ওষুধ থেকে কিডনির সমস্যা, বোঝার উপায় কী?
অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধ থেকে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। তবে সেটি বোঝার উপায় কী এবং চিকিৎসকদের এসব ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কী? এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮০৭তম পর্বে কথা বলেছেন জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. শামীম আহম্মেদ।
প্রশ্ন : ওষুধ থেকে কিডনিতে সমস্যা হচ্ছে , বোঝার কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : বোঝার উপায় হলো, চিকিৎসক প্রথমত জানবেন রোগীর কিডনির রোগ আছে কি না। এটা কীভাবে বুঝতে পারবেন, ক্রিয়েটিনিন আছে কি না, ডায়াবেটিস বেশি আছে কি না, উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না, রোগীটা ফোলা কি না, লিভারের রোগ আছে কি না, তার আগের কোনো ইতিহাস ছিল কি না, দেখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ থেকে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলো খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। করার দুই বা চারদিন পরে কিডনি ফাংশন টেস্ট বা কিডনির কার্যক্ষমতা দেখার জন্য পরীক্ষা করতে হবে। এখন শুধু ক্রিয়েটিনিন করতে বলি না, এর সঙ্গে ইজিএফআর করতে বলি। এই দুটো পরীক্ষা করা উচিত। কেন কেবল ক্রিয়েটিনিন বলি না? ক্রিয়েটিনিন অনেক সময় স্বাভাবিক থাকে, তবে কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায়। সেরকম হতে পারে। কাজেই এই দুটো টেস্ট করে দেখতে হবে কিডনি ঠিক আছে কি না। এটা হলো ব্যথাজনিত কারণের ওষুধগুলোর ক্ষেত্রে। এই ওষুধগুলো আমরা যখন ব্যবহার করব সেটি করার আগে কিডনির কার্যক্রমটা পরীক্ষা করে নেব।
এরপর আসা যাক যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে। যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিকের স্বাভাবিক মাত্রা রেনাল ফেইলিউর থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। কমাটা দুইভাবে করতে পারি, ডোজ হয়তো ৫০০ মিলিগ্রাম তিনবার লাগে, সেটি আমি ২৫০ মিলিগ্রাম করে দুইবার দিলাম বা তিনবার দিলাম। অর্থাৎ আমরা চাচ্ছি ওই জিনিসটা এক্সপোজ কম হোক কিডনিতে এবং কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক হোক।
এরপর খুব প্রচলিত ওষুধ যেমন সিপ্রোমেক্সিন গ্রুপ। এই একটি দুটো ওষুধও কিন্তু রেনাল ফেইলিউর করে দিতে পারে। এগুলো খুবই ভালো ওষুধ। যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক খুব ভালো। তবে আপনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। দুটো ওষুধ খেলেও কিন্তু তার হঠাৎ কিডনি বিকল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ দায়িত্ব চিকিৎসকের ওপর পড়ে। আমরা যেহেতু কিডনি বিশেষজ্ঞ। এই সব রোগী আমাদের কাছে বেশি আসে বিধায়, আমরা এই বিষয়ে সচেতন। সেই ক্ষেত্রে আমরা যেটি বলব, যখন আপনি ওষুধটা ব্যবহার করেন, তখন একটু সতর্ক থাকতে বলেন। রোগীকে চেক করতে বলেন। রক্তের পরীক্ষা করান। প্রসাবটা কম হচ্ছে কি না একটু দেখতে বলেন। পাঁচদিন পর আপনি একটু রক্ত পরীক্ষা করান অথবা প্রস্রাব যদি কমে যায়, তাহলে সতর্ক হোন।
হঠাৎ করে কিডনি অকেজোর প্রথম উপসর্গ হলো প্রস্রাব কমে যাবে এবং একটু খারাপ লাগবে। দুই তিনদিন পর বমি বমি লাগবে। সেই ক্ষেত্রে রোগী যেন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যায়।
চিকিৎসকদেরও বলে দেওয়া উচিত যে আপনাকে ওষুধ দিলাম, প্রস্রাব কমে কি না দেখবেন। যারা ভালো চিকিৎসক তাদের প্রত্যেক রোগীকে এই পরামর্শ দেওয়া উচিত। এটি বললে ঝুঁকিটা কমে যায়।