যে রক্তের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণযোগ্য
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/12/22/blood_cancer.jpg)
সিএমএল হলো রক্তের একধরনের ক্যানসার বা এক প্রকারের লিউকেমিয়া। এর পুরো নাম ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া।
লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার হলেও এটা অন্যসব লিউকেমিয়ার তুলনায় অনেকটাই ভালো। কারণ, এটি সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ক্ষেত্রবিশেষে নিরাময়যোগ্যও বটে। সিএমএলের অধিকাংশ রোগীই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে থাকলে এবং নিয়ম করে ওষুধ খেলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। সেটা কেন হয়, তা বলা কঠিন। রেডিয়েশন থেকে হয়। আরো অন্যান্য ট্রিগারিং এজেন্টও আছে।
যা বলছিলাম, দেহের ৯ নম্বর ক্রোমোজোমে থাকে এবিএলওয়ান জিন। ২২-এ থাকে বিসিআর জিন। এবিএলওয়ান একটি ক্যানসার উদ্দীপক জিন। কিন্তু সে স্বাভাবিক অবস্থায় সুপ্ত থাকে। বিসিআরের সান্নিধ্যে এসে এবিএলওয়ান সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিসিআর-এবিএল ফিউশন প্রোটিন শ্বেত রক্ত কোষের বিভাজনকে উদ্দীপিত করে। এতে শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন।
সিএমএলের চিকিৎসা আবিষ্কার ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মানুষ যে একদিন ক্যানসারকে মামুলি ব্যাপার বানিয়ে ফেলতে পারে, তার একটি নমুনা দেখা যায় এই সিএমএলের চিকিৎসা আবিষ্কারের ঘটনার ভেতর দিয়ে। ইমাটিনিব নামক এক ধরনের ওষুধ এই বিসিআর-এবিএল ফিউশন জিনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে। বিশেষ জিনকে লক্ষ্য করে এরা কাজ করতে পারে বলে একে বলা হয় টার্গেটেড থেরাপি। বাংলা করলে দাঁড়ায় লক্ষ্যভেদী চিকিৎসা। একসময় সিএমএলের চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছিল মূল। টার্গেটেড থেরাপি আসার পর সিএমএলের চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রায় নির্বাসিত হয়েছে। ইমাটিনিবের পর একই গোত্রের আরো কিছু ওষুধ বাজারে এসেছে।
ইমাটিনিবের আবিষ্কার পুরো ক্যানসার চিকিৎসায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ক্যানসার যুদ্ধে নতুন অস্ত্র হিসেবে একে চিহ্নিত করে টাইমস ম্যাগাজিনের এক আর্টিকেলে। একে তখন নাম দেওয়া হয় ‘ম্যাজিক বুলেট’।
ইমাটিনিব প্রথম যখন বাংলাদেশে আসে, তখন সিএমএলের দৈনিক চিকিৎসা ব্যয় ছিল গড়ে দুই হাজার টাকার মতো। এখন বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো দেশেই এ ওষুধ তৈরি করে, যার একেকটির দাম পড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ দৈনিক খরচ তিনশ থেকে চারশ টাকার ভেতর।
এই একটি মুখে খাওয়ার ওষুধেই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে এবং রোগী সুস্থ মানুষের মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে।
আমাদের দেশে রোগীরা যখন জানতে পারে, তার সিএমএল বা ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া হয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে।
পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া বুঝিয়ে বলার পরও আরো ভালো কিছু পাওয়ার আশায় যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, বিদেশে পাড়ি দেন। সমস্যা হয় তাঁদের ক্ষেত্রে, যাঁরা সামর্থ্যের হিসাব করতে পারেন না। বিদেশ ঘুরে আসার পর যখন দেখেন, তাঁদের যে দৈনিক ইমাটিনিব বা এ জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেই ওষুধটিও কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন, তখন হয়তো আর কিছু করার থাকে না।
লেখক : রক্তরোগ ও রক্ত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।