প্রিয় খাবারে যখন ক্যানসার ঝুঁকি
বেঁচে থাকার জন্য খাবার অতি প্রয়োজন। কখনো আবার এই খাবার বা খাদ্যাভ্যাসই মৃত্যুঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত খাওয়া হয় এমন কিছু খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ তথ্যটি আমরা অনেকে জানি না বলেই ততটা সচেতন নই এ ব্যাপারে। আমাদের অনেকেরই কিছু প্রিয় খাবার আছে যা দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে সেগুলো ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
এসব খাবারের মধ্যে আছে, আলুর চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি। এসব খাবারে রয়েছে এক্রিলেমাইড, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। মূলত স্টার্চ জাতীয় খাবারকে তাপ দেওয়া হয় তখন এক্রিলেমাইড গঠিত হয়।
আচার জাতীয় খাবার পরিপাকতন্ত্রের ক্যানসারের জন্য দায়ী। এ ছাড়া পোড়ানো বা স্মোকড খাবার ক্যানসারের কারণ হতে পারে। কেননা এই জাতীয় খাবার তৈরির সময় খাবারের উপরিতলে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচ) নামক ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান তৈরি হয়, যা পাকস্থলীতে বিভিন্নরকম টিউমার সৃষ্টি করে। গ্রিলড বা চারকোলড মাংসও হতে পারে ক্যানসারের কারণ। মাংসের প্রোটিন ও ফ্যাট উচ্চ তাপের সংস্পর্শে এলে হিটারোসাইক্লিক এমাইনেস উৎপন্ন করে, যা এ রোগের জন্য দায়ী। তাই দেখা যায় বারবিকিউ বা এ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে দীর্ঘদিন খেলে কোলন ক্যানসার হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, সাদা বা পলিস করা সব কিছুই অস্বাস্থ্যকর। যেমন- সাদা আটা, সাদা চাল, সাদা পাস্তা। এ ছাড়া বেকারি দ্রব্যও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এগুলো সাদা আটা বা ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। প্রক্রিয়াজাত এসব খাবার থেকে খুব বেশি মাত্রায় চিনি রক্তে তাড়াতাড়ি আসে। এ ছাড়া এ থেকে সম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাটুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। এগুলো ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ সৃষ্টিতে ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। স্যাটুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট স্তন ক্যানসারের জন্যও বিশেষভাবে দায়ী।
এ ছাড়া যেসব খাবার ও পানীয়তে কৃত্রিম স্বাদ যেমন এসপারটেম ব্যবহার করা হয়, যেমন- কোমল পানীয় বা সোডা, প্রক্রিয়াজাত মাংস, সসেজ ইত্যাদি বেশি খেলে ফুসফুস, মলাশয়, লিভার ও এসোফাগাস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
আবার যেসব খাবারে প্রিজারভেটিভ হিসেবে বিএইচটি, বিএইচএ ব্যবহার করা হয় তাও প্রাণিদেহে ক্যানসার তৈরি করতে পারে।
তাই এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হোন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।
লেখক : ডা. সুরজিৎ দত্ত, ক্লিনিক্যাল প্যাথোলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল