সুরে সুরে দর্শক মাতালেন রাহাত ফাতেহ আলী খান
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় চ্যারিটি কনসার্ট ‘ইকোস অব রেভোল্যুশন’।
গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে আর্মি স্টেডিয়ামের মঞ্চে ওঠেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খান। মঞ্চে উঠেই বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ বাংলায় বললেন শিল্পী। তারপর টানা পরিবেশনায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন শ্রোতাদের।
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এই কনসার্ট থেকে সংগৃহীত অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেল ৪টায় আর্মি স্টেডিয়ামে সিলসিলার কাওয়ালি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কনসার্ট। এরপর মঞ্চে আসেন র্যাপার হান্নান ও সেজান। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল র্যাপ সংগীত। তখন র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’ ও সেজানের ‘কথা ক’ গান দুটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গানটি গাওয়ার জন্য জেল খেটেছেন হান্নান। হান্নান শুরুতে ‘আওয়াজ উডা’ পরিবেশন করেন। তাঁর পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন আরেক আলোচিত র্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ শুরু করলে শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
বিরতির পর সাড়ে পাঁচটার দিকে মঞ্চে ওঠে রক ব্যান্ড আফটারম্যাথ। কনসার্টে শুরুতেই ব্যান্ডটি গেয়েছে তরুণদের মধ্যে আলোচিত গান ‘অধিকার’।
রক গানে আফটারম্যাথের উন্মাদনা ছড়ানোর পর আর্মি স্টেডিয়ামে সুরের মূর্ছনা ছড়াল জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুট। দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি। এরপর ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহারে জীবন’-এর মতো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ডটি।
গানের ফাঁকে মঞ্চে উঠে কথা বলেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ প্রমুখ।
এ ছাড়া আন্দোলনে আহত আতিকুর রহমান, খোকন চন্দ্র বর্মণ, শহীদ আহনাফের মা ও শহীদ সৈকতের বোনও মঞ্চে ওঠেন।
অবশেষে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন রাহাত ফাতেহ আলী খান। দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। আর্মি স্টেডিয়ামের অগণিত দর্শকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গান ধরলেন, ‘তু না জানে আস পাস হ্যায় খুদা’। এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘সাজনা তেরা বিনা’, ‘ওরে পিয়া’, ‘জরুরি থা’, ‘মেরে রাশকে কামার’, ‘আফরিন আফরিন’সহ জনপ্রিয় গানগুলো।
এভাবে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কনসার্টে সংগীতপ্রেমীদের মাঝে সুরে সুরে দর্শক মাতালেন এই পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী। আর ভক্তরা মুগ্ধ হয়ে গান উপভোগ করছেন এই শিল্পীর।
সংগীত ছাড়াও কনসার্ট ইভেন্টে জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চ নাটক এবং মুগ্ধ ওয়াটার জোনসহ আরও বিভিন্ন কর্নার ছিল। পুরো আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। কনসার্টটি চলে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আয়োজনটি উপস্থাপনা করেন জুলহাজ জুবায়ের ও দীপ্তি চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, রাহাত ফতেহ আলী খান প্রাথমিকভাবে মুসলিম সুফি হিসেবে ভক্তিমুলক গান গাইতেন। তিনি ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খানের ভাস্তে এবং ওস্তাদ ফররুখ ফতেহ আলী খান পুত্র। এ ছাড়াও তিনি পুরাণখ্যাত কাওয়ালি শিল্পী ফাতেহ আলী খানের নাতি।
পাশাপাশি তিনি বলিউডের জনপ্রিয় একজন নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। তার গাওয়া প্রথম বাংলা গান ‘তোমার-ই নাম লেখা’ এবং গানটি লিখেছে বাংলাদেশি গীতিকার রবিউল আউয়াল। গানটি গেয়ে তিনি বাংলাদেশে বেশ প্রশংসিত হয়।