তারুণ্য কীভাবে ধরে রাখবেন?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে বলিরেখা পড়তে থাকে, ত্বক ঝুলে পড়ে। তবে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে রাখা যায় ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া গেলে।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার উপায়ের বিষয়ে জানিয়েছে ডা. তানজিনা ইয়াসমিন। বর্তমানে তিনি অরোরা স্কিন অ্যান্ড অ্যাসথেটিকসে ডার্মাটোলজি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : কোন কোন জায়গায় কী কী লক্ষণ দেখা দিলে আপনারা একে বয়স বাড়ার লক্ষণ বলে ধরে থাকেন?
উত্তর : বয়স বাড়া বা অ্যাজিং তো খুব সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। প্রত্যেকটি মানুষের এক মিনিট, এক ঘণ্টা, এক দিন ধরে বয়সটা বাড়ছে। আর বয়সকে মুছে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে বয়সের লক্ষণগুলোকে যেন আমার ভালোভাবে থামাতে পারি, সেটি হলো কাজ।
বয়স বাড়ার যে লক্ষণগুলো আমরা বলি, সবার আগে যেটি আমি বলি, সেটি হলো টেক্সচার। একটা শিশুর টেক্সচার যেমন থাকে, মানুষ যখন পরিণত বয়সে যেতে থাকে টেক্সচারে পরিবর্তন হতে থাকে। আমাদের সবার ত্বকে সিবাসিয়াস গ্রন্থি থাকে। একটি সময় যখন আমাদের বয়স বাড়তে থাকে, এর কার্যক্রমটা কমতে থাকে। যখন কমতে থাকে, তখন আমাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবে শুষ্ক হতে থাকে। এটি বয়স বাড়ার একটি প্রধান লক্ষণ।
দ্বিতীয় হলো, পিগমেন্টেশন। বয়স যত বাড়তে থাকে, বিভিন্ন পিগমেন্টেশনের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন ধরুন, বাদামি দাগ, হলদেটে দাগ হতে পারে। তৃতীয় তো আমরা দেখি কিছু বলিরেখা আমাদের ত্বকে দেখা যায়। এতে কী হয়? চোখের চারপাশে কাকের পায়ের ছাপের মতো দেখা দেয়। কপাল যখন কুঁচকাই, কিছু রেখা দেখা দেয়। যখন আমরা হাসি, নাকের দুই পাশে কিছু লাইন দেখা যায়। বয়স বাড়ার এ লক্ষণগুলো খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক। তবে তখন থেকে যদি আমরা একটু সচেতন হই, এই বলিরেখাগুলো স্থায়ী হওয়ার দিকে যায় না।
আমাদের ত্বকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের কিছু বিষয় থাকে। এগুলো সবসময় বাড়ে। ত্বককে টান টান করে ধরে থাকে। বয়স যখন বাড়ে কোলাজেন উৎপাদন কমতে থাকে। ইলাস্টিনের উৎপাদন কমতে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ বছরে ৭ ভাগ করে কমতে থাকে। এতে আমাদের স্কিন টোন কমতে থাকে।
আমরা অনেক বেশি রাত জাগি, জাংকফুড খাচ্ছি। এতে ভারসাম্যপূর্ণ কোনো ডায়েট হচ্ছে না আমাদের। ডায়েটের খুব বড় একটি গুরুত্ব রয়েছে, এর ক্ষেত্রে। পাশাপাশি বয়স বাড়তে থাকলে, ত্বকের চর্বির ভলিউম কমতে থাকে। তখন একটি মানুষের ত্বক ঝুলতে থাকে। আমাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। তাই দেখা যায়, ২০-২৫ বছর বয়সে টান টান ছিল ত্বক, ৩৫ বছরের পর সেগুলো কমতে থাকে।
প্রশ্ন : তারুণ্য ধরে রাখতে কী কী পদ্ধতি আপনারা অনুসরণ করে থাকেন?
উত্তর : আসলে যখন বয়স বাড়ছে, বিভিন্ন সমস্যা ত্বকে আসছে, তখন গিয়ে চিকিৎসা করবেন, সেটি নয়। আমি বলব যে যখন প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়গুলো আসছে, তখন থেকে ত্বকের যত্নের চিকিৎসাগুলো নিতে হবে। তাহলে একটি মানুষের বয়সের যে ছাপ পড়ার কথা সেটি আমরা অনেক পেছাতে পারি। সেটা কোনো পরামর্শ ছাড়াই। তৃতীয় হলো, সে যখন নিজে এ বিষয়গুলো বুঝতে পারলো, এগুলো নিয়ে পড়ে না থেকে, তখন অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসকের কাছে আসা।
প্রশ্ন : কখন থেকে এই যত্ন শুরু করা উচিত?
উত্তর : যখন মনে করবেন, আমি সচেতন, আমার একটি ত্বক, একে যত্ন নওয়া উচিত, তখন থেকেই করতে হবে।
তখন থেকে কেন? ত্বকের যত্ন যদি বলেন, তাহলে প্রথম হলো সানব্লক। সানব্লক যদি আপনি ব্যবহার করা শুরু করেন, তাহলে ত্বকের যে সমস্যাগুলো বললাম, অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন। তখন থেকে শুরু করলে বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া ত্বক, মেলাজমা, ব্রণের যে দাগগুলো গভীর হয়ে যাচ্ছে, এগুলো আপনি নিজেই অনেকটুকু নিয়ন্ত্রণ করে ফেলছেন। বাকি যেটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হবে বলিরেখা পড়ে যাওয়া, দাগ পড়ে যাওয়া অন্য যেকোনো সমস্যা, তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সাহায্য নিতে পারছেন।
প্রশ্ন : বলিরেখা কমানোর জন্য কী কী পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন?
