‘কারণ জেনে চিকিৎসা করুন রক্তস্বল্পতার’
হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকার একটি প্রোটিন। সাধারণত হিমোগ্লোবিন কমে গেলে একে রক্তস্বল্পতা হিসেবে ধরা হয়। হিমোগ্লোবিন কার্বন ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন ফুসফুস থেকে টিস্যুতে নিয়ে আসে, আর টিস্যু থেকে ফুসফুসে নিয়ে যায়।
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বা রক্তস্বল্পতা হলে কী ধরনের সমস্যা হয়? এই বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৭৩৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ। বর্তমানে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : হিমোগ্লোবিন কমলে ক্ষতি কী?
উত্তর : আমাদের মানব শরীরে ৭৫ ট্রিলিয়ন কোষ আছে। প্রতিটি কোষেরই অক্সিজেন দরকার হয়। এই অক্সিজেন সাপ্লাই দেয় হিমোগ্লোবিন। আমাদের শরীরে অ্যাকটিভিটি যখন হয়, তখন এই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে হিমোগ্লোবিনের চাহিদাও বেড়ে যায়। কারণ, তাদের অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা যখন হাঁটি বা সিঁড়ি দিয়ে যখন উঠি, তখন আমরা কাজ করি কেবল পায়ে। তবে বুক ধড়ফড় করে। এর কারণ, যখন আমরা কাজ করছি, তখন অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য হার্ট ও ফুসফুস বেশি কাজ করছে। যাদের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক আছে এবং হার্ট ও ফুসফুস ঠিক আছে, তারা এটা সমন্বয় করতে পারে। আর যারা এটি পারে না, তারা অল্প কাজেই হাঁপিয়ে যায়। তাদের চলাফেরা তো আরো কঠিন। দুর্বল লাগবে। মানসিক যে চিন্তাভাবনা এগুলো কমে যায়। তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সব কিছুর জন্য আমাদের রক্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : আমরা নিজেরা যেমন অক্সিজেন ছাড়া বা বাতাস ছাড়া বাঁচতে পারি না, আমাদের দেহের টিস্যু অক্সিজেন ছাড়া বাঁচবে না। কম পেলে দুর্বল হয়ে যাবে। সেটার জন্য পরিমাণমতো হিমোগ্লোবিন দরকার হবে। এটি ঠিক করার জন্য খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : আমি দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করেছি। আমি আগে দেশে কাজ করতাম। এর ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আমাদের দেশে একটি বিরাট গরমিল আছে। আমাদের দেশে রক্তস্বল্পতার যখন চিকিৎসায় যাই, বেশির ভাগই ম্যানেজ হয় নন হিউমেটোলজিস্ট দিয়ে। তাঁরা অনেকে এই কাজটি করেন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকমতো করেন না। যদিও আমাদের দেশে ও রকম এত হিমোটোলজিস্ট নেই। তবে আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত দিয়ে দিই। এটি খুব ক্ষতিকর। একজন বয়স্ক রোগীকে রক্ত দেওয়া খুব বিপজ্জনক। তরুণ লোককে রক্ত দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমি আমার প্র্যাকটিসে পেয়েছি হিমোগ্লোবিন পাঁচ। তবে আমি রক্ত দিইনি। প্রথম যখন একজন রোগীর রক্তশূন্যতা হয়, তার আসলে অভাবটা কোথায় দেখতে হবে। তিনটি মাত্রায় ঘাটতি হতে পারে। একটি হলো রক্তের প্রোডাকশন কমে যেতে পারে। কিসে ঘাটতি আছে, আমরা কী সাপ্লিমেন্ট দেব দেখতে হবে। রক্তস্বল্পতার অনেক জটিল সমস্যা আছে। এ জন্য অ্যানিমিয়া এমন একটি সমস্যা, যেটা খুব অল্প থেকে শুরু করে কঠিন রোগকে নির্দেশ করে। তাই প্রতিটি জিনিসের কারণ জেনে এরপর চিকিৎসা করা ভালো। বিশেষ করে রক্তস্বল্পতা।