ডায়াবেটিক ফুট আলসারের চিকিৎসা কী?

দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের ক্ষতকে ডায়াবেটিক ফুট আলসার বলে। এর চিকিৎসা কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৬৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. আব্দুল্লাহ আল গাদ্দাফী রানা। বর্তমানে তিনি ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরের অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ফুট কেয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিক ফুট আলসারের রোগীদের আপনারা কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : ডায়াবেটিক ফুট আলসার হয়ে যাওয়ার পর তো আমাদের আর কোনো কিছু করার থাকে না। আমাদের আসলে সরাসরি এর চিকিৎসাতেই চলে যেতে হয়। প্রথমে যেটি করতে হয়, সেটি হলো, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আনতে হবে। দুই নম্বর হলো, অন্যান্য যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। যেমন, ধূমপান যদি করে, সেটি বন্ধ করে দিতে হবে।
পরে যদি কোনো সার্জিক্যাল চিকিৎসা করার দরকার হয়, তাহলে আমরা সেটি করি। প্রথমে আমরা রক্ত চলাচল দেখি। যদি দেখা যায়, অপর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন থাকে, তাহলে আমরা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করি। এই ওষুধগুলো আমাদের দেশে পাওয়া যায়। সিলস্টাজল নামে পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা পোস্টা গ্লান্ডিং দিতে পারি। পোস্টা গ্লান্ডিং দেওয়ার পরও যদি রক্ত সঞ্চালন পর্যাপ্ত পরিমাণ না হয়, তাহলে অবশ্যই ভাসকুলার সার্জনের মাধ্যমে রিং পরিয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে এরপরে ক্ষতটি চিকিৎসা করি।
প্রশ্ন : ক্ষতটা আপনারা কীভাবে চিকিৎসা করেন?
উত্তর : আমাদের প্রথমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের অন্যান বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান করলে, সেটি ত্যাগ করতে হবে। পেটে চর্বি থাকলে, সেটি কমানোর কিছু ওষুধ রয়েছে সেগুলো দিতে হবে। যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, ব্লাড প্রেশার অনেক থাকে, সেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারো যদি পুষ্টির ঘাটতি থাকে, সেগুলো আমাদের ঠিক করতে হবে। কারো রক্ত কম থাকলে রক্ত দেওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতা থাকলে, তরল দিয়ে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পায়ের রক্ত চলাচল কমে গেলে ওষুধের মাধ্যমে, এমনকি সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে হলেও আমাদের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে।
এরপর মূল যে ডায়াবেটিক ফুট আলসার রয়েছে, একে আমাদের ঠিক করতে হবে। যত মৃত টিস্যু রয়েছে, সব সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর আমাদের প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হবে। ড্রেসিং করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। কিছু কিছু ফুট আলসার শুষ্ক থাকে। এমন ড্রেসিং করতে হবে যেন আলসারকে একটু আর্দ্র করে, করা হয়। অনুরূপভাবে যাদের বেশি আর্দ্র থাকে, সেই ক্ষেত্রে এমন ড্রেসিং ব্যবহার করতে হবে যেন তরল সে চুষে নিতে পারে এবং পরে যেন তাড়াতাড়ি সেখানে স্বাস্থ্যকর টিস্যু তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এরপরে জায়গাটা কি একেবারেই সুস্থ হয়ে যায়?
উত্তর : একেবারেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়, যদি কোনো অংশ গ্যাংরিন না হয়ে যায়। যদি গ্যাংরিন হয়ে যায়, রক্ত সঞ্চালন যদি কমে যায়, তাহলে সেটি কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।