লিভারের সমস্যায় যা খাবেন, যা খাবেন না
লিভার বা যকৃৎ মানবদেহের সর্ববৃহৎ গ্রন্থি। দেহপ্রক্রিয়ায় যতগুলো কাজ হয়, সবকিছুর সঙ্গেই লিভার জড়িত। সুস্থ থাকার জন্য তাই আমাদের উচিত লিভারের যত্ন নেওয়া। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার এ ক্ষেত্রে আমাদের সহায়ক হয়।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুর। তিনি বলেন, লিভারের কোনো রোগ থাকলে বা কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের দেহে শক্তি জোগানোর জন্য সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। লিভারের রোগগুলোর মধ্যে যেসব কারণকে দায়ী করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা, সকালবেলা ইউরিন পাস না করা, ব্রেকফাস্ট না করা, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ, অ্যালকোহলজাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।
পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুরের পরামর্শ, খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমদের বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এমন কোনো খাবার যেন আমরা নির্বাচন না করি, যাতে লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সহজে হজম হয়, এ ধরনের খাবার নির্বাচন করতে হবে। সবজির ক্ষেত্রে যেমন আমরা পেঁপে, লাউ, ঝিঙে; এ ধরনের খাবার নির্বাচন করতে পারি। অনেকের ধারণা, লিভার ডিজিজের ক্ষেত্রে প্রোটিন রেস্ট্রিকশনের প্রয়োজন। সব ক্ষেত্রে এ ধারণা ঠিক নয়। প্রোটিন দেহের গঠন, ক্ষয় পূরণ এবং বৃদ্ধিসাধন করে। কিন্তু লিভার ডিজিজের ক্ষেত্রে লিভার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে লিভারে ওয়েস্ট প্রোডাক্ট তৈরি হয় এবং তা ব্রেইনে অ্যাফেক্ট করে। ফলে হেপাটিক অ্যানসেপালোপ্যাথি দেখা দেয়।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, লিভার ডিজিজ স্ট্যাবল রাখার জন্য কিছু নিয়ম আমাদের মেনে চলা উচিত। যেমন—দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদার ৬০ থেকে ৭০ পারসেন্ট আমরা কার্বোহাইড্রেট খাবার থেকে নিতে পারি। এর মধ্যে হোলগ্রেইন জাতীয় খাবার, যেমন—রাইস, পাস্তা ইত্যাদি নিতে পারি। ২০ থেকে ৩০ পারসেন্ট আমরা প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে নিতে পারি। এর মধ্যে ভেজিটেবল প্রোটিন, অ্যানিমেল লিন প্রোটিন হতে পারে। ১০ থেকে ২০ পারসেন্ট আমরা ফ্যাট জাতীয় খাবার, যেমন—পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হিসেবে আমরা বাদাম, মাছের তেল ইত্যাদি নিতে পারি। সারা দিন আট থেকে ১২ গ্লাস পানি আমাদের নেওয়া উচিত। তা ছাড়া সারা দিনের খাবারে সোডিয়ামের চাহিদা কখনোই এক থেকে এক দশমিক পাঁচের বেশি হবে না। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট আমাদের নেওয়া উচিত। কারণ, এ সময় অনেক ক্ষেত্রে নার্ভাস সিস্টেমে অসুবিধে দেখা দেয়। তা ছাড়া লো ব্লাড কাউন্ট হতে পারে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার হিসেবে আমরা আমলকি নিতে পারি। কারণ, এই ভিটামিন সি ভেজিটেবলের আয়রন অ্যাবজর্বসনে সহায়তা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তা ছাড়া অ্যালকোহল জাতীয় খাবার অবশ্যই বর্জন করতে হবে। এক্সেসিভ ক্যাফেইন ইনটেক অর্থাৎ চা-কফি সারা দিনে কখনোই দুবারের বেশি হবে না। তা ছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, আয়রন এবং ভিটামিন বি৩ গ্রহণ করা যাবে না। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অবশ্যই লিভারের ওপরে যাতে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রেখে আমাদের খাবার নির্বাচন করতে হবে এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে উচিত লিভারকে সুস্থ রাখা।