সৌন্দর্য বাড়াতে প্লাস্টিক সার্জারি
সৌন্দর্য বাড়াতে প্লাস্টিক সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ ৩০ নভেম্বর এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২২২১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন সহকারী অধ্যাপক ফোয়ারা তাসমিম পামি।
প্রশ্ন : প্লাস্টিক সার্জারির কথাটা এলেই অনেকের মনে হয় আমি সুন্দর হয়ে যাব, চেহারাকে আরো সুন্দর করব। অথবা আমরা শারীরিক গঠনকে একটু ঠিক করব। সাধারণত সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কী কী কাজ করেন আপনারা?
উত্তর : প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়টি শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়। আমাদের অনেকগুলো ভাগ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌন্দর্য বৃদ্ধি। যাকে আমরা এসথেটিক সার্জারি বলি। তা ছাড়া বার্ন, জন্মগত ত্রুটি, ক্যানসার সার্জারি, বিভিন্ন ধরনের নরম টিস্যুর ট্রমা- সেগুলো আমাদের প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়। শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অনেক কিছুতেই আমাদের প্লাস্টিক সার্জারি করা লাগে।
প্রশ্ন : তার মধ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়গুলো কী?
উত্তর : মাথায় হেয়ার গ্রাফটিং করা হয়। চুল পড়ে যাচ্ছে বা টাক হয়ে যাচ্ছে। তখন হেয়ার গ্রাফটিং করা হয়। সেটিও প্লাস্টিক সার্জারির একটি অংশ। এ ছাড়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে বলিরেখাগুলো দেখা দেয়, কিংবা কোনো জায়গায় ভাঁজ পড়ে গেছে; সেই সমস্ত জায়গায় সেই ভাঁজগুলো দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন ইনজেকশন দিই। অথবা মুখের কোনো জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ফ্যাট ক্রাফটিং করি। এরপর যদি চোখে আসি, এখানে দেখা যায় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখে চর্বি জমে যায়। সেক্ষেত্রে প্লেফারো প্লাস্টি করি। এ ছাড়া সৌন্দর্যের ব্যাপারে বহু আগে থেকে নাকের প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। যাকে রাইনোপ্লাস্টি বলা হয়। রাইনোপ্লাস্টি দুভাবে হয়। একটি হলো, কোনো কারণে ভাঁজ হয়ে গেল সেই ক্ষেত্রে রাইনোপ্লাস্টি হতে পারে। অথবা কেউ মনে করে যে এই নাক নিয়ে আমি সুখী নই, আরেকটু ভালো দরকার, সেই ক্ষেত্রেও আমরা এসথেটিক রাইনোপ্লাস্টিই করে থাকি। এ ছাড়া আপনি যদি ঠোঁটে আসেন, এখানেও কিছু ফ্যাট গ্রাফটিং করা হয়। আমাদের দেশে ঠোঁট কমানো বা বাড়ানো দুটোই হচ্ছে। যাঁরা মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত আছেন, তাঁরা অনেকেই চান যে শরীরের এই অংশগুলো সুন্দর দেখাক। মেয়েদের বেলায় স্তনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কখনো বাড়ানো, কমানো করা হয়। তা ছাড়া ক্যানসারের পরে, বিশেষ করে একদিকের স্তন লস হয়, তখন একধরনের খারাপ লাগা কাজ করে। সেখানে আমরা স্তন রিকন্সট্রাকশন করছি। সেটা শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে টিস্যু দিয়ে হোক, কিংবা ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে। অথবা দুটোর সমন্বয় করে আমরা এটা করছি। তা ছাড়া মেদ বেড়ে গেলে বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন : লাইপোসেকশন, এবডোমিনোপ্লাস্টি। এরপর হাতে-পায়ে কিংবা উরুতে, এগুলোর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক সার্জারি রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক ডায়েট করা হলো, সেই ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় ঝুলে যাচ্ছে, সেগুলোকে আবার সঠিক গঠনে আনার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়।
প্রশ্ন : অনেকের বেলায় ডাবল চিন হয়। সে ক্ষেত্রে কী করেন?
উত্তর : সেই ক্ষেত্রে ফিশিয়াল রিজভিনিশন আছে এবং ফেশিয়াল টাইটেনিং আছে, সেটি সার্জারি করে ঠিক করা যায়। চর্বি বেশি হয়ে গেলে কিছুটা লাইপোসেকশন এবং সার্জারি-দুটোর সমন্বয়ে সঠিক আকৃতিতে নিয়ে আসা যায়।
প্রশ্ন : অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন আমি সব করে একেবারে সুন্দর হয়ে যেতে চাই। চাইলেই কি সবাই সুন্দর হয়ে যেতে পারবেন?
উত্তর : চাইলেই আমি সব করতে পারব না। আমার সেই উপযুক্ততা থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমি চাইলেই অনেক কিছু কমাতে পারব না। এ ছাড়া অন্যান্য রোগ বিবেচনারও বিষয় আছে।
আমার চাওয়া হতে হবে বাস্তবিক। অনেক ক্ষেত্রেই যারা এসথেটিক সার্জারি করতে চায়, তারা এসে হয়তো নায়ক-নায়িকার ছবি দেখিয়ে বলে, এই রকম চাই। সেটি সম্ভব নয়। আর প্রতিটি জিনিসেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কার ক্ষেত্রে হবে আর কার হবে না- সেটি বোঝা যায় না। কেউ এসেই যদি এমন বলেন যা আমাকে এমন’ করে দিন, তা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিছু প্রি-ওয়ার্কআপ লাগে।
প্রশ্ন : সার্জারি করার পর জীবনযাপনের ধরন বিষয়টিকে ধরে রাখার জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি পুনর্গঠনের ব্যাপারে আসে, সেই ক্ষেত্রে প্রথমেই আমরা এটি করতে চাই না। আমাদের প্রথমে প্রয়োজন জীবন-যাপনের ধরন সুন্দর করা। যদি ডায়েট করতে হয়, সেটি করা। হাঁটা, ব্যায়াম সবকিছু করে এই জীবনের সঙ্গে সে অভ্যস্ত কি না। এ ছাড়া কেবল সার্জারি করলেই চলবে না। ফলাফল ধরে রাখার জন্য অনেক কিছু মেনে চলতে হবে। কারণ যে বিষয়টির জন্য শরীরের অনাকাঙ্ক্ষিত গঠন বা পরিবর্তন, সেটি তো আর বন্ধ হচ্ছে না। সেটিকে ঠিক করতে আমাকে অবশ্যই জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রশ্ন : এর মানে হলো ডায়েটেশিয়ান, সার্জন, সাইকোলজিস্ট – একটি দল মিলিয়ে কাজটি করতে হয়?
উত্তর : হ্যাঁ, এটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বিষয়। প্রথমে ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এরপর এটি অন্য কোনো রোগের কারণে হচ্ছে কি না, কোনো হরমোনের সমস্যা আছে কি না, সেগুলো আমাকে জেনে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এরপর করতে হবে। পরবর্তী সময়ে কীভাবে চলবে এটিও একটি জরুরি বিষয়।