নতুন বছরে সুস্বাস্থ্যে ১১ পরামর্শ
নতুন বছর সন্নিকটে। আরো একটি বছর চলে যাচ্ছে। সামনের বছর বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। নতুন বছরকে সাজাতে সবখানে চলছে কর্মপরিকল্পনা। দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নতির জন্যই সবকিছু। তাহলে স্বাস্থ্য নিয়েও নতুন বছরে কিছু পরিকল্পনা থাকুক। কিছু অভ্যাস বদলে ফেলুন। নতুন কিছু অভ্যাস গড়ুন। শরীর ও মন ভালো থাকুক নতুন বছরে।
১. বিশুদ্ধ পানি পান করুন
বিশুদ্ধ পানি মানেই বোতলে ভরা মিনারেল ওয়াটার নয়। কে জানে বাজার জয় করা সেই মিনারেল ওয়াটার আসলেই বিশুদ্ধ কি না? ঘর থেকে বেরোনোর সময় ব্যাগে ভরে নিন ফুটানো পানির বোতল। অফিসেও চল রাখুন পানি ফুটিয়ে খাওয়ার। বাইরের পানি পান করবেন না। পানিবাহিত অসুখ, যেমন—ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ ইত্যাদি কিন্তু পানি দিয়েই ছড়ায়। নতুন বছরে এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকুন।
২. ঝরিয়ে ফেলুন বাড়তি ওজন
বাড়তি ওজন বা ওবেসিটি কেবল বড়লোক দেশগুলোর সমস্যা নয়, উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতেও ওবেসিটি এক বিরাট মহামারী। উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে এই বাড়তি ওজনের কারণে। নতুন বছরে পণ করুন, বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলবেন। খাবার থেকে বাড়তি ক্যালরি বাদ দিয়ে দিন। মিষ্টি খাবার একেবারে ছাড়তে না পারলে অন্তত অর্ধেক কমিয়ে ফেলুন। শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিন। জিম করুন। জোরে হাঁটুন, দৌড়ান।
৩. ফাস্টফুড বাদ দিন
যদি এই শপথ করতে পারেন তো সেটা আশীর্বাদ আপনারই জন্য। নতুন বছরে পণ করুন, ফাস্টফুড খাবেন না। ট্রান্সফ্যাট আর কোলেস্টেরলের অভিশাপ নেবেন না শরীরে।
৪. প্রতিদিন আঁশ
খাবারে প্রতিদিন ফাইবার বা আঁশ রাখবেন। খোসাসহ খাওয়া যায় এমন ফলে আঁশ থাকে বেশি। শাকসবজিতেও রয়েছে প্রচুর আঁশ। এর বাইরে ইসবগুলের ভূষি, তোকমা ইত্যাদি খেতে পারেন। আঁশ আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে। কোলেস্টেরল কমাবে। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে শতকরা ৩০ ভাগ। আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বয়স ধরে রাখবে।
৫. বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন
ধূমপান কোনো ভালো জিনিস নয়। উল্টো ক্ষতি হয় এতে। নিজের শরীর তো বটেই, এই পৃথিবীটাই বাসযোগ্যহীন করে তুলছেন ধূমপান দিয়ে। নতুন বছরের পণ হোক, ধূমপানমুক্ত জীবনের। বাড়তি যে অপচয় হতো, তা দিয়ে জনহিতকর খাতে কিছু করুন। দেখবেন জীবন সুন্দর মনে হবে।
৬. প্রতিদিন ব্যায়াম
আসুন প্রতিজ্ঞা করি, প্রতিদিন আধঘণ্টা হলেও ব্যায়াম করার। সাইকেল চালাই, সাঁতার কাটি, জোরে হাঁটি, দৌড়াই। নগরে দৌড়ানোর জায়গা কই? আর কিছু না পারলে ছাদে দড়ি নিয়ে দড়ি লাফ খেলি। এ ধরনের ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড সবল রাখে, শরীরকে সতেজ করে, কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
৭. শখের জন্য কিছু সময়
অনেকের অনেক রকম শখ থাকে—গিটার বাজানো, গান করা, ছবি আঁকা, বাগান করা, প্রাণী পোষা। ব্যস্ততার কারণে হয়তো নজর দেওয়া হয় না এসবের দিকে। নতুন বছরে শখের জন্য কিছু পরিকল্পনা থাকুক। কর্মব্যস্ত রুটিনের ভেতরও জিইয়ে রাখুন শখ। সকালে বেরোনোর আগে বারান্দার বাগানে কিছু সময় কাটালেন। খাঁচায় পোষা পাখিদের সঙ্গে কাটালেন কিছু সময়। অফিসেও থাকতে পারে ছোট ছোট ক্যাকটাস বা ইন্ডোর প্ল্যান্টের বাগান।
গান শোনার অভ্যাস থাকলে হালকা সাউন্ড সিস্টেম রাখতে পারেন ঘরে কিংবা অফিসে। কাজের ফাঁকে শুনে নিলেন একটু খানি গান। যাঁরা গান করেন বা যন্ত্র বাজাতে পারেন, সপ্তাহে ছুটির দিন বরাদ্দ রাখতে পারেন এই কাজে। আপনার সব কাজের ক্লান্তি দূর করে আপনাকে চনমনে করে দেবে সপ্তাহের এই কয়েক ঘণ্টার শখের চর্চা। ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
৮. নতুন কিছু শিখুন
নতুন কিছু শেখার মধ্যে এক ধরনের গতিশীলতা পায় জীবন। জীবনের এক ধরনের নবায়ন হয়। ভাষা শিখুন। কম্পিউটারে নতুন কোনো কাজ শিখুন। গাড়ি চালাতে না জানলে শিখুন। সাঁতার শিখুন। সেলাই ফোড়াই, রান্না, ইকেবানা, সংবাদ পাঠ, আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণ, উপস্থাপন, অভিনয়—যা ভালো লাগে শিখুন। একটা নতুন জগৎ তৈরি হবে। হয়তো জীবনের নতুন দিগন্তও তৈরি হতে পারে।
৯. অন্যের জন্য করুন
পরোপকার কিন্তু এক ধরনের মনের খোরাক। নিজের উপার্জনের একটা অংশ রাখুন বঞ্চিত মানুষের জন্য। মানুষের জন্য কাজ করুন। দেখবেন, খুব ভালো লাগছে আপনার।
১০ . ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকুক
ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকুক এ বছরে। বাইরে ঘুরতে যান পরিবার-পরিজন নিয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে গেট টুগেদারের পরিকল্পনা করুন। আন্তঃসম্পর্কের উন্নয়ন হবে। জীবন আনন্দময় হবে।
১১ . বৈষয়িক চাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত সঞ্চয়ের নেশা জীবনকে জটিল করে। ঠিক কতটুকু লাগবে আপনার, ঠিক করে নিন। অতিরিক্ত ঋণের বোঝা চাপাবেন না নিজের ওপর। চাপমুক্ত থাকুন। যাঁরা ব্যবসা করেন, ঠিক করে নিন ব্যবসা সম্প্রসারণের মাত্রা। কতটুকু চান এই বছরে। অনিয়ন্ত্রিত দৌড় আপনাকে ক্লান্ত করে দেবে। দিন শেষে তো আমরা সবাই সুখী হতে চাই, তাই না? মনে রাখবেন, অসুখী ও হতাশ মানুষ সমাজের জন্য বোঝা।