ত্বকের যত্নে কী করবেন?
ত্বক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ত্বকের সৌন্দর্য তাই একটি বড় বিষয়। তবে নিয়মিত যত্নের অভাবে ত্বক হারাতে পারে তার লাবণ্য এবং ঔজ্জ্বল্য। আজ ১২ আগস্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১১৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ স্কিন সেন্টারের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তাওহিদা রহমান।
urgentPhoto
প্রশ্ন : ত্বকের প্রধান কার্যক্রম আসলে কী?
উত্তর : ত্বক হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অংশ। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পানির ভারসাম্য রক্ষা- সব কিছুই ত্বক করে। এবং এটা একটি বাধা হিসেবেও কাজ করে। আমাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কাভার হলো ত্বক। আমাদের সবকিছুকে রক্ষা করছে ত্বক।
প্রশ্ন : ত্বকের যত্নের গুরুত্ব আসলে কতখানি?
উত্তর : আমাদের বাঙালিদের ত্বকটা একটা আশীর্বাদ এবং এটা সারা বিশ্বেই গ্রহণযোগ্য। যদিও আমরা অতটা ফর্সা নই। তবে আমাদের গায়ের রঙের কদর অনেক বেশি। কারণ এর উজ্জ্বলতা এবং লাবণ্যতা অনেক বেশি। তবে ইদানীং এটা কমে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : কী মনে হয়, কারণ কী?
উত্তর : যত্নের অভাব। একটু সচেতন হলেই আমরা ত্বকের তারুণ্যকে ধরে রাখতে পারি। এখানে কয়েকটা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করব। প্রথমে আমি আসি ত্বকের ময়েশ্চারাইজেশন নিয়ে। গাছে যেমন পানি দিতে হয়, ত্বকেও এ রকম একটা আর্দ্রতার বিষয় আছে। তাই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা খুব জরুরি। এটা ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে, বার্ধক্য থেকে রক্ষা করবে। তবে ময়েশ্চারাইজারের অনেক ধরন রয়েছে। সেটা ত্বকের ধরনের ওপর বেছে নিতে হবে। ঠোঁটের যত্নও ত্বকের মধ্যে পড়ে। ঠোঁট যদি শুষ্ক থাকে চেহারা ভালো লাগবে না। তাই ঠোঁটেও ভ্যাসলিন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি।
ঘুম আরেকটি বিষয়। যদি না ঘুমান তাহলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়বে। চেহারার সজীবতা থাকবে না। এ ছাড়া সানস্ক্রিন একটি বড় বিষয় ত্বকের যত্নে।
প্রশ্ন : আমরা কিন্তু দেখি কিছু কিছু স্পর্শকাতর ত্বক রয়েছে যাদের ফটোসেনসিভিটি হয়। সূর্যের কাছে গেল, হয়তো চেহারা লাল হয়ে গেল। এর কারণ কী? এটি থেকে কীভাবে নিজেদের এড়ানো যায়?
উত্তর : আমাদের ত্বকের তিনটা ধরন। তৈলাক্ত, শুষ্ক এবং স্বাভাবিক ত্বক। যেকোনো ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন খুব জরুরি। রোদে যাওয়ার আগে, রান্নার আগে, সাঁতার কাটার আগে আপনি যদি সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন তাহলে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।
তবে সানস্ক্রিন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। যেমন : সানস্ক্রিন ব্যবহার করছি, ত্বকটা কালো হয়ে যাচ্ছে, তেল তেলে দেখাচ্ছে ইত্যাদি। এর একটাই বিষয় ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নিচ্ছেন না।
প্রশ্ন : ধরন অনুযায়ী আমি পাচ্ছি কি না এটা বুঝব কীভাবে? বা সাধারণ দর্শক বা রোগী রয়েছে তারা কীভাবে বুঝবে? নাকি আপনাদের কাছে দেখিয়ে নেওয়া ভালো বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : দেখিয়ে নেওয়াটা ভালো বলে মনে করি। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি টিজোন তৈলাক্ত, বাকি অংশটুকু শুষ্ক-এদের আমরা স্বাভাবিক ত্বক বলি। আর যাদের পুরো মুখটাই তৈলাক্ত হয়ে থাকে, তাদের তৈলাক্ত ত্বক। আর যাদের ব্রণ রয়েছে, তারাও মোটামুটি তৈলাক্ত ত্বকের মধ্যে পড়ে। সানস্ক্রিন সব ত্বকের জন্যই আছে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটারবেইজ। ব্রণ আছে এ রকম ত্বকের জন্যও আলাদা সানস্ক্রিন আছে।
প্রশ্ন : ব্রণের কথা বলছিলেন। এটি আসলে কেন হয়। এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার কী উপায় রয়েছে?
উত্তর : ব্রণ আসলেই খুব বড় সমস্যা। এর কোনো বয়স নেই। দেখা যায় বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু করে চল্লিশের ওপরে যাদের বয়স, তাদেরও হচ্ছে। ছেলেমেয়ে সবাই এটার ভুক্তভোগী। এর জন্য দূষণ একটা বড় কারণ। আমরা ত্বককে ভালো করে পরিষ্কার করছি না। আবার হয়তো প্রসাধনীটা বেশি ব্যবহার করছি। সেগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করছি না।
খাদ্যাভ্যাস অনেক বড় আরেকটি কারণ। যাদের তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া খাবারের প্রবণতা অনেক বেশি, তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া কিছু হরমোনগত কারণ আছে।
প্রশ্ন : একটা বিষয় আছে, ব্রণটা যখন চলে যায় তখন এর দাগ বা ক্ষতচিহ্নটা রয়ে যায় এবং সেটি সবার জন্য খুব কষ্টদায়ক হয়। যেহেতু মানুষ মুখটাকে একটু সুন্দর রাখতে চায়। সেই ক্ষত দূর করার জন্য আসলে করণীয় কী?
