কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় আমড়া
দেশি ফলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল হলো আমড়া। সহজলভ্য মজার এই ফল ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। আমড়া বছরজুড়েই বাজারে পাওয়া যায়, তবে বেশি পাওয়া যায় বর্ষা ঋতুতে। আমাদের দেশে আগস্ট মাসে এই ফল বাজারে আসে আর থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। পেরু, আফ্রিকার কিছু অংশ এবং ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া আমড়া চাষের জন্য বিখ্যাত। আমাদের দেশে পিরোজপুর জেলায় এর উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। অম্লস্বাদযুক্ত বরিশালের আমড়া বছরে একবার ফলন দিলেও থাইল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত আমড়ার গাছ বারো মাস ফল দেয়। কাঁচা আমড়া টক বা টকমিষ্টি হয়, তবে পাকলে টক ভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়।
আমড়াতে ৯০ শতাংশ পানি। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকাটনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়াতে শর্করা ৪ থেকে ৫ শতাংশ, আমিষ ১ দশমিক ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, লৌহ চার মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-বি ১০ দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন-সি ২০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।
ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
আমড়া প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তথা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। এই ভিটামিন-সি আমাদের বার্ধক্যকে প্রতিহত করে, ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, মাড়ি ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমড়ার গুণে ত্বক, নখ ও চুল সুন্দর থাকে। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে
আমাদের দেহের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহকারী হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিনের মূল উপাদান লৌহ। তাই দেহের সুস্থতা রক্ষায় লৌহ প্রয়োজন এবং দৈনিক একটি আমড়া গ্রহণে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ লৌহের দৈনিক চাহিদা পূরণ সম্ভব। লৌহ আমাদের রক্তস্বল্পতা দূর করতে বেশ কার্যকর।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়
আমড়া শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপকে নিষ্কাশনে সাহায্য করে আমড়া। আমড়া রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে
বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে আমড়ার আঁশ উপকারী।
খিঁচুনি রোধে
খিঁচুনি ও পিত্তনাশক হিসেবে আমড়ার ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
অরুচি ভাব দূর করে
আমড়া গ্রহণে মুখের অরুচি ভাব দূর হয়। এক কাপ পানিতে আমড়ার শাঁস ভিজিয়ে রেখে পরদিন তাতে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে খাওয়ার অরুচি কমে যায়।
প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে
আমড়াগাছের বাকল, পাতা, ফল, ফুল ও শেকড় ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন—দক্ষিণ আমেরিকায় ধাত্রী রোগের চিকিৎসায় আমড়াগাছের পাতা ও বাকল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সন্তান প্রসবের ব্যথা দূর করতে, প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে, মায়ের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ও জরায়ুমুখের যেকোনো সংক্রমণ দূর করতে এগুলো ব্যবহৃত হয়।
পাতাও উপকারী
আমড়াগাছের পাতা ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, পেটব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অণুজীবঘটিত সর্দি-জ্বর, গলাব্যথায় এটি উপকারী। যেকোনো ধরনের পোড়া, ক্ষত, আঘাতে পাতার প্রলেপ দেওয়া যায়। আমড়াগাছের পাতার মতো এর বাকলও যেকোনো বাহ্যিক ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।