চুল বেশি পড়ছে?
আপনার কি চুল পড়ে যাচ্ছে? পাতলা চুল বা চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় অনেকের। চুল পড়া সৌন্দর্যহানি ঘটাতে যথেষ্ট। তবে ভালো খবর হলো এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রত্যেকেরই চুল পড়ে। আপনি যদি চিরুনিতে কিছু চুল দেখেন, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। চুল তৈরি হয় একধরনের প্রোটিন যাকে কেরাটিন বলা হয় সেটি দিয়ে; এটি চুলের ফলিসেল তৈরি করে। ফলিসেল নতুন চুলের কোষ তৈরি করে। পুরোনো কোষগুলো তখন ঝরে পড়ে। চুল পড়ে যাওয়া বিষয়টি অত্যন্ত স্বাভাবিক। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েব এমডির তথ্যমতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথায় এক লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি চুল স্বাভাবিকভাবেই পড়ে যেতে পারে। তবে এটি সত্যি যে নারীর চেয়ে পুরুষের চুল পড়ার হার বেশি।
যখন বেশি চুল পড়ে
বেশি চুল পড়া গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, খাদ্যাভ্যাসে গণ্ডগোল এবং ভিটামিনের অভাব হলে এই সমস্যা হয়। বংশগত কারণ অথবা এন্ড্রোজেনেটিক এলোফেসিয়ার কারণেও এই সমস্যা হয়। আপনার বাবা-মায়ের যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে তবে আপনারও এই সমস্যা হতে পারে। অবশ্য হরমোনজনিত কারণে পুরুষের মাথায় টাক পড়া বা চুল কমে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
মানসিক চাপ আরেকটি প্রাথমিক কারণ চুল পড়ার; যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এ ছাড়া কখনো কখনো চুল পড়া কিছু অস্থায়ী কারণেও হতে পারে।
তবে চুল পড়া রোধের চিকিৎসায় ওষুধ খাওয়া বা বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করার আগে একবার দেখুন আপনার খাবারের থালায় কী খাবার আছে। কেননা চুল ভালো রাখা স্বাস্থ্যকর খাবারের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আপনার চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রোটিন, জটিল কার্বোহাড্রেট ও আয়রন।
শরীরের মধ্যে চুলের কোষ খুব দ্রুত বাড়ে। তবে যদি আপনি সঠিক খাবার না খান এবং আপনার শরীরে যদি এসবের অভাব থাকে তবে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চুল। তাই সঠিক পরিমাণে পুষ্টি খুব জরুরি। আয়রন ও প্রোটিনের অভাবে কীভাবে চুল পড়ে এ নিয়ে এনডিটিভি প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন।
আয়রনের অভাব নারীর চুল পড়ার বড় কারণ
আয়রনের অভাব নারীর চুল পড়ার বড় কারণ। বিশেষ করে ছোটবেলায় এবং পোস্টমেনোপজ হওয়া নারীর ক্ষেত্রে। এই সময় রক্তের মধ্যে লোহিত রক্তকণিকা পর্যাপ্ত থাকে না। লোহিত রক্তকণিকা কোষে অক্সিজেন পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং দেহে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এটি স্বাস্থ্যকর চুলের জন্যও জরুরি।
যখন চুলের ফলিসেল তৈরি হয়, তার অনেক আয়রনের প্রয়োজন হয়। যাদের ঋতুস্রাবের সময় বেশি রক্তপাত হয়, তারা আয়রনের ঘাটতি হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে থাকে। আয়রনের অভাব হলে অবসাদ, ছোট শ্বাস, ম্লানভাব এবং উদ্বেগ লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। পাশাপাশি এর অভাব হলে চুল পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে যত শতাংশ লোক রয়েছে এর মধ্যে ৩০ শতাংশ লোক রক্তস্বল্পতায় ভোগে। উন্নয়নশীল দেশে প্রতিমুহূর্তে সন্তানসম্ভবা নারী এবং ৪০ শতাংশ শিশু যারা এখনো স্কুলে যায়নি তারা রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকে। তবে এর কারণ শুধু দারিদ্র্য নয়, খাদ্যাভ্যাসও একটি বড় কারণ।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখে শরীরে আয়রনের অভাব আছে কি না, তা বের করা হয়। নারীর ক্ষেত্রে এটা ৯ থেকে ১১ মধ্যে থাকলে ভালো। তবে আদর্শ হচ্ছে ১২। পুরুষের জন্য ১১ থেকে ১৩ হলে ভালো। এ ছাড়া আরো কিছু পরীক্ষা আছে; টোটাল আয়রন বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি ও সিরাম ফেরিটিন।
আপনি যদি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন, তবুও আপনার আয়রনের অভাবে চুল পড়তে পারে।
লতাপাতা-জাতীয় সবজি, মাছ, পাম্পকিন বীজ, বাদাম, মটরশুটি, সয়াবিন-এ ধরনের খাবারগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন। এ ছাড়া ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার খান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১২ মিলিগ্রাম আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য প্রোটিন জরুরি
স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য প্রোটিন খুব জরুরি। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ না করেন, তাহলে চুলের ফলিসেলের পরিমাণ কমে যাবে। প্রোটিনের অভাবে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়বে। প্রতিটি কোষের জীবনধারণের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। এটি নতুন টিস্যু গঠন এবং টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় ৩০ শতাংশ প্রোটিন থাকা উচিত। প্রোটিন আমরা পাই পনির, মাছ, মাংস, দুধ, সয়া, লিগমিস, দই ইত্যাদি থেকে।
তাই চুল ভালো রাখতে প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন।