কাঁচা ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত?
কাঁচা ডিম খেলে শক্তি বেশি হয়। এমন ধারণা, অনেকের ভেতরই প্রচলিত রয়েছে। সিদ্ধ ও ভাজা ডিমের চেয়ে কাঁচা ডিম বেশি পুষ্টিকর- এটি একটি প্রচলিত ভ্রান্ত বিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে এর উল্টোটাই সত্যি। কাঁচা ডিম সম্পর্কে এতটা উচ্চমত পোষণ মোটেই ভালো ব্যাপার নয়। ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কাঁচা ডিম খেলে তা উল্টো স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে।
প্রথমত, কাঁচা ডিম, রান্না করা ডিমের মতো সহজে হজম হয় না। ডিমের সাদা অংশটিতে থাকে প্রোটিন (অ্যালবুমিন)। কাঁচা অবস্থায় সাদা অংশের ভেতর পরিপাকবিরোধী গুণাগুণ থাকে। এটি উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। এতে সিদ্ধ বা ভাজা ডিম সহজপাচ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, কাঁচা ডিম খেলে শরীর বায়োটিন নামক ডিমের সাদা অংশে উপস্থিত প্রোটিন এভিডিনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। এভিডিন বায়োটিনের যুক্ত মিশ্রণ পরিপাকতন্ত্রে শোষণ হয় না। কিন্তু উত্তাপে এই যুক্ত মিশ্রণকে ভেঙ্গে এভিডিন ও বায়োটিন পৃথক হয়ে যায়। তখন বায়োটিক আলাদাভাবে পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে শোষিত হয়। গ্যাসট্রোঅ্যানটেরোলজিস্টরা বলেছেন, কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব থেকে যায়। বায়োটিনের অভাবজনিত এই অবস্থার নাম এগ হোয়াইট ইনজুরি। উদ্ভুত এ অবস্থার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ত্বকের প্রদাহ, ওজন কমা, জিহ্বার রক্ষতা, বিক্ষিপ্ত চলনভঙ্গি ইত্যাদি।
কাঁচা ডিম নিয়ে সমস্যা আরো রয়েছে। খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায়, এমন ব্যাকটেরিয়ার উপযু্ক্ত বাসস্থান হচ্ছে কাঁচা ডিম। এ রকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম সালমোনেলা। এটি ডিমের খোলসে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। প্রসবের পর কোনো ডিম নোংরা ময়লা মাটি কিংবা হাঁস মুরগির বিষ্ঠার মধ্যে পড়ে থাকলে সালমোনেলা নামক দুষ্ট ব্যাকটেরিয়া ডিমের মধ্যে ঢুকে পড়ার সুযোগটি পায়। আর এ অবস্থায় কাঁচা ডিম খেলে সালমোনেলা সংক্রমণে হঠাৎ বমি, পেটের অসুখ থেকে শুরু করে টাইফয়েড পর্যন্ত হয়ে থাকে। অথচ ডিম ভালোভাবে রান্না করলে (কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত মিনিট) সালমোনেলা ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কোমলভাবে অর্থাৎ মিনিট তিনেক সময়ের মধ্যে ওমলেট করলে ডিমের সালমোনেলা ধ্বংস নাও হতে পারে। সব ডিমের যে সালমোনেলা রয়েছে তা কিন্তু নয়। ডিম পাড়ার পর ডিমটি নোংরা স্থানে পড়ে থাকলে কিংবা ডিমের গায়ে বিষ্ঠা লেগে থাকলে ডিমটি ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন স্থান ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করলে এবং ডিম ধুয়ে রাখলে ডিমে সালমোনেলা ঢোকার আশঙ্কা থাকে না। আশা করি, এরপর কাঁচা ডিম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে। কাঁচা ডিম নয়, ভাজা এবং সিদ্ধ ডিমই স্বাস্থ্য সম্মত।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল