৩০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ নয়
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমাদের অনেকেরই একটানা বসে কাজ করতে হয়। এতে অনেক সময় পিঠে ব্যথা তৈরি হয়। আজ ১০ সেপ্টেম্বর, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৪৭তম পর্বে পেশাগত পিঠে ব্যথা বা অকুপেশনাল ব্যাকপেইন নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলেশন বিভাগে কর্মরত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে আজাদ।
urgentPhoto
প্রশ্ন : অকুপেশনাল ব্যাকপেইন বলতে কী বুঝি?
উত্তর : ‘অকুপেশন’ শব্দটির সঙ্গে আমরা হয়তো কেউ কেউ পরিচিত। পেশাগত কাজকর্ম করতে গিয়ে যখন আমাদের পিঠে ব্যথা হয়, আসলে সেটাই অকুপেশনাল ব্যাকপেইন বা পেশাগত পিঠে ব্যথা। বিশেষ করে ডেস্কে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা যখন পিঠের ব্যথা নিয়ে আসেন সেটাকে অকুপেশনাল পেইন হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন : এ বিষয়টি আসলে মানুষের কেন জানা উচিত?
উত্তর : আমি মনে করি, এটা জানা খুবই জরুরি। এর কারণ হচ্ছে প্রযুক্তির এই যুগে, ঘরে বসেই মানুষ সারা পৃথিবীর খোঁজখবর রাখছেন, অর্থাৎ যাঁরা অফিসে বা বাসায় বসে কম্পিউটারে দিনের পর দিন কাজ করছেন, কেউ কেউ দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন, তাঁরা হয়তো জানেন না কোন উপায়ে বসে কাজ করলে পিঠের ব্যথাটা হতো না। এটি জানা না থাকার কারণে তাঁরা অনেকে পিঠে ব্যথার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ হয়তো দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁদের সময় নষ্ট হচ্ছে বা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের কাজের মানও খারাপ হচ্ছে। কেউ কেউ সঠিক চিকিৎসকের কাছে না যেতে পারার জন্য দীর্ঘদিন ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। আমি মনে করি, আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে যাঁরা এই কথাগুলো শুনবেন, তাঁরা উপকৃত হবেন।
প্রশ্ন : যাঁরা ডেস্কে কাজ করছেন, তাঁদের ব্যথার ধরনটা কী রকম হয়?
উত্তর : তাঁরা ঘাড়ে ব্যথা, কোমরের ব্যথা, কেউ কেউ মধ্য পিঠের ব্যথাও নিয়ে আসেন। প্রথমেই হয়তো তীব্র ব্যথা হয় না। কিছুক্ষণ বসে থাকলে ব্যথা অনুভব করে। শুরুটা এভাবে হয়।
অনেকে দেখা যায়, ঘাড় ব্যথা নিয়ে আসছেন। এই ব্যথা আবার হাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। একপর্যায়ে তীব্র ব্যথা নিয়ে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। তাঁদের বসার সঠিক পদ্ধতিটা জানা না থাকার কারণে দিনের পর দিন ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যথার ওষুধ খাচ্ছে, স্যাক দিচ্ছে, তবে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। সাময়িকভাবে ব্যথা কমলেও কাজ করতে বসলে আবার ব্যথা হচ্ছে।
প্রশ্ন : পদ্ধতিগুলো কখন রোগীদের বলেন?
উত্তর : আসলে রোগীর ইতিহাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝতে পারি, পেশাগত কারণে ব্যথাটা হচ্ছে। তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয়, কীভাবে ডেস্কে কাজ করা উচিত। কোন নিয়মগুলো মানা উচিত। বিশেষ করে কম্পিউটারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কম্পিউটার এবং কিবোর্ড কোথায় রেখে কাজ করা উচিত, চেয়ারটা কেমন হওয়া উচিত এই জিনিসগুলো তাঁদের বলে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : একই অঙ্গবিন্যাসে অনেকক্ষণ বসে থাকেন অনেকে। আপনারা কি বলে দেন অঙ্গবিন্যাস কী রকম হবে?
উত্তর : অবশ্যই আমরা বলে দিই। কারণ, এটি একটি বড় বিষয়। টেবিলে যখন কাজ করবে, সে ক্ষেত্রে চেয়ারটা খুব কাছে টেনে বসা উচিত। সে ক্ষেত্রে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কনুইের ওপর ভর দিয়ে বসা উচিত। এবং মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া উচিত। প্রতি ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর একটু বিরতি দেওয়া উচিত। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের বিরতি নেওয়া উচিত। সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের বেশি একটানা বসে কাজ করা ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে পেশিগুলো চর্বিযুক্ত হয়ে যায়। পেশি আর সংকুচিত প্রসারিত হয় না। যখন কাজ করতে যাবে, পেশি সংকোচন প্রসারণের সময় ব্যথা হবে।
প্রশ্ন : এই ব্যথার জটিলতা কতখানি?
উত্তর : প্রথমে হয়তো খুব অল্প ব্যথা দিয়ে শুরু হয়। একসময় ব্যথা না কমতে কমতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হয়ে দাঁড়ায়। এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীরাই আমাদের কাছে বেশি আসে। হয়তো সঠিক চিকিৎসক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তাঁদের কিছুটা সমস্যা হয়। যে কারণে ব্যথার ওষুধ খেয়ে রোগীকে ব্যথা কমিয়ে রাখতে হচ্ছে। আমি মনে করি, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং রিহ্যাবিলেশন বিশেষজ্ঞ যাঁরা, তাঁদের পরামর্শ নিলে খুব অল্পতে ভালো হয়ে যায়।
আপনি জানতে চাইছিলেন, কতটুকু জটিলতার দিকে যেতে পারে? আসলে একসময় খুব জটিলতার দিকেই যেতে পারে। কারণ, কাজ করতে গেলে পেশি যখন শিথিল হয় না, তখন ডিস্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তখন মেরুদণ্ডের ওপর প্রভাব পড়ে। এখানে ডিজেনারেটিভ পরিবর্তন হয়ে ডিস্ক প্রলেপসের মতো সমস্যা হতে পারে। এটা হলে তাঁর জীবনযাপন, কাজকর্মের খুবই ব্যাঘাত ঘটে। তখন দেখা যায়, চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হয়।
প্রশ্ন : আপনার পরামর্শ কী থাকবে এই জাতীয় রোগী কোথায় গেলে এই চিকিৎসা পেতে পারেন?
উত্তর : এটা আসলে একজনের কাছে নয়, এটি একটি সমন্নিত চিকিৎসা। রোগীর জীবনযাপনে পরিবর্তন লাগবে, ব্যথার ওষুধ লাগবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথার ওষুধ কাজ করে না। একটা সম্মিলিত চিকিৎসা লাগবে। যখন ওষুধ দিয়ে কাজ হয় না, ডিস্ক প্রলাপসের ক্ষেত্রে সার্জারি করতে হয়। আর মাঝখানে আমরা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা কিছু চিকিৎসা দিই।
তবে ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই যদি জীবনযাপনের পরিবর্তন করি, তাহলে ব্যথা থেকে অনেক মুক্ত থাকব। আসলে ব্যথায় ভোগার পর ভালো না হয়ে, যদি জানি যে কীভাবে কাজ করা উচিত, বসা উচিত—এগুলো জানলে সহজে ব্যথায় আক্রান্ত হবো না। আর যদি ব্যথা শুরু হয়ে যায়, তবে যেন প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের কাছে যায়।