লেসিক কী, কখন করা হয়?
চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সমাধানে একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো লেসিক। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. জালাল আহমেদ।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আই হসপিটালস ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : লেসিক কী এবং কখন করা হয়?
উত্তর : চশমার পাওয়ারজনিত যে সমস্যা, একে আমরা সাধারণ ভাষায় রিফ্ল্যাকটিভ এরোর বলতে পারি। রিফ্ল্যাকটিভ এরোর বিভিন্ন ধরনের হয়। মায়োপিয়া থাকে, হাইপার মেট্রোপিয়া থাকে, এসটিগমাটিজম থাকে—তিন ধরনের থাকে।
মায়োপিয়াতে আমি বলব সাধারণত আমাদের দেখার পদ্ধতি সম্পর্কে। ধরুন, একটি কলম। চারদিকের যে আলো রয়েছে, সেটি এই কলমের ওপর পড়ল। রে গুলো রিফ্ল্যাকটেড (প্রতিফলিত) হবে। তার পেছনে রয়েছে লেন্স, তার পেছনে রয়েছে রেটিনা। এই আলোগুলো চোখের কর্নিয়া দিয়ে রিফ্ল্যাকটেড হয়। আরেকটি থাকে স্বচ্ছ একটা লেন্স। রেটিনাতে গিয়ে কলমটির ছবি তৈরি হয়। এখানে অপটিক নার্ভ থাকে, সেটি দিয়ে এটি মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কে গিয়ে মস্তিষ্ক আসলে দেখে।
চোখের কাজ হলো ছবি তৈরি করা এবং ছবিটাকে মস্তিষ্কে পাঠানো। আর মস্তিষ্ক কলমকে কলম হিসেবে দেখে। রেটিনার ওপর যদি ছবিটা পড়ে, তাহলে আমরা দেখতে পারি।
যদি সামনে পড়ে, তাহলেও আমরা দেখতে পারি। আমরা দেখতে পারি না, ঝাপসা দেখি। যদি রেটিনার পেছনে তৈরি হয়, তাহলেও আমরা দেখতে পারি না। যে অসুবিধার জন্য পড়ে না, একে একসঙ্গে বলে রিফ্ল্যাকটিভ এরোর। এগুলো ঠিক করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।
প্রশ্ন : এ ধরনের সমস্যা হলে আমরা কখনো ঝাপসা দেখি, কখনো কম দেখি। এ ধরনের সমস্যায় সাধারণত চশমা দিতে বলা হয়। অনেক চশমা ব্যবহার করতে চান না। তখন কি লেসিক করতে বলা হয়?
উত্তর : আপনি সঠিক বলেছেন। অনেকে চশমা পরতে পছন্দ করেন না। রিফ্ল্যাকটিভ এরোর ঠিক করার জন্য চশমা হলো একটি পদ্ধতি। আরেকটি কনট্রাক্ট লেন্স দেওয়া যায়। তবে অনেক দিন ধরে কনট্রাক্ট লেন্স পরলে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। অনেক পদ্ধতির মধ্যে একটি ভালো পদ্ধতি হলো লেসিক করা।
লেসিক সবাইকে করা যায় না। কাকে কাকে করতে হয়, সেটি জানতে হবে। লেসিক করার পর কতটুকু দৃষ্টি আসবে, সেই সম্পর্কেও একটি ধারণা থাকতে হবে। আর লেসিক আধুনিক পদ্ধতি। সারা দুনিয়ায় এটি রয়েছে। আমাদের দেশেও অনেকগুলো সেন্টারে এটি হয়।
প্রশ্ন : এই পদ্ধতিটা কী?
উত্তর : যাদের এরোর রয়েছে, রেটিনাতে ছবি তৈরি হয় না, মায়োপিয়া, এদের ছবিগুলো সামনে তৈরি হয়। যাদের হাইপার মেট্রোপিয়া, তাদের পেছনে তৈরি হয়। আমরা এমন একটি পাওয়ারের ছবি দিই, যাতে এই ছবিটা তৈরি হয়ে ঠিক রেটিনার ওপর পড়ে।
কর্নিয়ার কার্ভ রয়েছে। যাদের মায়োপিয়া, তাদের কর্নিয়াটা বেশি কার্ভ থাকে। আর যাদের হাইপার মেট্রোপিয়া, তাদের একটু সমান থাকে। যাদের সাধারণ মায়োপিয়া, যাদের বেশি জটিলতা নেই, তাদের সাধারণত লেসিক করে থাকি। কর্নিয়াটা বাঁকানো। সেটিকে আমরা একটু সমান করে দিই। কর্নিয়ার মধ্যে একটি লেয়ার রয়েছে। সামনের একটি লেয়ারকে সাধারণত তুলে ফেলি। তোলার পর মণির মধ্যখানে কিছু রে দিই। এটি মাইক্রোসার্জারি। রে দিলে কিছু কিছু টিস্যু সরিয়ে দেয়। সরিয়ে দেওয়ার পর কর্নিয়া সমতল হয়। আর এই যে পাওয়ারের অসুবিধা ছিল, রে ঠিকমতো পড়ত না, এরপর এটা সহজেই ঠিক হয়। খুব অল্প সময়ের কাজ। দুই মিনিটের মধ্যে সব কাজ হয়ে যায়। কম্পিউটারাইজড মেশিন। এটি দিয়ে কাকে কতটুকু দিতে হবে, এটা দেখা হয়।