লো ব্যাক পেইন কেন হয়?
লো ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়।এটি বেশ প্রচলিত একটি সমস্যা।আজ ৪ আগষ্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১১০ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের এনেসথেসিয়া এন্ড আইসিও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো.ইউনুস আলী।
প্রশ্ন: লো ব্যাক পেইন কথাটা আমরা অনেকে শুনি। শরীরের কোন অংশের ব্যথাকে লো ব্যাক পেইন বলে। এবং এই ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ কী?
উত্তর: আমাদের মেরুদন্ডের হার মাথার নিচ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্মৃত। এখানে ৩৩ টা ভারটিব্রা আছে। এই ভারটিব্রার অনেকগুলো নাম আছে। থোরাসিক অংশের নিচে থাকে লাম্বার ভারটিব্রা। লাম্বার ভারটিব্রা থেকে পায়ুপথের কক্সিক ভারটিব্রা পর্যন্ত এই অংশকে আমরা লো ব্যাক বলি। সাধারণভাবে কোমর ব্যথাকে আমরা এই ব্যথা বুঝিয়ে থাকি।
প্রশ্ন: কেন হয় এই ব্যথা?
উত্তর: সাধারণত এই অংশের মধ্যে যে সমস্ত পেশি, লিগামেন্ট জড়িত এগুলোর মাসকুলো লিগামেন্টাল ডিজ অর্ডার বা সমস্যার জন্য এটা হতে পারে। সাধারণত এই ভারটিব্রারি ফাঁকে ফাঁকে যে নরম হাড় থাকে যাকে আমরা ডিস্ক বলি, সেটার ডিজঅর্ডারের জন্য হতে পারে। যেকোনো জয়েন্টের ডিজেনারেশনের জন্য হতে পারে। মেরুদন্ডের যে ক্যানাল থাকে সেটা যদি কোনোভাবে সংকুচিত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হতে পারে। স্নায়ুর উপর যদি কোনো চাপ পড়ে সেক্ষেত্রে হতে পারে। এছাড়া আরো অনেক ছোটো খাটো কারণ রয়েছে কোমর ব্যথার।
প্রশ্ন: একজন মানুষের যখন কোমর ব্যথা হয় তখন কী ধরনের ব্যথা হলে মানুষটির আর চেষ্টা না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর: ব্যথা আসলে নির্দিষ্ট কোনো রোগ নয়। এটা একটা রোগের উপসর্গ মাত্র। কোমর ব্যথা হোক বা যেকোনো ধরনের ব্যথা হোক আমার মনে হয় শুরুতেই তারা চিকিৎসকের কাছে যাবে। চিকিৎসকের কাছে গেলে আসলে এটা বোঝা যাবে কেন ব্যথা হলো। এবং ওই ব্যথার জন্য তাকে কী চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্ন: সাধারণত এই ব্যথা হলে রোগীদের মনে প্রশ্ন হয় কোন ব্যথা বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন।তিনি কী অর্থপেডিক বিবাগে যাবেন,তিনি কী ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যাবেন,তিনি কী ফিজিক্যাল মেডিসিনে যাবেন,না কি পেইন ম্যানেজম্যান্ট স্পেশালিস্টের কাছে যাবেন,কনজারভেটিভ মেনেজম্যান্টে যাবেন, না কি ইন্টার ভেশন পেইন ম্যানেজম্যান্ট স্পেশালিস্টের কাছে যাবেন। রোগীরা এটা বুঝবেন কীভাবে বা কার কাছে যাবেন?
উত্তর: ব্যথা নিয়ে যারা কাজ করছে এধরনের চিকিৎসকরাও কোমর ব্যথা সম্বন্ধে জানে। তাদের কাছে যেতে পারবে। ব্যথা আসলে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অরিজিন। অনেকে চিকিৎসা করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে অর্থোপেডিক বা অন্যান্যদের কাছে গেলে আমি ভুল বলব না। তবে ঘটনাটা হলো একজন ব্যথা বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে উনি চিকিৎসাটা নিতে পারবে। সাথে সাথে কখন উনি ইন্টার ভেনশনাল পেইন স্পেশালিস্টের কাছে যাবেন এই বিষয়ে আমরা কিছু কথা বলি। যেমন ব্যথা ব্যবস্থাপনার এক পর্যায়ে আমরা বলি করজারভেটিভ ব্যবস্থাপনা। অথার্ৎ ওষুধপত্র খেয়ে ব্যথা নিরাময় বা শুয়ে থেকে ব্যথা নিরাময় বা কিছু ব্যয়াম করে ব্যথা নিরাময়। অনেক সময় যখন, দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ধরনের চিকিৎসার পরও ব্যথা কমছে না তখন ইন্টারভেনশনাল ব্যথা বিশেষজ্ঞের বিশাল একটি ভূমিকা আছে। ইন্টার ভেনশনাল ব্যথা ব্যবস্থাপনার দুটো অংশ আছে। একটা মিনিমাল ইন্টার ভেনশন আছে। আরেকটি মেক্সিমাল ইন্টার ভেনশন আছে। যেটা মেজর ইন্টার ভেনশন অর্থাৎ সার্জারি।
প্রশ্ন: মিনিমাল ইন্টার ভেনশন এবং ম্যাক্সিমাল ইন্টার ভেনশন মানে কি? এখানে কী করেন রোগীকে?
উত্তর: মিনিমাল ইন্টার ভেনশন মানে হচ্ছে যে জায়গাটায় ব্যথা হচ্ছে সেখানে রোগীকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিই। অথবা যে নার্ভ দিয়ে ব্যথাটা বহন হচ্ছে সেই নার্ভটা যদি বন্ধ করে দিই। অথবা কোথাও ব্যথা তৈরি হয়ে যদি প্রদাহ জনিত পরিবর্তন হয় ওই জায়গাটায় যদি কোনো অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি ড্রাগ ইনজেকশন দিয়ে দিতে পারি সেটা হতে পারে। তাছাড়া আরো ছোটো ছোটো চিকিৎসা রয়েছে।
আর মেজর ইন্টারভেনশন বলতে সার্জারি বোঝাচ্ছি। এই সার্জারির ক্ষেত্রে দেখা যায় কোথাও একটা বড় ধরনের ডিস্কে সমস্যা হচ্ছে অথবা একটা হাড় আরেকটি হাড়ের থেকে সরে গেছে তখন সাধারণত সার্জারি করা হয়।
প্রশ্ন: এ ব্যথার ক্ষেত্রে অনেকেই এই ব্যথার চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত এবং এটা একটা দলভিত্তিক কাজ। একেক পর্যায়ে একেক জনের ভূমিকা রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে উন্নত দেশের মতো রেফারেল পদ্ধতি অতো ভালো ভাবে বৃদ্ধি পায়নি। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
উত্তর: আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। এবং এটা খুবই প্রয়োজন যার ডিসিপ্লিনের রোগী সেই দেখবে। প্রত্যেকটা রোগীকে যখন কোনো চিকিৎসক দেখবে, যখন তার ডিসিপ্লিনের হবে না তখন সাধারণত যে ডিসিপ্লিনের রোগী সেখানে সে রেফার করবে বা পাঠাবে। এটাই উচিত এটাই সঙ্গত।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় বলি, সরকার যদি একটা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি পেইন ক্লিনিক করে দেয় তাহলে রোগীদের ছোটা ছুটি, ঘোরা ঘুরি অনেক কমে যাবে।