হালকা ও কড়া সিগারেট কি সমান ক্ষতিকর?
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—এ সত্যটি আর নতুন করে প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। তবে তার পরও সিগারেট কোম্পানিগুলো বাজারে ছাড়ছে হালকা স্বাদের বিভিন্ন ব্র্যান্ড।
যদি কেউ এসব হালকা সিগারেটে কম টার, নিকোটিন এবং অল্প কার্বন রয়েছে বলে মনে করেন, তাহলে বড়ই ভুল করবেন। সিগারেট কোম্পানিগুলো সিগারেটের হালকা ধরন নির্ধারণ করে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে। এ ক্ষেত্রে ধূমপান যন্ত্র বা স্মোকিং মেশিনের সাহায্যে নির্ধারিত একটি কম ক্ষতিকর গ্রহণযোগ্য মাত্রার ধোঁয়াকে স্ট্যান্ডার্ড (আদর্শ) হিসেবে ধরা হয়।
প্রকৃতপক্ষে স্মোকিং মেশিন যে পরিমাণ ধোঁয়া টানে, মানুষ কিন্তু সেভাবে ধোঁয়া টানে না। সিগারেটটি যদি হালকা বলে পরিচিতি পায়, সে ক্ষেত্রে লোকজন সেই সিগারেটের ধোঁয়া আরো বেশি করে গ্রহণ করে, অত্যন্ত গভীরভাবে শ্বাসের সঙ্গে টানে এবং ফিল্টার পেরিয়েও টানতে থাকে। এমনকি হালকা সিগারেটও ঘন ঘন পান করতে শুরু করে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের রক্তের নিকোটিনের মাত্রা সিগারেটের ব্র্যান্ডের সঙ্গে খুব একটা হেরফের হয় না। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ধূমপায়ীদের রক্তে নিকোটিনের মাত্রা খুবই কাছাকাছি থাকে। এ ক্ষেত্রে কে কোন ব্র্যান্ড গ্রহণ করছে, সেটি কোনো ব্যাপার নয়।
হালকা সিগারেট কম ক্ষতিকর—এমন ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে অনেক গবেষণা। ১৯৮৯ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে একটি গবেষণায় হালকা ব্র্যান্ডের সিগারেট এবং কড়া ব্র্যান্ডের সিগারেটসেবী উভয়ের ক্ষেত্রেই ধূমপানজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি সমানভাবে দেখা দেয় বলে প্রমাণ রয়েছে। ধূমপানের ক্ষতি নির্ভর করে কে কতটা গভীরভাবে, কতটা জোরে সিগারেটের ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে টেনে নিল, দিনে কত বেশি ধূমপান করল এবং কতটা খাটো সিগারেট পান করল তার ওপর। সিগারেট যতই দামি কিংবা হালকা হোক না কেন, ক্ষতি করার বেলায় সব সিগারেটই সমান পারদর্শী। সিগারেটের নাম করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে মাত্র।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।