কৃত্রিম রং ধরা পড়বে সহজেই
ফলে বা সবজিতে কৃত্রিম রং আছে কি না, তা পরীক্ষা করা এখন অনেক সহজ। যেকোনো ক্রেতা ফল বা সবজি কেনার আগে তাতে কৃত্রিম রং আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন বের করেছেন কৃত্রিম রং ব্যবহৃত ফল শনাক্ত করার পদ্ধতি। ওই দ্রবণের মাধ্যমে এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে ফলে কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি আছে কি না, তা বোঝা যাবে।
প্রায় দুই বছর গবেষণায় এ ব্যাপারে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানী ফারুক। আর পদ্ধতিটি এতই সহজ যে তা নিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না ক্রেতাকে। গবেষক ফারুক এই পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন কৃত্রিম রং ব্যবহৃত ফল এবং সবজি শনাক্তকরণ প্রযুক্তি বা দ্রবণ পদ্ধতি।
উদ্ভাবক ফারুক বিন হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, লাল ও হলুদ বর্ণের ফল ও সবজি আকর্ষণীয় করার জন্য এবং আধাপাকা ফলকে পাকা দেখানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ী কাপড়ে ব্যবহার করার কৃত্রিম রং ফলে ব্যবহার করেন। তাতে ক্রেতারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এর চেয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে স্বাস্থ্য।’ তিনি আরো জানান, প্রতারণা আর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কী করা যায়, সে চিন্তার ফসলই হচ্ছে তাঁর এই উদ্ভাবন।
যেসব ফল ও শাকসবজি পরীক্ষা করা যাবে
ফারুক জানান, দ্রবণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যারোটিনয়েড ও লাইকোপিন পিগমেন্ট-সমৃদ্ধ লাল ও হলুদ বর্ণের ফল ও সবজিতে কৃত্রিম রং ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবেই জানা যাবে। তরমুজ, টমেটো, চেরি ও গাজরের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব।
যেভাবে বোঝা যাবে কৃত্রিম রঙের অস্তিত্ব
প্রথমেই ফল বা সবজিটির কিছু অংশ থেঁতলে অল্প প্রায় পাঁচ মিলি পরিমাণ রসের সঙ্গে দুই ফোঁটা দ্রবণ মেশাতে হয়। মেশানোর রং যদি গাঢ় সবুজ না হয়, তাহলে বুঝতে হবে ফলে কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে।
ফারুক বিন হোসেন বলেন, ফলের রসের সঙ্গে দ্রবণ মেশানোর পর যদি এর বর্ণ বেগুনি, গোলাপি বা অন্য যেকোনো রং হয় বুঝতে হবে তরমুজ, টমেটো, চেরি বা গাজরটিতে কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে। যদি গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে, তবে বোঝা যাবে তা অক্ষত আছে।
তিনি বলেন, পদ্ধতিটি প্রয়োগের ফলাফলে কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি পেলে ভোক্তা অধিকার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে ক্রেতাদের।
পরীক্ষায় খরচ
প্রতিবার এ পরীক্ষার জন্য খরচ হবে মাত্র দুই থেকে তিন টাকা। আর অল্প খরচের পাশাপাশি এ প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেও এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন এর উদ্ভাবক। তিনি বলেন, ব্যবহার করার সময়ে হাতে বা শরীরে অসাবধানতায় দ্রবণটি পড়ে গেলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ মিশ্রণটিতে ক্ষতিকর এসিড ব্যবহার করা হয়নি।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্রবণটি বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে। টেস্টটিউবসহ দ্রবণটি একটি বাক্সে ‘কিট’ আকারে পাওয়া যাবে বলে ফারুক জানিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ‘কিট’টি পাওয়া যাবে। দাম পড়বে ৩০০ টাকা।