খুশকি নিয়ে চিন্তিত?
শীতে খুশকি খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটি বেশ অস্বস্তিকর। মাথায় খুশকি হলে ত্বক খুব চুলকায়। তবে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? আসুন জানি।
খুশকি মাথার ত্বকের অন্যতম প্রধান সমস্যা। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে পিটিরিয়াসিস। এটা শুধু ত্বক ঝরে পড়া। মাথার ত্বকের সর্বোচ্চ স্তর অবিরাম ঝরে যাচ্ছে। মূলত কোষগুলোর মৃত্যু হয়ে সেগুলো ঝরে পড়ে। এই ঝরে পড়া ত্বক বা আঁশকে বলে খুশকি। মনে রাখবেন, দীর্ঘদিন খুশকির চিকিৎসা না করা হলে কিংবা খুশকিকে অবহেলা করলে চুল উঠে যায়। খুশকির একটি সরাসরি কারণ হলো অতিরিক্ত আঁশ ঝরে পড়া। আঁশগুলো ঝরে পড়ার বদলে মাথার ত্বকে জমা হতে থাকে। খুশকির কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অসঙ্গত খাবার যেগুলো মাথার ত্বকে নিষ্ক্রিয় অবস্থার সৃষ্টি করে। খুশকি দুই ধরনের। একটি শুকনো খুশকি, অন্যটি তেলতেলে খুশকি। শুকনো খুশকিকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে পিটিরিয়াসিস ক্যাপিটিস সিমপ্লেক্স এবং তেলতেলে খুশকিকে বলে পিটিরিয়াসিস স্টিটয়েডস।
খুশকিকে প্রায় ক্ষেত্রেই সংক্রামক বলে বিশ্বাস করা হয়। কসমেটিক বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে খুশকির উভয় ধরনই ছোঁয়াচে এবং একাধিক ব্যক্তি দ্বারা ব্যবহৃত ব্রাশ, চিরুনি, তোয়ালে, সাবান ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের ফলে খুশকি ছড়াতে পারে। চুলের সংস্পর্শে আসা যেকোনো বস্তু পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিতে হবে।
মাথার ত্বক চুলকানো এবং অল্প সাদা আঁশ সাধারণভাবে মাথার ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকা কিংবা আলগা হয়ে চুলে ছড়িয়ে থাকা হলো শুকনো খুশকির বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে তেলতেলে বা তৈলাক্ত ধরনের খুশকি সেবামের (গ্রন্থি থেকে নিসরিত একধরনের রস) সঙ্গে মিশে ত্বকের সঙ্গে গোলাকারভাবে আঠার মতো লেগে থাকে। চুলকালে মাথার ত্বকে আঁচড় কাটতে বাধ্য করে। আঁচড়ানোর ফলে যদি তৈলাক্ত আঁশ ছিঁড়ে যায় তাহলে রক্তপাত হতে পারে কিংবা ধীরে ধীরে সেবাম চুইয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যদি খুশকির হালকা চিহ্ন থাকে তাহলে দেরি না করে তার চিকিৎসা করতে হবে। খুশকি সম্পূর্ণ দূর হয় না। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আর এ জন্য বর্তমানে বাজারে চমৎকার সব পণ্য পাওয়া যায়। তবে কখনোই কারো কাছে শুনে উল্টাপাল্টা শ্যাম্পু মাথায় মাখবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। খুশকি নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি সপ্তাহে ১-২ বার পলিটার লিকুইড দিয়ে মাথা ধুতে পারেন। খুশকি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এটা মেখে যেতে হবে। খুশকি নিয়ন্ত্রণে আপনি কিছু ঘরোয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন :
১. দুই টেবিল চামচ কসমেটিক ভিনেগারের সঙ্গে ছয় টেবিল চামচ গরম পানি মেশান। তুলোর সাহায্যে ওটা মাথার ত্বকে আলতো করে ঘষতে থাকুন। চিরুণি দিয়ে চুল আঁচড়ান। শোবার সময় এটা মাখলে সবচেয়ে ভালো হয়। বিছানার চাদরে যাতে দাগ না লাগে সে জন্য একটা স্কার্ফ দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখবেন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে ফেলবেন। চুল খুব ভালোভাবে ধোবেন যেন চুলে শ্যাম্পু লেগে না থাকে। পরে তিন টেবিল চামচ কসমেটিক ভিনেগার ও এক কাপ গরম পানির মিশ্রণ দিয়ে চুল ধোবেন। সপ্তাহে দুবার এটা করবেন।
২. খুশকি দূর করার আরেকটি পদ্ধতি হলো, হট অয়েল থেরাপি। শোবার সময় মাথার ত্বকে গরম তেল ম্যাসাজ করবেন। পরদিন সকালে গোসল করার এক ঘণ্টা আগে কসমেটিক ভিনেগারের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে কটন উল সহকারে মাথার ত্বকে আলতো করে ঘষবেন। এরপর এগ শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলবেন। শেষ ধোয়া হিসেবে এক কাপ গরম পানিতে একটা লেবুর রস ব্যবহার করবেন। সপ্তাহে একবার বা দুবার এ চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন তিন মাসের জন্য।
হট স্টিম বাথ বা গরম বাষ্প স্নান চুল ও মাথার ত্বকের জন্য উপকারী। গরম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন এবং একটা গরম ভেজা তোয়ালে দিয়ে মাথাটা পাগড়ির মতো করে পেঁচিয়ে রাখুন। এতে করে বাষ্প খুশকিকে তাড়াতে পারে।
৩. মাথায় তেল ও ঘাম জমতে দেওয়া উচিত নয়। এতে খুশকির প্রকোপ বেড়ে যাবে। মাথায় তেল যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করবেন আর নিয়মিত মাথার ত্বক ও চুল পরিষ্কার রাখবেন। মাথার ত্বক ও চুল পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল