সকালের নাশতা খেলে ওজন বাড়ে!
সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্ট নিঃসন্দেহে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। ডায়েট মেনে যাঁরা চলেন, তাঁদের অনেকেরই ধারণা যে সকালে নাশতা করলে ওজন কমে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাশতা ওজন কমাতে খুব সহায়ক হবে না।
গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা প্রতিদিনের সকালের নাশতায় ২৬০ ক্যালরির বেশি খায়, তাদের ওজন যাঁরা সকালে নাশতা করে না তাঁদের তুলনায় অন্তত এক পাউন্ড বেশি হয়। বার্তা সংস্থা ইউএনবি প্রকাশ করেছে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসম্মত সকালের নাশতা হতে পারে ক্যালসিয়াম এবং আঁশজাতীয় খাবারের ভালো উৎস। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সকালের ভালো নাশতা মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রাতরাশ আপনাকে দেবে শক্তি। সকালে ভরপেট নাশতা করলে দিনের পরের দিকে আপনার খুব বেশি ক্ষিদে লাগবে না। এতে বারবার এটা-সেটা খাওয়ার দরকার পড়বে না। আর আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর জন্য নাশতা বেশ জরুরি।
এর আগে পর্যবেক্ষণভিত্তিক যেসব গবেষণা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছিল, শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখার ক্ষেত্রে সকালের নাশতা বেশ সাহায্য করে। সকালের নাশতা খাওয়ার সঙ্গে ভালো ওজনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
তবে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, সকালে নাশতা খেলেই যে শরীরের ওজন স্বাস্থ্যসম্মত পর্যায়ে রাখা যাবে, তার প্রমাণ নেই। সকালের নাশতা নিয়ে মোট ১৩টি গবেষণার পর্যালোচনা করেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা।
মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকদল তাঁদের পর্যবেক্ষণ থেকে বলছেন, সকালে নাশতা করা বন্ধ করলে তা দৈনিক ক্যালরির পরিমাণ হ্রাস করার ভালো একটি উপায় হতে পারে।
তারা গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, নিয়মিত প্রাতরাশ গ্রহণকারীদের সার্বিক ওজন বাড়ে এবং অন্যদিকে যারা সকালের নাশতা বর্জন করছে, তাদের দুপুরে খুব বেশি খিদে পাচ্ছে না।
তারা আরো বলছে, বয়স্কদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রাতরাশের সুপারিশ করার সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কারণ এর বিপরীত প্রভাবও থাকতে পারে।
অবশ্য গবেষকরা স্বীকার করছেন, তাদের পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অল্প সময়ের জন্যে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, মাত্র দুই থেকে ১৬ সপ্তাহের জন্য। সেইসঙ্গে সকালের নাশতা গ্রহণকারী বা বর্জনকারীদের শক্তি সঞ্চয়ের পরিমাণও অল্প সময়ের জন্যে তুলনা করা হয়।
দীর্ঘ মেয়াদে ব্রেকফাস্ট করা এবং না করা ব্যক্তিদের নিয়ে আরো দীর্ঘ মেয়াদে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া উচিত বলে মত দেন এই গবেষক দল।
স্বাস্থ্যকর সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্ট কোনটি?
শক্তি সঞ্চয় করতে চাইলে আপেল পাই খেয়ে দেখতে পারেন। সঙ্গে চাই দারুচিনি ও সিদ্ধ করা মটরশুঁটি ও রুটি।
আমিষের ঘাটতি মেটাতে চাইলে রুটি বা টোস্টের সঙ্গে থাকবে শাকসবজি এবং ডিম ভুনা অথবা কম চর্বিযুক্ত দইয়ের সঙ্গে ফল ও বাদাম। থাকতে পারে হালকা কিছু ফল, কলা বা রুটি বা টোস্টের সঙ্গে ঘন করে অ্যাভোকাডো।
লন্ডনের কিংস কলেজের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং পুষ্টিবিদ অধ্যাপক কেভিন ভেলান বলেন, ‘এই গবেষণা এটি বলছে না যে প্রাতরাশ করা শরীরের জন্য খারাপ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দুধের সঙ্গে সিরিয়াল ভালো উৎস হতে পারে ক্যালসিয়াম ও আঁশের।’
কিন্তু বিএমজির গবেষকরা এই বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কাজ করেননি।
প্রফেসর কেভিনের মতে, তাঁরা এটি বলছেন না যে ব্রেকফাস্ট করা বা সকালের নাশতা করা স্থূলতার কারণ।