উত্তর : আগের মানুষের যে জীবন যাপনের ধরন ছিল, মানুষের ত্বকের বলিরেখাটা দেরিতে পড়ত। আমাদের এখন যে জীবনযাপন আমরা অনেক রাত জাগি, আমাদের ডায়েটটা সম্পূর্ণ নয়। আমরা কী খাচ্ছি? আমরা সফট ড্রিংকস খাচ্ছি অনেক। চিনি ও লবণ খাচ্ছি অনেক বেশি। এগুলো কারণ। অঙ্গবিন্যাস একটি বিষয়। আমরা যখন ল্যাপটপ দেখছি, ফোন দেখছি, খুব নিচু হয়ে দেখছি। সেক্ষেত্রে ঝুলে পড়ার সমস্যা হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের লক্ষণগুলো খুব দ্রুত দেখা দিচ্ছে। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের দিকে যেতে পারি। ভিটামিন ই, সি, এ রয়েছে। এ ধরনের খাবারগুলো আমরা সম্পূর্ণভাবে নিতে পারি। যাদের বলিরেখা দেখা যাচ্ছে, তারা বসে না থেকে যদি উদ্যোগ নেন, ভাবেন, আমার এখনই কি করা উচিত, তাহলেই হয়। বলিরেখা কমানোর খুব জাদুকরি একটি চিকিৎসা বের হয়েছে। এটি হলো বোটক্স। এর সঙ্গে অনেকেই খুব পরিচিত। এটা আসলে এক ধরনের ইনজেকশন।
এটি কীভাবে করা হয়, এ ব্যাপারে অনেকে চিন্তিত থাকে। রোগী যখন আমাদের কাছে আসে, তাকে মুখে একটি অবশ করার ক্রিম দিয়ে অবশ করে নেওয়া হয়। ইনসুলিন সিরিঞ্জ দিয়ে আমরা করি। ইনসুলিন যখন রোগী নেয় খুব বেশি ব্যথা কিন্তু সে অনুভব করে না। ছোট ছোট কিছু পয়েন্টে আমরা করি। এটা খুব সহজ একটি পদ্ধতি। রোগী শুধু আসবে, চেম্বারে চিকিৎসাটা নেবে। এরপর চলে যাবে। সে তার স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করতে পারবে।
সাধারণত আমরা বলি প্রতিবার বোটক্স নেওয়ার পর এটি চার থেকে ছয় মাস কাজ করে। তো আমরা পরামর্শ দেই রোগীকে বছরে দুবার নিলে যথেষ্ট।
প্রশ্ন : মুখ ছাড়া আর কোথায় কোথায় বয়স বাড়ার লক্ষণ দেখা যায়?
উত্তর : যে জায়গাগুলো সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে, হাতে, এখানে কিন্তু বয়স বাড়ার পদ্ধতিটা অনেক তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। যে অংশগুলো ঢাকা থাকে, সে অংশগুলোতে দেখবেন ত্বক অনেক অন্যরকম। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে ত্বকের যেসব অঙ্গ আসে, সেখানে বয়স বাড়ার পদ্ধতিটা তাড়াতাড়ি শুরু হয়। মুখের পাশাপাশি গলাতেও বলিরেখা পড়ে। যাদের বয়স বাড়তে থাকে, তাদের আচিল বা এ ধরনের জিনিস দেখা যায়। এটি চুলকায়, বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। আমি পরামর্শ দেব, এটি তুলে ফেললেই ভালো।
প্রশ্ন : এগুলো দূর করতে কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : মুখের জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করব, সেটিই তিনি ঘাড়ে ব্যবহার করবেন। সেটা তাহলে অনেকটুকুই ব্যবস্থাপনা করবে। আমরা প্রথমে সানব্লক ব্যবহার করতে বলি। সানব্লক যদি ঘাড়েও ব্যবহার করে, অনেকটুকুই সেখানে সুরক্ষিত হয়ে যাবে। এরপর যদি কারো নির্দিষ্ট কোনো জায়গার সমস্যা থাকে, আমাদের সে অনুযায়ী চিকিৎসা রয়েছে। এ ছাড়া হাতে সমস্যা হয়। হাত দিয়ে আমরা অনেকগুলো কাজ করছি। তারা তাদের হাতকেও সুন্দর রাখতে চায়।
প্রশ্ন : সবসময় কি এ চিকিৎসার ফলোআপের মধ্যে থাকতে হবে। না কি আপনাদের কোনো পরামর্শ রয়েছে?
উত্তর : আসলে ত্বক এমন একটি বিষয় সবসময় একটি যত্নের মধ্যে থাকতে হবে। উনি চিকিৎসা নিক বা না নিক, ত্বকের যত্নে কখনো অবহেলা করা যাবে না।
সঠিক একটি ডায়েটে থাকতে হবে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় তাকে জানতে হবে। পাশাপাশি তিনি যদি কোনো চিকিৎসা নিতে যায় সেটি তখন নিতে হবে।