চোখের যত্নে ব্যায়াম
এই আধুনিক জীবনযাত্রার ভিড়ে কখনো কি খেয়াল করেছেন যে চোখটাকে আদৌ বিশ্রাম দেওয়া হলো কি না? কিংবা আমরা চোখের কোনো যত্ন নিচ্ছি কি না? বিষয়টা কিন্তু ভাবার মতো।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের চোখগুলো ক্রমাগত স্থির হয়ে থাকে কম্পিউটারের মনিটরে অথবা টেলিভিশনে, আর নয়তো স্মার্টফোনে। এভাবে চলমান জীবনযাত্রার কারণে আপনার চোখে চাপ পড়ছে আর তার ফলে দেখা দিচ্ছে চোখের নানাবিধ সমস্যা। সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস তো আছেই। এখন অধিকাংশ মানুষের চোখেই উঠেছে চশমা। আর তাই আমাদের উচিত একটু নজর দেওয়া আমাদের চোখের প্রতি। যদি আপনি সুস্থ চোখ চান তবে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম আর সঙ্গে করতে হবে চোখের যত্নে কিছু ব্যায়াম।
এই ব্যায়ামগুলো দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি ও চোখের যত্নে সহায়ক হবে। প্রতিদিন সময় করে কিছুটা সময় যদি এই ব্যায়ামগুলো করা যায়, তাহলে অনেক উপকার পাবেন। নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করলে দৃষ্টি উন্নত হয়, চোখের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, চোখের শুষ্কতা কমায়, চোখের জ্বালাপোড়া কমায়।
ব্যায়ামগুলো হলো
১. একটি চেয়ারে আরাম করে বসুন। আপনার দুই হাত নমস্কার ভঙ্গিতে এনে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না হাত গরম হয়। এবার চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার হাতের তালু চোখের উপরে আলতো করে রাখুন। জোরে চাপ দেবেন না, নাক ঢেকে রাখবেন না। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার হাতের ফাঁক দিয়ে কোনো আলো চোখে প্রবেশ না করে। আপনি এখন কল্পনা করুন কোনো বস্তু বা কোনো রং আপনি দেখতে পাচ্ছেন। ওই বস্তু বা রঙের ওপর ফোকাস করুন, কোনো শুভ ঘটনা চিন্তা করুন এবং কল্পনা করুন। সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে, সমানভাবে গভীর নিশ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। এবার টের পাবেন, সবকিছু অন্ধকার লাগছে। হাত দুটো ধীরে ধীরে নামিয়ে চোখ আস্তে আস্তে খুলে ফেলুন। একই উপায়ে এটা তিনবার রিপিট করুন। তিন মিনিট বা তার একটু বেশি সময় ধরে করতে পারেন।
২. চোখ শক্ত করে বন্ধ করুন তিন-পাঁচ সেকেন্ডের জন্য। আবার খুলে ফেলুন তিনি-পাঁচ সেকেন্ড। এভাবে সাত-আটবার করুন। এতে আপনার চোখের আশপাশের মাংসপেশির ব্যায়াম হয় এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
৩. গরম পানিতে একটি তোয়ালে বা রুমাল ভিজিয়ে নিন এবং আরেকটি তোয়ালে ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিন। এবার গরম তোয়ালে আলতোভাবে সম্পূর্ণ মুখের ওপর চেপে চেপে লাগান। আপনি মনোযোগ দেবেন আপনার চোখের পাতা, ভ্রু এবং থুতনির ওপর। এবার আপনার ঠান্ডা তোয়ালে দিয়ে একইভাবে করবেন। এভাবে একবার গরম একবার ঠান্ডা দিয়ে চার থেকে ছয়বার করতে পারেন। তবে শেষবারেরটা অবশ্যই যেন ঠান্ডা তোয়ালের চাপ হয়, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন অর্থাৎ ঠান্ডা দিয়েই শেষ করতে হবে।
৪. শিথিল হয়ে বসুন। এবার আপনার চোখ দুটিকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাতে থাকুন, আবার ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরাতে থাকুন। মধ্যবর্তী সময়ে চোখের পলক ফেলবেন কিছুক্ষণ। আবার একই নিয়মে শুরু করুন। এভাবে পাঁচবার করবেন।
৫. দুই হাত সোজা করে একটি পেনসিল ধরুন, পেনসিলের দিকে তাকান। এবার পেনসিলটি আপনার নাকের সামনে ধীরে ধীরে নিয়ে আসুন। আপনি পেনসিলের দিকে তাকিয়ে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ফোকাস করতে পারছেন। আবার সরিয়ে আবার করুন। এভাবে ১২ বার করতে পারেন। এবার চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন।
৬. চোখ বন্ধ করুন। চোখের পাতার খুব কাছাকাছি হাতের তালু রাখুন। কিন্তু হাতের তালু কোনোভাবেই চোখ স্পর্শ করবে না। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং শিথিল হোন। আপনার চোখকে অন্ধকারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিন। তারপর চোখে দুই মিনিটের জন্য হাত লাগিয়ে হালকা করে রাখুন। এবার ছেড়ে দিন। ধীরে ধীরে চোখ খুলুন।
চোখ আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চোখের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করার যত্ন নিতে হবে, আর নিয়মিত এই ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করতে হবে। প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ব্যায়ামে আপনার চোখের পেশি মজবুত হবে। দৃষ্টিশক্তি উন্নত হবে এবং পরবর্তী জীবনে অনেক চোখের রোগের ঝুঁকি কমে যাবে। চোখের ক্লান্তিভাব ও মানসিক চাপ কমে যাবে।
এ ছাড়া কম্পিউটারের মনিটর থেকে মাঝে মাঝে চোখকে বিরতি দিতে পারেন। এতে চোখ ভালো থাকবে এবং সহজে আপনার চোখ ক্লান্ত হবে না। চোখের অবহেলা আর অযত্নের কারণে চোখ সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাথাব্যথা হয়। ঝাঁপসা দৃষ্টি, রং বুঝতে অসুবিধা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। অথচ একটু ব্যায়ামের মাধ্যমেই আমরা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি। তাই চোখের যত্নে আর দেরি না করে উপরে উল্লেখিত ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করুন।
লেখক : প্রধান প্রশিক্ষক অ্যান্ড ইনচার্জ, পারসোনা হেলথ।