ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ কেন হয়

স্লিপ এপিনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধের সমস্যা অনেকেরই হয়। এই রোগ অনেক সময় জটিল হয়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যাও হতে পারে। আজ ৯ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৬১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের নাক-কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কসমেটিক সার্জন ডা. ফেরদৌস কাদের মিনু।
প্রশ্ন : স্লিপ এপিনিয়া বিষয়টি কী?
উত্তর : স্লিপ এপিনিয়া হলো ঘুমের একটি সমস্যা। এটা প্রাপ্তবয়স্কদের বেশির ভাগ সময়ে হয়। তবে এটা এখন অনেক সময় বাচ্চাদেরও হয়। একজন মানুষ যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন যদি তার দম বন্ধ হয়ে যায়, এটি অনেক সময় একবার থেকে ৩০ বারও হতে পারে, তখন তাকে স্লিপ এপিনিয়া বলে। এই সমস্যায় অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। শ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসে। রোগী খুব জোর দিয়ে নিজেকে জাগিয়ে ফেলে, এর পর আবার সে ঘুমিয়ে যায়। মূলত ঘুমের মধ্যে যে শ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এটাই স্লিপ এপিনিয়া। হঠাৎ করে এই শ্বাসকষ্টটার কারণে তার ঘুমটা ভেঙে যায়। এটি খুব প্রচলিত একটি সমস্যা।urgentPhoto
কিন্তু অনেক মানুষই এটা বুঝতে পারে না। বুঝতে পারে না কারণ, আমরা এই বিষয়ে জানতাম না। যত আমরা জানতে পারছি, ততই এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করছি। এই জিনিসটি আসলে একটি সমস্যা।
অনেকে বুঝতে না পেরে ভাবে, তার বালিশটা ঠিক নেই। ঠান্ডা লেগেছে। শোয়াটা ঠিকমতো হচ্ছে না। এগুলো বলে অনেকে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তবে এটা অনেক জটিলতার দিকে যেতে পারে।
প্রশ্ন : যে ব্যক্তির এই সমস্যা হচ্ছে, সে তো বিষয়টি বুঝতে পারছে না। তাহলে তার পাশে যে ঘুমাচ্ছে, সে কীভাবে সমস্যাটি বুঝবে?
উত্তর : এই রোগীগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সে সমস্যাটি সহজে বুঝতে পারছে না। সে বিশ্রামহীন থাকে। অবসাদগ্রস্ত থাকে, ক্লান্ত থাকে। কাজে কোনো মনোযোগ দিতে পারে না। সাধারণত দিনের বেলায় এরা খুব ঝিমায়। এমনকি কাজ করতে গিয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। এ রকম অনেক রোগী আছে।
অনেকে হয়তো ভাবে, এটি চাপের জন্য হচ্ছে। তবে আসলে এই বিষয়টি এর জন্য হয় না। তার সঙ্গী যে সঙ্গে ঘুমায়, সে এটা বলতে পারে। সাধারণত তারাই রোগীকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে এসে তাদের অভিযোগটা কী থাকে?
উত্তর : বলে, বারবার রাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। এ রকমও রোগী আছে, যাদের রাতে ৩০ বার করে ঘুম ভাঙে। যাদের জটিলভাবে এপিনিয়া হয়, তাদের এই সমস্যা হয়। আবার অনেকে আসে শুধু নাক ডাকার অভিযোগ নিয়ে। অনেকে জোরে জোরে নাক ডাকে এবং ঘুম ভেঙে যায়।
প্রশ্ন : নাক ডাকার সঙ্গে কি স্লিপ এপিনিয়ার কোনো সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর : সম্পর্ক অবশ্যই আছে। আমরা যেটা দেখেছি, স্লিপ এপিনিয়া সাধারণত তিন ধরনের—একটা সেন্ট্রাল, আরেকটি অবস্ট্রাকটিভ, আরেকটি মিক্সড। যে বিষয়টি অবস্ট্রাকটিভ, অর্থাৎ ঘুম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এটার একটা বিষয় হচ্ছে নাক ডাকা। অনেকে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে, বিশেষত যাদের নাকে সমস্যা হয়, তারা এটা ভাবে। তাই আমরা ইএনটি চিকিৎসকরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপিনিয়া যাদের আছে, সেটাতে আমরা কাজ করি। এই বাধাগুলো আমরা সারানোর চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : কারা সাধারণত এই সমস্যায় ভোগে?
উত্তর : যাদের বয়স ৪০-এর ওপরে, যারা মোটা, এখন দেখতে পাচ্ছি বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা হয়। যেসব বাচ্চার এডিনয়েড থাকে, নাকটা বন্ধ থাকে, তারা মুখ খুলে ঘুমায়, তাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না। এডিনয়েডের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার গলাটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই গলাও বন্ধ, নাকও বন্ধ; বাচ্চাটা আর ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। তখন স্লিপ এপিনিয়াটা তার মধ্যে চলে আসছে।
প্রশ্ন : স্লিপ এপিনিয়ার চিকিৎসা আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : আমাদের দেশে এখনো এর চিকিৎসার বিষয়টি ঠিকভাবে হয়নি। বিদেশে করা হয়। ঘুমের ধরন ঠিক করা হয়। একটি মানুষকে ঘুমের ল্যাবে নিয়ে গেলে ঘুমিয়ে যায় সে। কিছু যন্ত্র শরীরে লাগানো থাকে, তখন ঘুমের ধরনটাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় তার কী হয়, এটা দেখা হয়। আমাদের দেশের কয়েক জায়গায় এখন এটা শুরু করা হয়েছে। তার পর যখন নাক-কান-গলার চিকিৎসকের কাছে আসে, আমরা দেখি, কোথায় কোথায় বাধাপ্রাপ্ত (অবস্ট্রাকশন) হচ্ছে। কোনো বাধা আছে কি না। নাকটা পরিষ্কার আছে কি না। আদৌ তার কোনো সমস্যা আছে কি না। তার গলাটা পরিষ্কার আছে কি না। তার পেশিগুলো যে আছে, এটা ঠিক আছে কি না। অনেকের দেখা যায়, ছোট ঘাড়, তাদের শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা হয়, আবার নাকটা যদি ব্ন্ধ থাকে, তখনো যে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না।
কারণটা আগে বের করতে হবে। বাইরের দেশে স্লিপ এন্ডোসকোপি করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে কোন টিস্যুটা বেশি ফুলে যাচ্ছে। এই জিনিসগুলো নির্ণয় করা হলে পরে সার্জারি করা হয়। প্রথমেই আমরা রোগীকে যেটা দিই, স্লিপ এপ বলে একটি মেশিন আছে, ওইটা পজিটিভ এয়ার প্রেশার দেওয়া হয়। এটা দিলে পেশিগুলো আর সমস্যা করে না। ওগুলো খোলা থাকে। তখন রোগী শ্বাস নিতে পারে। কম স্লিপ এপিনিয়া যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্লিপ এপ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সার্জারির দিকে যাই আমরা।
প্রশ্ন : এ ধরনের চিকিৎসার পরে কি রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়?
উত্তর : একদম সুস্থ হয়ে যায়। তার ঘুম আসে। সে ক্লান্ত থাকে না। তার নিয়মিত কার্যক্রমগুলো ঠিকমতো করতে পারে। দেখা যায়, স্লিপ এপিনিয়া যাদের থাকে, তাদের হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা হয়। সেগুলো থেকে তারা নিরাপদে থাকে।