রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে যা খাবেন, যা খাবেন না
অনেকেই আছেন, যাঁদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি। এমন রোগীদের খাদ্যাভ্যাস কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে অনেকের। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জানব, রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কী খেতে হবে বা খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে।
পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, আজকাল অনেকেই বলছে, আমরা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছি। রক্তে যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, সেটাকে আমরা হাইপারইউরিসেমিয়া বা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া বলি। রক্তে যে রেঞ্জে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা থাকতে হয়, তা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেড়ে গেলেও কিন্তু অনেকে অভিযোগ করেন, পায়ে ব্যথা বা অনেক সময় জ্বালাপোড়া করে, ক্র্যাম্পিং করে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সবাইকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। তবে এটাও ঠিক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে ওষুধের চেয়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে একটি প্রোপার ডায়েট। কেননা, ডায়েটের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারেন।
তামান্না চৌধুরী বলেন, খাবারে দেখা যায় পিউরিনের মাত্রা বা পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে স্বাভাবিক করতে পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন—টমেটো, শসা, গাজর এবং যেকোনো লাল রঙের সবজিকে এড়িয়ে যেতে হবে। এ সময় ডাল বা ডালজাতীয় খাবারগুলো এড়িয়ে চললে আপনি সহসাই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে পারবেন।
মাংসের ক্ষেত্রে বলা হয় যে পাখির মাংস, যেমন—কবুতর বা হাঁস; এ জাতীয় মাংস এবং গরু-খাসির মাংস এড়িয়ে চলা অবশ্যই উচিত। সেইসঙ্গে বিভিন্ন অরগ্যান মিট, যেমন—কলিজা, ঘিলা, মগজ; এগুলো খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে প্রোটিনের জন্য আপনি ডিমের সাদা অংশ, দুধ, টক দই অথবা মাছ থেকে আপনার প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন। যেহেতু এ সময় আমরা অনেক বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে বলি, তাই সারা দিনে প্রোটিনের চাহিদা মেইনটেইন করার জন্য এ খাবারগুলো আপনাকে সাহায্য করে থাকবে।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে পিচ্ছিল জাতীয় সবজি, যেমন—ঢেঁড়শ, ফুলকপি, কচুর লতি বা কচুর মুখী; এগুলোও আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। সাধারণত সবুজ পানীয় সবজি, যেমন—লাউ, চালকুমড়া, পটল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা; এগুলো আপনার খাবারের তালিকায় বেশি করে রাখবেন। অবশ্যই পানি খেতে ভুলবেন না। পানি কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডকে ইউরিনের মাধ্যমে বের করে রক্ত থেকে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে খাবার নিয়ন্ত্রণ করার দুই মাস পর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে নরমাল হয়ে গেলে বাদকৃত খাবার আবার শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তারপর সেই খাবার পরবর্তীতে গ্রহণ করা যেতে পারে। সুতরাং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে আপনি অবশ্যই ডায়েট ঠিক করে ফেলুন। তাহলে নিজেকে অনেক দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারবেন।