আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা কী
বিভিন্ন কারণে একজন মানুষের দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে উঠে। এর সমস্যা কী এবং প্রতিকারে কী করা হয়- এ বিষয়ে আজ ২০ সেপ্টেম্বর এনটিভির ২১৫৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থডনটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গাজী শামিম হাসান।
প্রশ্ন : দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়ার পেছনের কারণ কী?
উত্তর : আপনি জানেন, বাচ্চাদের মুখে ২০টি দুধের দাঁত আসে। এই দুধদাঁতগুলো পড়ে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী দাঁতগুলো মুখের ভেতর আসে। কোনো কারণে যদি এই দুধের দাঁত সময় মতো না পড়ে আগেই পড়ে যায় তাহলে নিচে যে দাঁতটা থাকে সে শেকড় হারিয়ে ফেলে। আর ঠিকমতো উঠতে পারে না। মাঝামাঝি উঠে, কখনো বাইরে চলে যাচ্ছে, কখনো ভেতরে চলে যায়, যেখানে জায়গা পায় সেখানে চলে আসছে। তাহলে দুধের দাঁতগুলো রক্ষা করা বড় বিষয়।
আর আরেকটি বিষয় হলো বাবা-মা ব, নানা-নানি এদের যদি এই সমস্যা থাকে তখন বাচ্চার দাঁত আঁকাবাঁকা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে করতে হবে কি, যখন দুধের দাঁতটা দীর্ঘস্থায়ীভাবে আসবে তখন খেয়াল রাখতে হবে যেন সমস্যা না হয়। হয়তো একটি দাঁত ফেলে দিলাম। এরপর হয়তো আরেকটি দাঁত এলো। একে আমাদের ভাষায় বলে সিরিয়াল ইসট্রাকশন। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি নেওয়া হয় তাহলে আমাদের আঁকাবাঁকা দাঁত হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন : তাহলে কখন থেকে একজন অর্থডনটিস্টের কাছে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন?urgentPhoto
উত্তর : এই বিষয়টিকে আমরা চার ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। একটি হলো প্রতিরোধ, যেন দাঁতগুলো আঁকা বাঁকা হতে না পারে। এ ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় বছরে একটি শিশুকে আঁকাবাঁকা দাঁতের ডাক্তার সেই অর্থডেনটিস্টের কাছে নিয়ে যাব। এরপর তাকে আট থেকে নয় বছর বয়সে দেখাব তাকে বলে ইন্টার সেপটিক অর্থডেনটিস্ট। যেন যেই দাঁতটা আঁকাবাঁকা তৈরি হয়ে যাচ্ছে সেটা যেন বেশি খারাপ না হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে ১২ বছর থেকে প্রধাণত চিকিৎসা শুরু হয়।
অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে চিকিৎসা ১৬ বছরের নিচে করা যাবে না। এটা একদমই ভুল। এই চিকিৎসার জন্য ভালো সময় হলো ১১ থেকে ১৩ বছর। মোদ্দাকথা, দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে যখনই আসল দাঁত উঠবে তখনই চিকিৎসা শুরু করা উচিত, দেরি না করে। তাহলে দাঁত দুটো সুন্দরভাবে সাজানো যায়। এর মানে অবশ্যই ১১ থেকে ১৩ বছরের মধ্যেই আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অর্থডেনটিস্টের কাছে যেতে হবে। উনিই বলে দেবেন কখন চিকিৎসা শুরু করবে।
প্রশ্ন : আঁকাবাঁকা দাঁত হলে কী কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : দাঁতগত অসুবিধা অবশ্যই আছে। যাদেরই আঁকাবাঁকা দাঁত তারা যতই ব্রাশ করুক যে দাঁতটা ভেতরে থাকে সেটা পরিষ্কার করা যায় না। ব্রাশ না লাগলে দাঁত কালো কালো হয়ে যায়, দাগ হয়ে যায়। সেখানে স্টেইন পড়ে, পরবর্তীকালে পাথর হয়। তখন জিনজিভাইটিস হয়, গ্রামের ভাষায় বলে পায়োরিয়া। মুখে থেকে দুর্গন্ধ আসা, রক্ত পড়া , পুঁজ আসে। এটা আঁকাবাঁকা দাঁতের একটা বড় সমস্যা। যখনই একটা দাঁত উঁচু থাকে তখন দাঁতের গোড়া ধীরে ধীরে করাতের মতো ক্ষয় হয়ে যায়। এতে দাঁতে শিরশির করে। এতে আস্তে আস্তে দাঁতে রুট ক্যানেল করা লাগছে, দাঁত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দাঁতকে সুন্দর রাখলে হাসতেও ভালো লাগবে, দেখতেও ভালো লাগবে।
আর সৌন্দর্যের জন্য আপনি যতই সাজেন, যত কিছুই করেন হাসিটা তো একটা মাধ্যম সৌন্দর্য প্রকাশের। কারো সাথে যখন দেখা হয় প্রথমেই আমরা মিষ্টি করে হাসি। সুন্দর হাসির জন্য সুন্দর দাঁত অতি প্রয়োজনীয়। সেটি আসলে শিশুকাল থেকেই শুরু করতে হয়।
প্রশ্ন : সেই যত্ন যদি পরিপূর্ণভাবে না হয়, আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা যদি না হয়- এর জটিলতা কত?
উত্তর : যখনই ক্যালকুলাস হয়ে, জিনজিভাইটিস বৃদ্ধি পায় তখনই দাঁত দ্রুত পড়ে যায়। তখন দেখা যায় দুই দাঁতের মাঝখানে ক্ষয় হয়ে যায়। দুই দাঁতের মাঝখানে যখন কালো কালো দাগ হয়ে যায় এটা ফিলিং করাও যায় না। একটু বয়স হয়ে গেলে দাঁত আকাঁবাঁকা থাকলে দাঁত বাঁধানোও যায় না। দাঁতের কারণে যদি না খেতে পারেন তাহলে শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে যাবেন।
বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’। স্বাস্থ্যের সাথে খাবারের একটা সম্পর্ক আছে। আর খাবার চাবানোর সাথে দাঁতের একটা সম্পর্ক আছে। যদি সারাজীবনই আপনি দুধ খান, না চাবিয়ে খাবার খান তাহলে কী ভালো লাগবে?
আর পৃথিবীতে যত মজার খাবার প্রতিটি জিনিসই আমরা চিবিয়ে খাই। তাই দাঁত ঠিক করা খুব প্রয়োজন।
প্রশ্ন : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা ভয় পান বিভিন্ন ব্রাসেস, ব্রেকেট- এগুলো পড়ে থাকতে। কতদিন ধরে পড়ে থাকতে হবে এই বিষয়ে ঝামেলা মনে করে। এ সম্বন্ধে কিছু বলুন?
উত্তর : প্রথম কথা হচ্ছে দাঁত ফেলে দিয়ে ব্রেস করি। এই দাঁত ফেলার একটি কারণ রয়েছে। যদি আপনার দাঁত পর্যাপ্ত ফাঁকা থাকে তাহলে দাঁত ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নাই।এখন যদি বেশি আঁকাবাঁকা থাকে তাহলে সুন্দর করে সাজানোর জন্য দাঁতটা ফেলে দেই। শুধু মনে রাখতে হবে সেখানে দাঁতটা ফেলা হবে সেখানে সেটা আর থাকে না। এই ফাঁকাটা বন্ধ হয়ে যায়। এটা একটা বড় ব্যাপার। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো সময়। এটা চিকিৎসার জন্য কম করে হলেও দেড় বছর সময় লাগে। এটা তাড়াহুড়া করে করলে নরম হয়ে যাবে। তাই সময় দিতে হবে।
আর ব্রেসিংয়ের যে বিষয়, এখন বিভিন্ন রং থাকে এর ফ্যাশনেবল হওয়ার জন্য। আমি হয় তো বলি তোমার আগামী উৎসব ঈদ,পহেলা বৈশাখ, ইত্যাদির পোশাকের রং কী? সে হয়তো বলল সবুজ, তখন আমি ব্রেসিং সবুজ করে দিলাম। আসলে বিষয় হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য কিছু সময়ের অসুবিধাটাও মেনে নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন : আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসার পর, দাঁত যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : এটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আঁকাবাঁকা দাঁত যেমন সুন্দর করে সাজানো যায় সেটাকে ধরে রাখা কঠিন। যদি এই চিকিৎসা ১১ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে শুরু করা হয় এবং সেটা যদি ১৫ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাহলে কোনো রকম সম্ভাবনা নাই এটা সরে যাওয়ার। তবে এটা যখন আপনি প্রাপ্ত বয়সে শুরু করব তখন নতুন করে তো দাঁত ওঠার সুযোগ নেই। এই জায়গাটিকে ধরে রাখতে হবে অনেক দিন। ধরে রাখার জন্য একটা রিটেইনার ব্যবহার করি যার কারণে দাঁতটা বসে যায়। যদি বসে যায় তখন আর এটা নড়্চড়া করবে না। বসার জন্য সময় দিতে হবে। দেড় থেকে দুই বছর এবং কারো কারো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সারা জীবন রিটেইনার ব্যবহার করা লাগতে পারে। সেটি ক্ষেত্র বিশেষে।
সুন্দর হওয়ার জন্য রিটেইনারকেও একটা সৌন্দর্যের অংশ মনে করতে হবে।