সব জ্বরেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়
জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। জ্বর বিভিন্ন রকম হয়। অনেকে জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন। তবে এটি সঠিক নয়। কিছু জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া প্রয়োজন, আর কিছু জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে না।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৪২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. রফিক আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : জ্বর কী কী ধরনের হয় বা কী কারণে হয়?
উত্তর : আসলে এটি অজানা। কারণ তো কেউ জানে না। যত রকম পরীক্ষা করি রিপোর্ট স্বাভাবিক। তবে জ্বর। প্রধারণত যে জ্বরগুলো হচ্ছে, ভাইরাসজনিত জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর, চিকুনগুনিয়া, সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর- একে রাইনাইটিস বলা হয়- এগুলো আসলে জ্বর নয়। এ ছাড়া অ্যান্টেরিক ফিবার, মেলেরিয়া, কালাজ্বর, লিউকেমিয়া, জণ্ডিসের কারণে জ্বর হয়। জ্বর কোনো রোগ নয় যেকোনো রোগের লক্ষণ বা শরীরের ভেতরের সংক্রমণ। এখন হার্টের রোগীরও জ্বর আসতে পারে। যেমন ব্রঙ্কজনিক কারসিনোমায় জ্বর আসতে পারে। আবার নিউমোনিয়াতেও জ্বর হয়। জ্বরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, কন্টিনিউয়াস ফিবার। ২৪ ঘণ্টায় জ্বর থাকবে। জ্বরটি এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ওঠানামা করবে।
এই ধরনের জ্বরের উদাহরণ যদি আমরা দিতে চাই, তাহলে দেখব অ্যান্টিরিক ফিবার, লুগা নিউমোনিয়া, টিউবার কুলোসিস, আর ডেঙ্গু ফিবার। নিয়মিত জ্বর,তবে বেজ লাইনকে স্পর্শ করে না। সাধারণ অবস্থায় আসে না।
অনেকে বলে যে শুধু বিকেলে জ্বর আসে। ২৪ ঘণ্টা সে ভালো। শুধু বিকেল বেলা জ্বর আসে। এরপর আবার সুস্থ হয়ে যায়। যক্ষ্মার কারণে এমন হতে পারে।
প্রশ্ন : এই যে অনেক রকমের জ্বর বললেন, অনেক ধরন বললেন, এর মধ্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনোই ভূমিকা নেই, আর কোনগুলোর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : যেমন ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর। ইতিহাস নিয়ে যদি বুঝি তিন/ দুই/ পাঁচদিনের- সেখানে আমরা মনেই করি ভাইরাল। একিউট অ্যাটাক। হঠাৎ করে এটি হয়েছে। তবে যদি দেখি যে জ্বর সাতদিন পার হয়ে গেছে, জ্বর যাচ্ছে না, কাশি যাচ্ছে না, তখন পরীক্ষা নিরীক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রোগী এলো আমি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিলাম। রোগী দুদিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার পর বন্ধ করে দিল। এটি ব্যাক্টেরিয়াকে রেজিসটেন্স করছে। এটি খুবই বিপজ্জনক অবস্থা।
প্রশ্ন : কোন কোন জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন নেই? ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এগুলোতে কি অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : না। শূন্য।
প্রশ্ন : তাহলে কোনগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়?
উত্তর : যেমন টিউবার কুলোসিস যদি ধরা পড়ে, চার ধরনের ওষুধ দেই। সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। এখন ফুসফুসে ফোড়া হয়েছে, সেখানে চার সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক দেই। তাও এক নয়। দুই/ তিন প্রকারে অ্যান্টিবায়োটিক দেই। আবার অ্যান্টিরিক ফিবার। যদি আমি রোগ নির্ণয় করতে পারি। যাকে টাইফয়েড, পেরা টাইফয়েড – একে একসঙ্গে বলি অ্যান্টিরিক ফিবার। তখন আবার স্বাভাবিক যে ডোজ, যে ডোজে স্বাভাবিক জ্বরের চিকিৎসা করব, তার দ্বিগুণ চিকিৎসা করতে হবে। মেনিনজাইটিস, সেপ্রিসেমিয়া- এ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আমি যদি ১০ মিলিগ্রাম এজি ব্যবহার করি, তাহলে এখানে ২০ মিলিগ্রাম পার এজি ব্যবহার করব। এভাবে ব্যবহার করতে হবে।