দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেলে কী করবেন?
দেশে নিয়মিত ঘটছে বিভিন্ন রকম সড়ক দুর্ঘটনা। যার ফলে কিছু মানুষ অকালে জীবন হারাচ্ছে এবং পাশাপাশি পঙ্গুত্ববরণ করছে।
ঈদের পরে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছেও শতাধিক। এর মধ্যে কেউ হাত, কেউ পা আবার কেউ বা মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে হারাচ্ছে হাঁটাচলার ক্ষমতা।
কেউ যদি মেরুদণ্ডে আঘাত পায় তাহলে তাকে সোজা করে শুইয়ে দিন এবং এ অবস্থায় দ্রুত রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি রোগীর আঘাতের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাধারণত যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে :
১. হাতের ও পায়ের অনুভূতি না থাকতে পারে।
২. যদি আঘাত মেরুদণ্ডের সারভাইক্যাল স্পাইনের ওপর দিকে সি২-৩ অথবা সি৩-৪ লেভেলে কম্প্রেশন ইনজুরি হয়, সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা লাগতে পারে। কারণ এই জায়গা থেকে আমাদের রেসপিরেটরি মাংসপেশিগুলোর নার্ভ সাপ্লাই হয়। সে জন্য রোগীকে খুবই সাবধানতার সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নিতে হবে।
৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারভাইক্যাল স্পাইনের বা ঘাড়ের জন্য চার হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে এবং লোম্বর স্পাইন বা কোমরের জন্য দুই পা অবশ হয়ে যেতে পারে।
৪.রোগী প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে রোগীর ক্ষতি বা আঘাত পরিমাণ নির্ণয় করে কখনো স্কেলিটাল বা টং ট্রাকশন, কখনো পেলভিক ট্রাকশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
পাশাপাশি রোগীর পুনর্বাসনের জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যা ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে আবার আগের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনার জন্য ওষুধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি। এই চিকিৎসার মাধ্যমে একজন মেরুদণ্ডে আঘাত-পরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে সম্পূর্ণ পুনর্বাসন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে তিন থেকে চারবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে, দুই থেকে ছয় মাস।
এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে পুনর্বাসনের জন্য একটি চিকিৎসা পদ্ধতি পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন। যার মধ্যে –
- ম্যানুয়াল থেরাপি
- স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ
- প্রগ্রেসিভ কন্ডিশনাল এক্সারসাইজ
- প্যারালালবার এক্সারসাইজ
- গেইট ট্র্রেনিং বা গেইট-রি এডুকেশন এক্সারসাইজ
- ইলেকট্রথেরাপি বা ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি
- অকুপেশনাল ট্রেনিং
- বাউয়েল – ব্লাডার ট্রেনিং ইত্যাদি করা হয়ে থাকে।
লেখক : বাত, ব্যথা, পারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল