ঈদে খাওয়া-দাওয়া কি লাগামহীন?
ঈদ মানেই খুশি ও আনন্দ, ভালো খাওয়া দাওয়া, নতুন জামা-কাপড় আর ঘোরাঘুরি। এক মাস সিয়াম সাধনার পর একটি প্রত্যাশিত দিন ঈদ। এই দিনে তাই আনন্দ উপভোগ করার জন্য শারীরিক সুস্থতা অনেক জরুরি।
এক মাস রোজা রাখার পর শরীরে তিনবেলা খাবার খাওয়ার নতুন একটি অভ্যাস তৈরি হয়। তাই হঠাৎ করে ঈদের দিন অনেক খাওয়া-দাওয়ার পর অনেককেই নানা রকম অসুবিধা বা অসুস্থতায় পড়তে দেখা যায়। তাই পুষ্টিসম্পন্ন মুখোরোচক খাবার দিয়ে ঈদের দিন ম্যানু তৈরি করলে ঈদের দিন সুস্থভাবে কাটানো সম্ভব।
ঈদের সকাল
ঈদের সকালে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার ভেবেচিন্তে খেতে হবে। কেননা রোজায় একভাবে চলার পর ঈদের সকালের খাবার অনেকেই ঠিকমতো খেতে না পারলে এসডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, পাতলা পায়খানা বা বদহজম ইত্যাদি সমস্যা হয়।
সকালে হালকা নাস্তা যেমন তেল ছাড়া পরোটা, সবজির কোনো মজাদার রেসিপি ও সেই সাথে আম দুধের মিষ্টান্ন খাওয়া যেতে পারে। চা বা কফি না খেয়ে গ্রিন টি খেলে ভালো। তেলে ভাজা খাবার বা অতিরিক্ত তেলের খাবার সকালে না খাওয়াই ভালো।
ঈদের দুপুরে
ঈদের দিন দুপুরে বাড়ির সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়ার মজাই আলাদা। নানা রকম খাওয়া-দাওয়া হয় বলে দুপুরের ম্যানুতে স্বাস্থ্যকর ও ভিন্নধর্মী রেসিপি রাখা যেতে পারে। যেমন উদ্ভিজ তেলের পোলাও বা চিকেন বিরিয়ানি, মুরগির কোরমা বা রেজালা, মাছের যেকোনো রেসিপি (যেমন: ফিস চপ বা কাটলেট, স্মোক ফিশ, ফিশ স্টিও, গ্রিল ফিশ খাওয়া যেতে পারে।) খাওয়ার পর টক দই খাওয়ার যেতে পারে।
ঈদের রাতের খাবারের ম্যানু
ঈদের দিন ঘোরাঘুরিতে অনেক রকম খাওয়া-দাওয়া করা হয়। তাই রাতের খাবারের ক্ষেত্রে একটু বুঝে শুনে ম্যানু নির্ধারণ করতে হবে। সারাদিন পোলাও বা বিরিয়ানি খেলে রাতের ম্যানুতে ভাত ও রুটি ভালো। নয় তো বদহজম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর হালকা একটু হাঁটলে ভালো। খাওয়া শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর পানি খেয়ে নেবেন।
ঈদের ড্রিংক ও পানীয়
তরল মানে পানি হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম ড্রিংক। পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হজম ও শোষণে সাহায্য করে। এ ছাড়া টক দইয়ের লাচ্ছি, ফলের রস (চিনি ছাড়া), লেবু পানি, জিরা পানি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয় কোল্ড ড্রিংক এড়িয়ে চলা সবচেয়ে ভালো।
ঈদের মিষ্টান্ন তৈরিতে তেল ও ঘিয়ে ভাজা এবং সিরায় ভেজানো মিষ্টান্ন এড়িয়ে চলা ভালো। এই ধরনের মিষ্টান্নতে ক্যালোরি ও ফ্যাট বেশি থাকে। এগুলোর পরিবর্তে দুধ ও ফলের তৈরি মিষ্টান্ন তুলনামূলক ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত। যেমন ; ফিরনি, দুধ সেমাই, পুডিং , মিক্স ফ্রুটস চাট ইত্যাদি। তবে যেকোনো মিষ্টান্ন অবশ্যই পরিমাণে কম খেতে হবে।
টিপস
ঈদ ম্যানুতে বিভিন্ন রেসিপি তৈরিতে খাদ্য উপাদান ব্যবহারে একটু সতর্ক হলে অনেক স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করা যায়। যেমন : খাবার তৈরিতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করা। ঘি বা বাটারের পরিবতে সান ফ্লাওয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। কনডেন্সড মিল্কের পরিবর্তে লো ফ্যাট দুধ ব্যবহার করা।
একটু স্বাস্থ্য চিন্তা মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করে ভিন্নধর্মী রেসিপি আপনার আনন্দ আরো বাড়িয়ে দেবে।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ,অ্যাপোলো হাসপাতাল