লেজার চিকিৎসায় কি ক্যান্সার হয়?
ত্বকের যেকোনো রোগের চিকিৎসায় এখন লেজার ব্যবহার করা হয়। আজ ৬ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৮৮তম পর্বে ত্বকের চিকিৎসায় লেজারের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে কথা বলছেন বিশিষ্ট অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট লেজার ট্রিটের প্রধান পরামর্শক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম।
প্রশ্ন : বর্তমানে লেজারের বিষয়ে খুব শোনা যায়। বলা হয়, ত্বকের যেকোনো সমস্যায় লেজারের ব্যবহার হয়। আসলে বিষয়টি কী?
উত্তর : লেজার আসলে খুব বেশি প্রচলিত নয়। বাংলাদেশে এটা আমরা শুরু করেছি ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে। লেজার চিকিৎসার জন্য অন্যতম একটি অস্ত্র। শুধু ত্বকের জন্য নয়, লেজার অন্যান্য অনেক জায়গায় ব্যবহার করছি। চোখের জন্য, সার্জারির জন্য-সব কিছুতেই ব্যবহার করছি। তবে ত্বকে লেজারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে লেজার নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে।
প্রশ্ন : কী ধরনের কাজ হচ্ছে? ত্বকের কোন কোন রোগের জন্য এবং কখন লেজার ব্যবহার করে থাকেন?
উত্তর : প্রথম চিকিৎসা হলো লেজার হেয়ার রিডাকশন। লেজার দিয়ে স্থায়ীভাবে লোম তুলে ফেলা। অনেক ধরনের ত্বকের সমস্যায় আমরা লেজার দিয়ে কাজ করি। এরপর অনেক ধরনের পিগমনিটারি সমস্যা রয়েছে, এগুলোর ক্ষেত্রে লেজার দিয়ে কাজ করা হয়। ভাসকুলার লেজার, পিগমেনটারি লেজার করা হয়। ব্রণের ক্ষেত্রে গর্ত হয়ে গেলে লেজারের ব্যবহার করতে হয়। ত্বকটাকে নতুন করে তৈরি করতে লেজারের ব্যবহার করা হয়।urgentPhoto
এ ছাড়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও আজকাল লেজারের ব্যবহার করা হয়। চর্বি কোষগুলোকে সার্জারি না করে বের করার ক্ষেত্রে লেজারের অনেক ভূমিকা রয়েছে। অ্যান্টি এইজিংয়ের জন্য লেজারের ভূমিকা রয়েছে। একজন ডার্মাটোলজিস্ট লেজার ছাড়া কাজ করবেন এটা চিন্তাই করা যাচ্ছে না। কারণ সব কিছুর মধ্যে এখন লেজার যুক্ত রয়েছে। এমনকি শ্বেতী রোগ, সোরাইসিসের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে। আস্তে আস্তে নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে লেজারের।
প্রশ্ন : লেজার যখন সব কিছুতেই করা হয়, তাহলে একজন মানুষ কি চাইলেই লেজার নিতে পারবে?
উত্তর : কোনো ব্যক্তি লেজার করতে চাইলে চিকিৎসক এ বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দেবেন। তিনি বুঝবেন দিতে হবে কি না। লেজার বলতে কেবল একটা যন্ত্রকে বোঝায় না। লেজার হলো আলো নিয়ে খেলা। আলোটা একটা মেশিনে তৈরি হয়। যেকোনো স্পার্ক বা আলো থেকে আমরা এটাকে তৈরি করি। এক-একধরনের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নিয়ে খেলা করি। এক-একটা লেজার এক একটা কাজ করে। আমরা দুটো ক্লিনিকে আলাদা আলাদা করে অন্তত ২০ রকমের লেজার রয়েছে। তাই এক একটা কাজের জন্য এক একটা লেজার ব্যবহার হয়। সব লেজার একটাতে ব্যবহার করা যায় না।
প্রশ্ন : লেজার একটা অত্যন্ত আধুনিক যন্ত্র। আপনি বলছিলেন এটা আলো, তরঙ্গ নিয়ে খেলা। এই খেলার পেছনে একজন মানুষ দরকার হয়। সেই ক্ষেত্রে ত্বকের কোনো অবস্থা বা প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে কি?
