গরমে সকালের নাস্তা কেমন হবে?
প্রচণ্ড গরম পড়েছে চারদিকে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকেই। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিচ্ছে।
গরমের কারণে অনেকেই রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারে না। আর এই জন্য সকালে ঘুমও ভাঙে দেরিতে। দেখা যায়, এই জন্য তাড়াহুড়া করে, না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় অনেকে। এতে তাদের সকালের নাস্তা ঠিক মতো করা হয় না। আবার অনেকে গরমের কারণে নাস্তা খেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। এতেও তাদের নাস্তা খাওয়া বাদ পড়ে যায়।
সকালের নাস্তা বাদ দিলে শরীর আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। তাই গরম বেশি হলেও সুস্থতার জন্য সকালের নাস্তা খাওয়া অনেক জরুরি।
সঠিক নাস্তা নির্বাচন
আঁশযুক্ত খাবার বা ফাইবার জাতীয় খাবার সুস্থতার জন্য জরুরি। তবে মনে রাখবেন, বেশি আঁশযুক্ত খাবার অনেকেই এই গরমে হজম করতে পারে না। যেমন : ওটস, দুধ, ভুষি সমেত আটার রুটি ইত্যাদি। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
আসলে গরমের সময় সবচেয়ে সঠিক নাস্তা হলো নরম ও সহজ পাচ্য খাবার। যেমন : নরম ভাত, পান্তা ভাত, চিড়া, সাগুদানা, সুজি, পাতলা সাদা আটার রুটি ইত্যাদি কার্বহাইড্রেট।
প্রোটিন হিসেবে এই গরমে দুধের চেয়ে ছানা বা দই ভালো। এ ছাড়া সিদ্ধ ডিমও আপনার নাস্তায় রাখতে পারেন। যাদের রুটি দিয়ে ডাল খাওয়ার অভ্যাস, তারা এই গরমে সকালের নাস্তায় ডাল এড়িয়ে চলুন। ডাল অনেক সময় হজমে সমস্যা করে, বিশেষ করে বুট বা ছোলার ডাল।
সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী হলেও সকালে বেশি সবজি খেলে অনেকে হজম করতে পারে না। তাই গরমের জন্য সকালে পেপে, চালকুমরা, ঝিংগা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি নরম ও সহজ পাচ্য সবজি ভালো। চর্বিযুক্ত খাবার গরমে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার হলো, ডিম অমলেট, পরোটা, লুচি ইত্যাদি।
ফ্রুট ফ্রেশ জুস বা স্মুদি গরমের জন্য উপকারী। মাঠা বা ঘোল ঘরে বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। পাকা নরম ফল খেতে পারেন। যেমন : পেপে, বাঙ্গি, কলা, আম ইত্যাদি সকালের ফল হিসেবে ভালো। মধ্য সকালে টক ফল বা টক ফলের জুস খেতে পারেন। সকালের নাস্তাতে চা বা কফি এড়িয়ে চলা উত্তম। এই গরমে সকালের নাস্তার পর পানীয় হিসেবে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি বা ঘরে বানানো ফলের জুস সবচেয়ে ভালো।
গরমে সুস্থ থাকতে দিনের শুরু যেন হয় ঠিকঠাক। সুষম, সহজ পাচ্য ও ঘরে বানানো খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আর হ্যাঁ, নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার সময় পানির বোতল আর ছাতা নিতে ভুলবেন না।
কিছু জরুরি পরামর্শ
রাতে ভারি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
রাতে ভারি খাবার খাওয়া ঘুমের অসুবিধা করে। কারণ, ভারি খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি হয়; হজম দেরিতে হয়। তাই রাতে হালকা খাবার খান। আর রাতের খাবার আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে সেরে ফেলুন।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন
সকালে তাপমাত্রা একটু কম থাকে। সূর্য ভালোভাবে উঠে গেলে ৯টার পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তাই সকাল সকাল উঠে ৮টার মধ্যে নাস্তা করে ফেলুন।
কিছু অভ্যাস এই গরমে ত্যাগ করুন
অনেকেই ঘুম থেকে উঠে লেবু- মধু- পানি পান করেন। গরমের সময় এ অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। কারণ, মধু শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর লেবু অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস বা এসিডিটি তৈরি করে। তাই এই খাবারটি বাদ দিয়ে সকালে উঠে এক গ্লাস সাধারণ পানি পান করুন।
আবার যারা খালি পেটে চা বা কফি পান করে, এই গরমে তারাও এসব পানীয় বাদ দিলে সুস্থ থাকবে। তবে হ্যাঁ, বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর শক্তির জন্য সামান্য মধু-লেবু- পানি পান করতে পারেন।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল