ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার নিয়ে বিভ্রান্তি
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর অপসারণ অর্থাৎ পেট না কেটে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচারের বিষয়টি এখন প্রায় সবাই জানেন। সেই সঙ্গে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের সুবিধাগুলোও অনেকেরই জানা আছে। কিন্তু তারপরও এ নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে নানা রকম প্রশ্ন ও ভুল ধারণা। অনেকেই মনে করেন ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে পিত্তথলির পাথরের অস্ত্রোপচার করলে আবার পাথর হতে পারে কিংবা ভুলবশত পাথর রয়ে যেতে পারে।
সাধারণের এই ধারণা কিন্তু একেবারেই অমূলক। যেহেতু পাথরসহ পুরো পিত্তথলিটাই বের করে নিয়ে আসা হয়, সেহেতু পিত্তথলিতে আবার পাথর হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই কিংবা পাথর রয়ে যাবারও ঝুঁকি নেই। কেউ কেউ ভাবেন এই পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর ভেঙ্গে দেয়া হয় বা ক্রাশ করা হয়। আসলে ক্রাশ করা বা বাইরে থেকে ভেঙ্গে দেওয়ার পদ্ধতি কিডনির পাথরের বেলাতেই ব্যবহার করা হয়, পিত্তথলির পাথরের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য নয়।
আবার অনেকে জানতে চান,পাথর বেশি ও বড় হলে কি এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা যায়? এ সম্পর্কে ল্যাপারোস্কেপিক সার্জনদের উত্তর হচ্ছে, পাথরে সংখ্যা বা আকারের ওপর অস্ত্রোপচারের সাফল্য নির্ভর করে না। পাথর কম বেশি, বড় ছোট যেরকমই হোক না কেন, ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব। আগে পেটে কোনো অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে তারপরেও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি সম্ভব।
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচারের করার পর একথা প্রায় সব রোগীকে বলে দেয়া হয়, অস্ত্রোপচারের পর খাওয়া দাওয়া, চলাফেরায় কোনো বাধা নিষেধ নেই। অস্ত্রোপচারের পাঁচ/ সাত দিন পর থেকেই রোগী সাধারণ কাজকর্ম করতে পারেন। অস্ত্রোপচারের চার / পাঁচ ঘণ্টা পরই তরল খাদ্য খেতে দেয়া হয়। আর ১২ ঘণ্টা পর থেকে সব খাবারই খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ ব্যবহার করলে পরদিন থেকে গোসলও করা যেতে পারে।
ল্যাপারোস্কেপিক পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার নিয়ে অযথা বিভ্রান্তিতে ভোগা ঠিক নয়। যখন ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার করা যাবে না তখন চিকিৎসকই বিষয়টি রোগীকে যৌক্তিকভাবে অবহিত করবেন। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে পেট না কেটে ছোট্ট ছিদ্র করে তার মধ্য দিয়ে ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে যন্ত্রের সাহায্যে এটি করা হয়। সনাতন পদ্ধতিতে একই অস্ত্রোপচার করা হয় পেট কেটে। এক্ষেত্রে মূল অস্ত্রোপচারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