। ব্যান্ড সংগীতের এই নক্ষত্রের মৃত্যু মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের। আমি এই কষ্টের ভেতর বাস করছি।