বিষক্রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয়
কেউ বিষপান করলে কিংবা বিষক্রিয়া ঘটলে প্রথমেই উচিত তাকে ধারের কাছে হাসপাতালে পাঠানো। তবে তার আগে জানতে হবে, রোগী বিষ বলে যা খেয়েছে তা আসলে কী? সে বমি করেছে কি না? তার বমির সঙ্গে পাতলা পায়খানা হয়েছে কি না?
মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম কিংবা তন্দ্রাভাব রয়েছে কি না? শ্বাসকষ্ট বা খিঁচুনির লক্ষণ রয়েছে কি না? রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা বমিতে কোনো রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ রয়েছে কি না? তার জ্ঞান আছ রয়েছে কি না?
এসব দ্রুত পরীক্ষা করার পর যা করণীয়, সচেতন রোগীর ক্ষেত্রে :
- রোগীর যদি জ্ঞান থাকে এবং খিঁচুনি না থাকে, তাহলে তার বিষকে পাতলা করার জন্য তাকে এক গ্লাস পানি বা দুধ পান করাতে হবে। যদি এতে তার বমি বমি ভাব আসে, তাহলে পান করানো বন্ধ করে দিতে হবে।
- বিষ বলে সে যা খেয়েছে বা পান করেছে, তার মোড়ক বা পাত্রটি শনাক্তকরণের জন্য সংগ্রহ করতে হবে। যদি রোগী বমি করে থাকে, তাহলে তা পরীক্ষা করার জন্য সংগ্রহ করতে হবে।
- এরই মধ্যে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফোন করে জানতে হবে যে আপনি সেখানে একজন বিষাক্রান্ত রোগী নিয়ে যাচ্ছেন।
- রোগী যদি এরই মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তাহলে তার শ্বাসনালি খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ফোন করুন অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য কিংবা রোগীকেই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পাঠান।
বি. দ্র.—অনেকে বিষ খাওয়া রোগীকে বমি করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগী যদি পেট্রল, কেরোসিন, এসিড বা ক্ষারজাতীয় কিছু খেয়ে থাকে, তাহলে রোগীকে বমি করানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। ঘুমের বড়ি, এসপিরিন, কুইনাইন প্রভৃতি ওষুধ অতিরিক্ত খেলে তাকে গলায় আঙুল বা চামচের ভোঁতা প্রান্ত দিয়ে বমি করানো যেতে পারে। তবে বমি করানোর চেষ্টা রোগীর জন্য অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে। এতে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বমি করানোর ভালো পন্থা হলো এক গ্লাস পানি বা মিষ্টি তরলপদার্থ এক চা চামচ এপসম লবণ মিশিয়ে পান করানো। তবে রোগী অচেতন থাকলে কিছুতেই বমি করানো যাবে না। রোগীকে ভিনেগার কিংবা লেবুর রস পান করানো যাবে না।
অচেতন রোগীর ক্ষেত্রে :
- রোগীর শ্বাসনালি উন্মুক্ত রাখতে হবে।
- যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ফোন করে ইমার্জেন্সি স্কোয়াডে পাঠাতে বলতে হবে।
- প্রয়োজনে রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সন্দেহজনক বিষ হলে পাত্রটি সংগৃহীত করতে হবে।
- রোগী বমি করলে সেই বমি নমুনা সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
- রোগীকে পানি কিংবা তরল কিছুই খেতে দেওয়া যাবে না।
- রোগীকে বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না। যদি রোগী বমি করতে থাকে, তাহলে তার মাথাটা এক পাশে কাত করে দিতে হবে, যাতে বমির পদার্থগুলো মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পারে।
- ইমার্জেন্সি স্কোয়াডের ব্যবস্থা না থাকলে আপনি নিজেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।