সহজে হজম হয় না ইন্সট্যান্ট নুডলস
আধুনিক জীবনে মানুষের সময় খুব কম। তাই আবিষ্কার হয়েছে ফাস্ট ফুড। আর এরই ধারাবাহিকতায় দুই মিনিটে রান্না করা যায় এমন খাবারও বাজারে ছাড়া হয়, খাবারের নাম নুডলস। এই খাবার ছেলেবুড়ো সবার কাছেই বেশ লোভনীয়। কিন্তু ইদানীং এই খাবারে ক্ষতিকর উপাদান মেলায় অনেক নুডলস প্রেমীই নড়েচড়ে বসেছেন।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, ইন্সট্যান্ট তৈরি করা যায় এমন নুডলস খাওয়ার যে চর্চা শুরু হয়েছে সেটা অনেকটা ফটকাবাজির মতো।এই ধরনের নুডলস তৈরি করা হয় সাধারণত ময়দা দিয়ে।যা হজমে অসুবিধা তৈরি করে। এ ছাড়া ইন্সট্যান্ট নুডলস নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা আছে, এটি পেটের সমস্যা তৈরি করে এবং ওজন বাড়িয়ে দেয়।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার প্যাকেট নুডলস খাওয়া হয়। তবে এখন সময় এসেছে এই প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর এত খরচ করা ঠিক হবে কি না সেটি ভাবার।
ইন্সট্যান্ট নুডলস যেসব ক্ষতি করে
নুডলস অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। ওয়ার্ল্ড ইন্সট্যান্ট নুডলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ইন্সট্যান্ট নুডলস গ্রহণের ক্ষেত্রে চতুর্থতম দেশ। চীন এই তালিকায় রয়েছে শীর্ষে।
ইন্সট্যান্ট নুডলস কম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রারর চর্বি, ক্যালোরি এবং সোডিয়াম। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম রং, প্রিজারভেটিভ, আনুষঙ্গিক আরো রাসায়নিক উপাদান এবং কৃত্রিম গন্ধ।
নয়াদিল্লির মদন মোহন মালভিয়া হাসপাতালের জেনারেল ফিজিশিয়ান অ্যান্ড হেড অব ইমার্জেন্সি ডাক্তার সুনিল শর্মা বলেন, ‘ইন্সট্যান্ট নুডলসে স্বাদ এবং প্রিজারভেটিভ উপাদান বাড়ানোর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর মধ্যে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG), টারসিয়ারি-বাটিল হাইড্রোকুইনান (TBHQ) (এক ধরনের ক্যামিকেল প্রিজারভেটিভ, যা পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রি থেকে উদ্ভূত) দেওয়া হয়। এই ধরনের জিনিস যদি মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া হয় এবং নিয়মত খাওয়া হয় তবে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।’
গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয় দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক এ বিষয়ে গবেষণা করেন। ওই গবেষণায় বলা হয়, যদিও ইন্সট্যান্ট নুডলস বেশ মজাদার। তবুও এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির। এগুলো পরিপাকে সমস্যা করে। এর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম,অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেট চর্বি এবং গ্লাইসেমিক পদার্থ।
ওয়াশিংসটন পোস্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব নারী ইন্সট্যান্ট নুডলস সপ্তাহে দুইবার খান তাঁরা পরিপাকের সমস্যা হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণার ফলাফলে আরো বলা হয়, ইন্সট্যান্ট নুডলস খেলে শুধু চর্বিই বাড়ে না, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও তৈরি হয়। যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, হৃদপিণ্ডে সমস্যা ইত্যাদি।
এ ছাড়া বেশিরভাগ ইন্সট্যান্ট নুডলস ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয়। ময়দা শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে যদি এটা উচ্চ মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। নয়াদিল্লির ফোরটিস হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডাক্তার সিমরান সাইনি জানান, ‘ময়দা দিয়ে তৈরি ইন্সট্যান্ট নুডলসের মধ্যে প্রিজারভেটিভ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি বেশি খাওয়া ওজনাধিক্যের বড় কারণ হতে পারে। ময়দা দিয়ে তৈরি ইন্সট্যান্ট নুডলস হজমের সমস্যা বাড়ায়; দেহের এপেনডিক্স অংশে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।’
দুর্ভাগ্যবশত বেশির ভাগ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ভালো কোনো চর্বি থাকে না; থাকে স্যাচুরেটেট ফ্যাটি এসিড এবং ট্রানস-ফ্যাটস যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য খারাপ নয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ইন্সট্যান্ট নুডলস রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাক্তার শর্মা বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত ইন্সট্যান্ট নুডলসে আছে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম, বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান, কিছু ক্ষেত্রে পেট্রলিয়াম, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, সহজ কার্বোহাইড্রেট; যেখানে কোনো পুষ্টি নেই এবং আঁশ নেই। তাহলে আপনি কীভাবে আশা করেন এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে?’
২০১৩ সাল যুক্তরাষ্ট্রের একদল চিকিৎসক একটি গবেষণা করেন, সেখানে দেখা যায় ইন্সট্যান্ট নুডলস খেলে আমাদের হজম কার্যক্রমে কী হয়। একটি মাইক্রোপিল মাপের ক্যামেরার মাধ্যমে চিকিৎসকরা কম্পিউটারে দেখতে সক্ষম হন কীভাবে ইন্সট্যান্ট নুডলস পেটের ভেতর হজম হয়।
মজার বিষয় হলো, নুডলস খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরও দেখা যায় এটি অনেকটা আগের মতোই রয়ে যায়, সহজে হজম হয় না। এটি কেবল নুডলসের বেলায় নয়, সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারের বেলায় এই সমস্যা হয়।
ডাক্তার শর্মা আরো বলেন, ‘এই সময়ের একটি বড় সমস্যা হলো মানুষ তাজা খাবারের থেকে ফাস্টফুডের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এমনকি আমিও কোনো ছুটির দিনের সকালে সহজে খাওয়ার জন্য বা কোনো মধ্যরাতে ক্ষুধার্ত হয়ে ইন্সট্যান্ট নুডলস খেতাম।’
তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাস্ট ফুড মাঝে সাঝে খাওয়া যেতে পারে। তবে এটা মূল খাবারের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা একেবারেই ঠিক নয়।