কোলেস্টেরল বাড়লে ক্ষতি কী?
কোলেস্টেল এক ধরনের চর্বি। এটি আমাদের কোষের দেয়ালে থাকে। কোলেস্টেরল চার ধরনের হয়।
এগুলো হলো : টোটাল কোলেস্টেরল, লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল, হাইডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড।
এগুলো মধ্যে এইচডিএল ভালো কোলেস্টেরল। বাকি সব খারাপ। শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষতি কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৬১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শোয়েব মোমেন মজুমদার। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রিউমাটোলজি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : রক্তে কতখানি কোলেস্টেরল থাকলে একে স্বাভাবিক বলা হয়?
উত্তর : রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, তার রক্তনালি ব্লক হওয়া। রক্তনালি ব্লক হলে হৃদরোগ, মস্তিষ্কের স্ট্রোক, পায়ের রক্তনালি ব্লক হতে পারে। অনেক ধরনের শারীরিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
স্বাভাবিক কোলেস্টেরল কত হবে, এক এক জনের ক্ষেত্রে এর মাত্রাটা নির্ণয় করতে হবে। এটি এক এক জনের ক্ষেত্রে এক একরকম হতে পারে। আগে যেমন বলা হতো, এখন কারো যদি হৃদরোগ হয়, কারো যদি ডায়াবেটিস হয়, কারো যদি আরথ্রাইটিস থাকে, কার ক্ষেত্রে কত পরিমাণ সেটি তার অবস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট করতে হবে।
প্রশ্ন : কোলেস্টেরল বাড়ার লক্ষণ কী?
উত্তর : উচ্চ কোলেস্টেরল হলো, সারা বিশ্বের নীরব ঘাতক। এ জন্য এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ১০ বছরে যে কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে, একটি হলো, হৃদরোগ, আরেকটি হলো স্ট্রোক থেকে। দুটোই হলো, উচ্চ কোলেস্টেরল থেকে। সারা বিশ্বে দেড় কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে এ দুটো রোগ থেকে।
এর কিন্তু খুব বেশি লক্ষণ দেখা দেয় না। এ কারণে আমরা বলি, নীরব ঘাতক। যখন লক্ষণ দেখা দিবে, তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে অকাল মৃত্যু হতে পারে। স্ট্রোক হয়ে তার অকাল মৃত্যু হতে পারে। এ জন্য আমি মনে করি, এ বিষয়ে জনসচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বলা হচ্ছে, কারো বয়স ৪০ হলেই তার পরীক্ষা করা উচিত।
প্রশ্ন : আগে থেকে স্ক্রিনিং করে বোঝার উপায় রয়েছে কি যে কোলেস্টেরল বাড়ছে?
উত্তর : বর্তমানে বলা হচ্ছে, কারো বয়স ৪০ হলেই তার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা উচিত। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে বলা হয়, বয়স ২০ হলেই সবাইকে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করতে। বিশেষ করে, কারো পরিবারে অল্প বয়সে হৃদরোগ হয়েছে এমন থাকলে করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রেও বলা হচ্ছে, ২১ বছর হলেই তার কোলেস্টেরলের মাত্রাটা চেক করা উচিত।
প্রশ্ন : অল্প বয়সেই কেন এগুলো পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে?
উত্তর : বাংলাদেশে এ ঝুঁকিটা আরো বেশি। সারা বিশ্বে যত হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা-সব দেশই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশিরা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। একটি হলো, আমাদের দেশে অনেক ঝুঁকির বিষয় রয়েছে। যেমন, আমাদের দেশে অনেক বেশি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা ফাস্টফুডের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছি। আমরা কায়িক পরিশ্রম থেকে ডেস্কের কাজের দিকে চলে গেছি। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের আলাদা কিছু জিনগত ধরনের পরিবর্তন থাকার কারণে আমাদের কোলেস্টেরল বাড়ছে।
শহুরে বাচ্চাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে নয় জন বাচ্চাই স্থূলতায় ভুগছে। আজকাল বাচ্চাদের আগের মতো খেলাধুলার সুযোগ নেই, সবাই মোবাইল, টিভি গেম মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্যই আমাদের অল্প বয়সে উচ্চ কোলেস্টেরল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সেটা হচ্ছেও।
প্রশ্ন : কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর প্রভাব কতখানি রয়েছে?
উত্তর : একটি হলো, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বা করনারি হার্ট ডিজিজ। হার্ট আমাদের সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তেই হার্ট রক্তসঞ্চালন করছে। একটি মুহূর্তের জন্য স্থবির হয়ে গেলে, একটি মানুষের মৃত্যু হবে।
হার্টের রক্তনালি যদি ব্লক হয়ে যায়, হার্ট ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। এতে মায়ো কার্ডিয়াক ইনফ্রাকশন বা সাধারণ মানুষের জন্য বলি যে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হাসপাতালে নিতে নিতে ৫০ ভাগ রোগী মারা যান।
দ্বিতীয় ঝুঁকি হলো, মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হয়ে স্ট্রোক হওয়া। অনেকে মনে করেন, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক বোধ হয় একই জিনিস। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হার্ট হলো, হার্টের রক্তনালি ব্লক হয়ে, স্ট্রোক হচ্ছে মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হয়ে। এর লক্ষণ হলো, কথা জড়িয়ে যাওয়া, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শরীরের এক পাশ বন্ধ হয়ে যাওয়া। একজন মানুষ কিন্তু সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়।