উত্তর : একেকজনের ত্বকের ধরনটা একেক রকম। কারো কারো দেখা যায় ব্রণ চলে গেছে, দাগ নেই। কারো কারো ক্ষেত্রে দাগটা থেকে যায়। কারণ এদের ত্বক অনেক স্পর্শকাতর। আর আরেকটি আছে, অনেকে ব্রণটিকে আঙুল দিয়ে খোঁটায়। এ কারণে গর্তটা বেশি হয়।
আমার প্রথম পরামর্শ, ব্রণ হলে যতটা সম্ভব সেখানে হাত না দেওয়াই ভালো। ব্রণের সময় ময়েশ্চারাইজার, কিছু লোশন এবং কিছু ওষুধও আমরা দিই। সেগুলো মেনে চলতে হবে। তখন কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। আর দাগের জন্য কিছু লাইটেনিং ক্রিম দিই। আর কিছু লেজারও আছে দাগ দূর করার জন্য। এর জন্য কয়েকটি সেশন করতে হয়।
প্রশ্ন : সেই লেজারগুলো কতদিন ধরে দিলে পুরোপুরি ভালো হয়?
উত্তর : একটা বিষয় হচ্ছে লেজারের নির্ভর করে আপনার দাগটা কতখানি গভীর। কিছু আছে অগভীর ক্ষত সেটা আমরা মাইক্রোডার্মা এব্রেশনের মাধ্যমে দূর করতে পারি। আর গভীর ক্ষতের জন্য সিওটোফ্রাক্সা লেজারটা ভালো। এটা প্রতি মাসে নিতে হয়। পাঁচ-ছয়টা সেশন নেওয়া ভালো। তবে আমি বলব না শতভাগ ভালো হয়। তবে ৮০ ভাগ যায়। আবার কারো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভালো হয়।
প্রশ্ন : খাবার-দাবারের সঙ্গে ত্বকের বড় একটি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত কোন কোন খাবারগুলোতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখার জন্য এবং তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খাওয়া যায়?
উত্তর : প্রথমেই বলব ডিটক্স সমৃদ্ধ খাবারের কথা, যেগুলো শরীরের টক্সিন দূর করে সুস্থ রাখে। আর শরীর সুস্থ থাকলেই তো ত্বক সুস্থ থাকবে। কারণ ত্বক হলো একটা আয়না। ডিটক্স খাবারের মধ্যে আঁশযুক্ত যেসব খাবার আছে, যেমন- ওটস, বাদামি গমের রুটি। এগুলো খাবার তালিকায় রাখলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ত্বকও উজ্জ্বল থাকবে। রঙিন শাকসবজি খেতে হবে। যেমন : গাজর, টমেটো ইত্যাদি। এগুলোতে বিটা ক্যারোটিন আছে, লাইকোপেন আছে। এগুলো খেলে দিনে দিনে ত্বক আরো উজ্জ্বল হবে।
প্রশ্ন : প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। যাতে করে প্রসাধনীর কারণে ত্বক নষ্ট হয়ে না যায়?
উত্তর : প্রসাধনীর ক্ষেত্রে আমি বলব যত কম ব্যবহার করা যায়, তত ভালো। তবে আমাদের তো ব্যবহার করতেই হয়। স্কুল বা কলেজে যায় যারা, এদের জন্য সানস্ক্রিন বা একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেই ভালো, দিনে ব্যবহারের জন্য। আর এখন রং ফর্সাকারী প্রসাধনী অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তবে এগুলো ব্যবহারের আগে দেখতে হবে ত্বকের জন্য কতটা সংবেদনশীল, কতটুকু নিরাপদ। যেমন : প্রাকৃতিক কিছু জিনিস দিয়ে প্রসাধনী হয়। অ্যালোভেরা, দুগ্ধজাতীয় পণ্য-এগুলো নিরাপদ।
প্রশ্ন : যদি মেকআপের পর রাতের বেলা পরিষ্কার না করেই ঘুমানো হয় এটা কতটা ক্ষতি করে?
উত্তর : এতে ত্বকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। কারণ ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি বাইরে যতক্ষণই থাকেন, এসে আপনাকে ত্বক পরিষ্কার করতেই হবে। প্রথমে ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে ওটাকে পরিষ্কার করে, এরপর ভালো কোনো ফেসওয়াশ ব্যবহার করে ধুতে পারেন। এর পর কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্ন : চোখের নিচের কালো দাগ অনেক বড় একটি সমস্যা। একটা সময় মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য এটা বড় কষ্টের হয়ে যায়। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য আপনার কী পরামর্শ?
উত্তর : চোখের সৌন্দর্য মুখের অনেক বড় অংশ। চোখের নিচের কালো দাগ সৌন্দর্য অনেকখানি কমিয়ে দেয়। এর জন্য ঘুম সবচেয়ে বড় কারণ। আপনাকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ঘুমালে এটা কমানো যায়। আর কিছু কিছু কারণ আছে, যেমন অ্যালার্জি। এটোপিক ডার্মাটাইসে যারা ভোগে, তাদের চোখের নিচে এই কালো দাগ দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে রোগের কারণগুলো বের করে চিকিৎসা করতে হবে।
প্রশ্ন : চোখের নিচের কালো দাগ দূরে কোনো টপিক্যাল ক্রিম কি কোনো ভূমিকা পালন করবে?
উত্তর : দাগ দূর করার কিছু ক্রিম আছে, সেগুলো দিই এক মাসের জন্য। এ ছাড়া কিছু আই ব্রাইটেনিং ক্রিম আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে এ ক্ষেত্রে।