সুস্থভাবে ঈদ পালনে চার পরামর্শ
ঈদ মানেই আনন্দ, প্রাণের টানে ঘরে ফেরা প্রিয়জনের সান্নিধ্যের আশায়। তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎসবের আগে চাই বাড়তি প্রস্তুতি। ঈদে সবাই যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন তাই রইল কিছু পরামর্শ।
১. ত্বকের প্রস্তুতি
এবারে ঈদুল আজহা শরৎ ঋতুতে; খুব গরম নেই, রয়েছে হালকা বৃষ্টি। এই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা একটু কম থাকে। সব মিলিয়ে এই আবহাওয়া, সাজসজ্জা ও পোশাক নির্বাচনের জন্য বেশ অনুকূলে থাকবে। ত্বক বিশেষজ্ঞ হিসেবে ত্বকের ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে তিনটি। প্রথমত পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা। দ্বিতীয়ত, আর্দ্রতা এবং তৃতীয়ত সুরক্ষা।
সাধারণত আমরা মুখের জন্য যে মাইল্ড ক্লিনজার বা সোপ ব্যবহার করি সেগুলো ব্যবহার করব। আর চুলের জন্য ভালো শ্যাম্পু বেছে নেব। শরতে হালকা গরম থাকলেও কিন্তু ত্বকের ওয়াটার বেজড সেরাম রেগুলোলেটর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
সারাদিন মেয়েদের অতিথি আপ্যায়ন আর কোরবানির মাংস নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই ইলুমিনেটর সানস্ক্রিন ইমালশন বেজ হিসেবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়বে। এর ওপর হালকা পাওডার বুলিয়ে নেওয়া যায়। তবে দিন শেষে ত্বক তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে। তাই একফোলিয়েশন ও ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে এই হারিয়ে যাওয়া দ্যুতি ফিরে আসবে।
ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতো, মেহেদি, অলঙ্কার এমনকি প্রসাধনী কেনার ধুম পড়ে। প্রসাধনী, সুগন্ধি, মেহদি যাই হোক না কেন ঈদের কয়েক দিন আগে প্যাঁচ টেস্টের মাধ্যমে দেখে নিতে হবে এটি আপনার ত্বকের উপযোগী কি না। নতুন কসমেটিকস বা প্রসাধনী ব্যবহারে র্যাশ, এক্সিমা ও অ্যালার্জি হতে পারে। এ জন্যই এই প্যাঁচ টেস্ট। যাদের নিকেল অ্যালার্জি রয়েছে অবশ্যই নিকেলের গহনা, বেল্ট এড়িয়ে চলতে হবে।
২. কোরবানির প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
হাটে গিয়ে গরু বা ছাগল নির্বাচনের সময় মোটা তাজা প্রাণীতে আকৃষ্ট না হয়ে সুস্থ সবল প্রাণীটি বেছে নিন। কারণ, হরমোন ও স্টেরয়েড দিয়ে গরু তাজা করা হয়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৩. খাদ্যতালিকায় রাখুন পুষ্টিগুণ ও বৈচিত্র্যময় খাবার
শুধু ঈদের দিন নয়, কয়েকদিনব্যাপী চলে রকমারি খাবারের আয়োজন। কোরবারিন মাংস প্রোটিন ও গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলের উৎস। তাই কীভাবে কাটছেন, রান্না করছেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা খাব অবশ্যই,তবে পরিমাণ মতো।
আমাদের রন্ধনশালায় যে মশলাগুলো রয়েছে সেগুলো কিন্তু নিজস্ব গুনাগুণে সমৃদ্ধ। যেমন : দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, কালোজিরা, সরিষা, হলুদ, আদা, রসুন, পেয়াঁজ, মরিচ ইত্যাদি। কোনোটি হজম শক্তি বাড়ায়, কোনোটি মেটাবলজিম বুস্ট করে আবার কোনোটি ন্যাচারাল ফ্যাট বার্নার হিসেবে কাজ করে। তাই এসব মশলার সংযোজন আপনার খাবারকে করবে বৈচিত্র্যময়, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্য উপযোগী।
রঙিন পানীয়, চিনির শরবত, প্যাকেটজাত জুসের পরিবর্তে মৌসুমি ফল দিয়ে বানাতে পারেন ইনফিউশন ড্রিংক। এটি অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা ধরে তো রাখবেই আর অবসাদ ও ক্লান্তি কাটিয়ে আপনাকে প্রাণবন্তও করবে।
৪. যাত্রা হোক নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত
ঈদে যেহেতু একটি লম্বা ছুটি পাওয়া যায়, তাই আমরা ছুটে যাই পরিবারের কাছে। নিজ শহর কিংবা গ্রামে। অনেকে আবার দেশের পর্যটন এলাকা বা দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে যান। যাত্রার আগে নিজস্ব প্রসাধনী সামগ্রী, প্রসাধনী, রেগুলার ও ইমার্জেন্সি মেডিসিন গুছিয়ে নিন। এ সময় ঘরের খাবার দাবার ও পানীয় সঙ্গে নিয়ে নেওয়া ভালো। অবশ্যই অচেনা- অজেনা কারো কাছ থেকে কোনো খাবার খাবেন না। তাড়াহুড়া করে যানবাহনে না ওঠে সময় নিয়ে ওঠুন। শিশু ও প্রবীণদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
গত কয়েক মাসে চিকুনগুনিয়া বা নানা রকম জ্বরের ব্যাপক বিস্তার দেখা দিয়েছিল। যারা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, এখনো জটিলতা বা দুর্বলতায় ভুগছেন, তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পানিসমৃদ্ধ ফলমূল গ্রহণ করুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত প্রোটিন, মিনালের ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার।
আপনার ঈদ কাটুক সুস্থতায় ও নিরাপদে। ঈদের আনন্দ বয়ে যাক ঘরে ঘরে।
লেখক : পরামর্শক, শিওর সেল মেডিকেল বিডি, ডারমাটোলজি বিভাগ