সর্দিতে কি মাথা পরিষ্কার হয়?
শুনতে অবাকই লাগবে, সর্দি হলে কেউ কেউ খুশি হয়। সর্দি হচ্ছে না বলে অনেকে অস্বস্তিতেও ভোগেন। তবে এটি একটি অস্বস্তিকর রোগ।
একবার আমার এক সুশিক্ষিত বন্ধুকে বারবার নাক টেনে ফচফচ শব্দ করে অফিসের কাজ করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, সর্দি হয়েছে? উত্তরে বলল, হ্যাঁ। তা অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় কোনো ওষুধ খেয়ে নিন। এবারে বন্ধুটির নির্বিকার জ্ঞানগর্ভ উত্তর, সর্দির সঙ্গে মাথার সব ময়লা বেরিয়ে যাচ্ছে, মস্তিষ্ক পরিষ্কার হচ্ছে, তাই ওষুধ খাচ্ছি না। ওষুধ খেলে তো সর্দি শুকিয়ে যাবে। কথাগুলো তো ফাজলামো করে বলেনি। তাই বন্ধুটির এই উত্তরে কিছুটা অবাকই হলাম। বললাম, তোমার কি ধারণা, সর্দির সঙ্গে নিঃসৃত ওই সব ময়লা তোমার মস্তিষ্কে ছিল? আর মস্তিষ্কে যদি এ রকম ময়লা সামান্য পরিমাণেও থাকত, তাহলে তোমার খবর হয়ে যেত।
এবার বন্ধুর বিস্ময় প্রকাশের পালা, ‘আমরা তো জানি, সর্দি হলে মাথা পরিষ্কার হয়।’ এই বন্ধুটির মতো এ রকম ভুল ধারণা অনেকেরই আছে। তাঁদের কথা হচ্ছে, সর্দি হলে ব্রেইন কিংবা মাথা পরিষ্কার হয়। তাই সর্দি ঝরতে দেওয়া উচিত। ওষুধ খেয়ে সর্দি শুকিয়ে ফেললে এসব ময়লা বেরিয়ে আসতে পারবে না এবং সেগুলো মস্তিষ্কে শুকিয়ে জমে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণার কোনোটিই সত্যি নয়।
সর্দি কখনোই পুষে রাখা উচিত নয়। এর চিকিৎসা করা উচিত। সর্দি হচ্ছে একটি উপসর্গ। বিভিন্ন রোগে এটি দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি ও ভাইরাসজনিত রোগে সর্দি হতে পারে। এ ছাড়া নাকের মধ্যবর্তী দেয়াল কোনো একদিকে বেঁকে থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে সর্দি থাকতে পারে।
ধারাবাহিকভাবে সর্দি লেগে থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে সর্দি থাকতে পারে। ধারাবাহিকভাবে সর্দি লেগে থাকলে সাইনোসাইটিস হতে পারে। নাকের ছিদ্রপথে ঘা হতে পারে। নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। আর সর্দির জন্য জ্বরজ্বর ভাব ও মাথাব্যথা তো আছেই। সর্দি হলে স্বস্তির কিছু নেই। সর্দি একটি বাজে ও অস্বস্তিকর ব্যাপার। আর এই সর্দি নিঃসরণের উৎস মস্তিষ্ক নয়। নাক থেকেই বিভিন্ন ঘনত্বের তরল পদার্থ বের হয়। সর্দির সময় নাকের মিউকাস মেমব্রেনের রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। লাল হয়ে ফুলে থাকে এবং নিঃসরণ হয়। এই নিঃসরণ ধুলোবালির সঙ্গে মিলে ময়লা তৈরি করে। এসব ময়লা কখনোই মস্তিষ্ক থেকে আসে না। মস্তিষ্কে এ রকম ময়লা পুঞ্জীভূত থাকলে কোনো লোকের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন দূরের কথা, বেঁচে থাকাই কষ্টের ব্যাপার হতো।
সর্দি পুষে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘদিন ধরে সর্দি থাকলে এটি ঘ্রানশক্তি বহনকারী স্নায়ু অলফ্যাক্টরি নার্ভকে নষ্ট করে দেয়। এতে একজন লোক স্থায়ীভাবে ঘ্রানশক্তি হারাতে পারে।
মনে রাখবেন, নাকের বিভিন্ন রোগের কারণ এই সর্দি কিংবা সর্দি অনেক রোগের উপসর্গ। কাজেই সর্দি হলে সেটি দূর করার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সর্দির ওষুধ খুবই সহজলভ্য। অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, যেমন—হিস্টাসিন, অ্যালাট্রল, অ্যালসেট, ভেসলর, মেবোলিন, ইনসিডাল ইত্যাদি প্রয়োজনমতো খেলেই তা সেরে যায়, যদি সেটি অ্যালার্জির কারণে হয়। নাকের অন্যান্য অসুবিধার কারণেও সর্দি হয়। সে ক্ষেত্রে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।