ঋতুস্রাব নিয়মিত করে পেঁপে
ক্রিস্টোফার কলম্বাস পেঁপের নাম দিয়েছিলেন "fruit of the angels"। এর মিষ্টি স্বাদ ও পুষ্টিগুণ এই নামকে যথার্থ করেছে। পেঁপে সাধারণত বছরজুড়েই বাজারে পাওয়া যায়। তবে গ্রীষ্মের শুরুতে এর ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।
পেঁপের আদি উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ মেক্সিকো। শত শত বছর আগে থেকে খাদ্য ও ওষুধি হিসেবে পেঁপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেঁপে গাঢ় কমলা হতে হলুদ বা গোলাপি বর্ণের হয়। এর অভ্যন্তর ভাগজুড়ে থাকে অসংখ্য কালো বর্ণের গোলাকার বীজ। পেঁপের খানিক তেতো স্বাদযুক্ত এই বীজগুলোও খাওয়া যায়। কাঁচা পেপেতে পেঁপেইন নামক এক প্রকার এনজাইম থাকে যা প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে। তাই মাংসের সাথে কাচা পেঁপে রান্না করলে তা মাংস পরিপাকে সহায়ক হয়। আমাদের দেশে এটি একটি প্রচলিত খাদ্য। এই পেপেইন চুইংগাম শিল্পেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
পেপের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ভিটামিন উল্লেখযোগ্য। পরিপক্ব হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে এই ভিটামিন এর পরিমাণ বিভিন্ন হয়। ভিটামিন এ, সি, বি১, বি২, বি৩, বি৬, ই, ফলিক এসিড পেঁপের উল্লেখযোগ্য।
পেঁপে খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ একটি ফল। তবে এতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানের পরিমাণ নির্ভর করে উৎপত্তিস্থলের মাটির ওপর। সচরাচর যে খনিজ উপাদানগুলো পাওয়া যায় তা হলো ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম।
আমাদের দেহে জারণ ও মুক্ত র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সেটি পেঁপেতে উচ্চ মাত্রায় পাওয়া যায়। পেঁপের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে ক্যারোটিন ও প্রোভিটামিন এ উল্লেখযোগ্য।
আমাদের দেহ গঠন, বর্ধন ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিডের প্রায় সবই পেঁপেতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে হিস্টিডিন, অ্যালানিন, অ্যাসপারটিক এসিড, সিস্টিন, গ্লুটামিক এসিড, গ্লাইসিন, প্রোলিন, সিরিন, আইসোলিউসিন, লিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফিনাইলএলানিন, থ্রিওনিন, ট্রিপটোফ্যান, ভ্যালিন, আরজিনিন উল্লেখযোগ্য।
পেঁপের পুষ্টিগুণ ছাড়াও এর ওষুধিগুণ একে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। নিচে জানানো হলো পেঁপের ১০টি গুণের কথা।
১. গলার যেকোনো ইনফেকশনে পেঁপের জুসের সাহায্যে গার্গল করা হলে ইনফেকশন দ্রুত সেরে যায়।
২. পেঁপের জুস ডায়রিয়া সারাতেও সাহায্য করে। স্তন্যদাত্রী মায়ের দুধ বৃদ্ধি করতে তাজা পেঁপে গ্রহণ করা খুবই উপকারী। এ ছাড়া মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়মিত করতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
৩. দুই সপ্তাহ প্রতিদিন নিয়মিত তাজা, কাঁচা পেঁপের রস গ্রহণ করা হলে জন্ডিস হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪. নিয়মিত পেঁপে অথবা পেঁপের রস গ্রহণ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পেঁপে ফাইবার, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। এই সব পুষ্টি উপাদান ধমনীতে কোলেস্টেরলকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. মিষ্টি স্বাদযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পেঁপেতে চিনির পরিমাণ কম। টুকরো করা এক কাপ পেঁপেতে চিনির পরিমাণ ৮.৩ গ্রাম। এ কারণে পেঁপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম যা ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে পেঁপেকে প্রিয় করে তুলেছে।
৬. পেঁপে ভিটামিন এ ও ফ্ল্যাভোনোইড্স সমৃদ্ধ যা চোখের সুরক্ষার জন্য জরুরি। বয়সের কারণে চোখের যেসব সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেসব প্রতিরোধেও পেঁপের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, টমেটো ও গাজর অপেক্ষা পেঁপের ক্যারোটিনয়েডের কার্যকারিতা অনেক গুণ বেশি, তাই চোখের সুরক্ষায় পেঁপে এই দুটি ফল অপেক্ষা অধিক উপকারী।
৭. নিয়মিত পেঁপে গ্রহণে আরথ্রাইটিসের কষ্ট অনেকটাই কমে। পেঁপের ভিটামিন সি ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটরি গুণ হাঁড়ের যেকোনো সমস্যায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৮. পেঁপের পুষ্টি উপাদানগুলো মলাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে এর ফলেট, ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই এ ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী ভূমিকা পালন করে। পেঁপের ফাইবার মলাশয়ে উপস্থিত ক্যানসার সৃষ্টিকারী বিষাক্ত উপাদানগুলোকে যুক্ত করে এদের দূর করে এবং মলাশয়ের সুস্থতা বজায় রাখে।
৯. পুষ্টিগুণ ছাড়াও পেঁপের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পেঁপের ভিটামিন ই ও সি আমাদের চুল ও ত্বকের পুষ্টি বৃদ্ধি করে। পেঁপের এনজাইম পেঁপেইন আমাদের মুখ ও স্ক্যাল্পের মৃত ত্বক সারাতে সাহায্য করে। তাই ব্রন সারাতে পেঁপে উপকারী।
১০. এ ছাড়া ত্বকের যেকোনো র্যাশ ও ঘা এর প্রতিষেধক হিসেবে চটকানো পেঁপে অথবা পেঁপের বীজ খুব ভালো কাজ করে।
সৈয়দা তাবাসসুম আজিজ : সহকারী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।