শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি নয়
শ্বাসকষ্ট মানে রোগ নয়, বরং বক্ষব্যাধি কিংবা হৃদরোগের লক্ষণ। অনেকে শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি মনে করেন।
এ ছাড়া হৃৎপিণ্ডের বাম দিকের অংশ অকেজো হয়ে পড়লেও (লেফট হার্ট ফেইলিওর) তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কিডনির বৈকল্য বা ফেইলিওর হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এ ছাড়া যেহেতু আমরা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস নিয়ে থাকি, তাই ফুসফুসের যে কোনো ধরনের সমস্যা বা রোগেই শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া নামটা বহুল পরিচিতি সবার কাছে। এই রোগের একটি উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। অবশ্য শ্বাসকষ্ট নির্ভর করে ফুসফুসের আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপকতার ওপর, অর্থাৎ ফুসফুস যত বেশি আক্রান্ত হয়, শ্বাসকষ্ট তত বেশি প্রকট হবে। ক্রনিক ব্রংকাইটিসের এবং এম্ফয়সেমার নাম তো অনেকেই জানেন। এই দুই রোগের বিভিন্ন কারণের মধ্যে অতিরিক্ত ধূমপান এবং ধোঁয়াময় পরিবেশ অর্থাৎ পরিবেশদূষণ তথা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এই ক্রনিক ব্রংকাইটিস হয়ে থাকে। বাহ্যিকভাবে ক্রনিক ব্রংকাইটিস রোগটির সঙ্গে ফুসফুসের হাঁপানির অনেক মিল রয়েছে। যদিও দুটি রোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের এবং ভিন্ন প্রকৃতির। এই রোগ হলে শ্বাসকষ্ট দিন দিন বাড়তেই থাকে এবং অনেক রোগী আছেন যাঁরা নিজেকে হাঁপানি রোগী মনে করে থাকেন। হঠাৎ শ্বাসনালিতে কোনো পদার্থ ঢুকে গেলেও প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেকে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে করতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। শিল্প-কারখানাজনিত বিশেষ বিশেষ রোগ হয়ে থাকে, যার প্রতিটি রোগেরই লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট।
বাংলাদেশে ফুসফুসের যক্ষ্মা একটি অন্যতম প্রধান বক্ষব্যাধি। যক্ষ্মা থেকে ফুসফুসের বৃহৎ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। যক্ষ্মার নিরাময় ওষুধ খাওয়ার পর যক্ষ্মা সেরে গেলেও শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। শ্বাসকষ্ট অব্যাহত থাকার ফলে রোগীকে বিশ্বাসই করানো যায় না যে, তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন।
ফুসফুসের ক্যান্সার বা যে কোনো ধরনের টিউমার হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক রোগীকে দেখেছি যে, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। পরে দেখা যায় যে, তিনি মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছেন। অর্থাৎ সেই বিশেষ ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই রোগীটি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। হিস্টিরিয়া আক্রান্ত রোগী তো অনেকেই দেখেছেন। হিস্টিরিয়া রোগীর শ্বাসকষ্ট কত ভয়ানক হতে পারে তা অকল্পনীয়। অনেক সময় দেখেছি কৃমিজনিত কারণেও শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। সেই শিশুকে মাসের পর মাস হাঁপানির ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু এক কোর্স কৃমির ওষুধ দিলেই দেখা যায়, শিশুটির শ্বাসকষ্ট সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। বাংলাদেশে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশদূষণের ফলেই তা হচ্ছে। শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি নয়। শ্বাসকষ্টের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং তা শনাক্ত করে তার প্রকৃত ও সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রয়োগ করলেই শ্বাসকষ্ট ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বক্ষব্যাধি, এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।