উত্তর : খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। প্রথমে একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্ট হতে হবে। তার লেজারের ওপর সঠিক প্রশিক্ষণ লাগবে। লেজার সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান থাকা দরকার। লেজারের ব্যবহার জানতে হবে। তার আগে মানুষটিকে তৈরি করতে হবে। একজন রোগী এলো আর হঠাৎ করে লেজার করে দেওয়া হলো বিষয়টি তা নয়। তার আগে ত্বকটিকে লেজার করার জন্য তৈরি করে নিতে হবে। লেজারের পরে কী করতে হবে, এসব মিলিয়েই চিকিৎসা হবে।
প্রশ্ন : যদি সব কিছু যাচাই বাছাই না করে হয় তবে কী ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : সঠিক জ্ঞান ছাড়া লেজার দিয়ে কাজ করলে অনেক ধরনের অসুবিধা আছে।
প্রশ্ন : অনেকে বলে, লেজার দিলে ক্যানসার হতে পারে। অথবা লেজার দিলে এই আলোয় ত্বক পুড়ে যেতে পারে কি না, তার রঙের পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে কি না-এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তর : আমরা প্রতিনিয়ত একটা কথার মুখোমুখি হই যে লেজার দিলে ক্যানসার হয়ে যায়। এটা শতভাগ ভুল ধারণা। লেজারে কখনো ক্যানসার হয় না। লেজারে যেটা হতে পারে, অনেক সময় পুড়ে যেতে পারে। যে মাত্রায় ডোজ দেওয়া প্রয়োজন, সেই মাত্রায় যদি দেওয়া না হয় তখন ভালো ত্বকও নষ্ট হতে পারে। সুতরাং সঠিক হাতে করা দরকার।
মূলত লেজারের তিনটি লক্ষ্য রয়েছে। এক নম্বর হলো মেলানোসাইট, প্রতিটা কোষের মধ্যে ৯০ শতাংশ পানি থাকে, কিছু লেজার পানিকে লক্ষ্য করে। আর কিছু কিছু লেজার আছে যেগুলো হিমোগ্লোবিনকে লক্ষ্য করে। যেটা ভাসকুলার লেজার হয়। সুতরাং যদি লক্ষ্যে না পৌঁছাই তাহলে হবে না। যদি রক্তনালিতে লেজারটা যায়, ত্বককে ভেদ করে যেতে হবে তো। তাই ত্বকের গঠনকে তো নষ্ট করা যাবে না। সুতরাং সেই ক্ষেত্রে (কুলিং) ঠান্ডা করা খুব জরুরি। দুই ধরনের কুলিং করা হয়। কনটাক্ট কুলিং, অনেক সময় জায়গাটা বরফ দিয়ে ঠান্ডা করে দিই। ঠান্ডা অবস্থায় লেজারটাকে ঢোকানো হয়। আবার কিছু কিছু আছে বাতাসের মাধ্যমে ঠান্ডা করা।
আরেকটি আছে ডায়নামিক কুলিং ডিভাইস। যেটাতে এক ধরনের ক্রায়োজেন ব্যবহার করা হয়, ঠান্ডা। লেজার প্রবেশ করার আগেই ক্রায়োজেন চলে যাবে ত্বককে ঠান্ডা করার জন্য। তারপর লেজার যাবে। এরপর আরেকটা ক্রায়োজেন গিয়ে কাজটা করবে। এটা শতভাগ নিরাপদ।
প্রশ্ন : সুতরাং যেন পুড়ে না যায় সে ব্যবস্থার নেওয়ারও সুযোগ আছে...
উত্তর : অবশ্যই। যদি ভালো মানের লেজার ব্যবহার করেন এবং ভালো হাতে করেন, পুড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।
প্রশ্ন : লেজার চিকিৎসায় যেই অর্জন সেটা কতখানি স্থায়ী? এটা বারবার করার দরকার হয় কি না? আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনারা যারা লেজারের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রোগীদের অভিযোগ-এটা খুব ব্যয়বহুল। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : স্থায়িত্বের বেলায় কিছু বিষয় আছে, যা একেবারেই ভালো হয়ে যায়। আর কখনোই হবে না। আর কিছু কিছু আছে যেগুলো অনেকবার সেটিং দিতে হয়। একবারে হয় না। কয়েকবার করতে হয়। একমাত্র মেছতা ছাড়া লেজার দিয়ে যেকোনো কিছু অনেক ভালো করে চিকিৎসা করা যায়।
লেজারের যে সেট আপে রাখতে হবে, সেটা ব্যয়বহুল। লেজার মেশিন অনেক ব্যয়বহুল। লেজারের জন্য যেই চিকিৎসক, তার প্রশিক্ষণটাও অনেক ব্যয়বহুল। তাই সব কিছুতেই একটু বেশি টাকার প্রয়োজন হয়।