বাতাসের কারণেও মোটা হয় মানুষ
বাতাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আবার এই বাতাসই দূষিত হয়ে পড়লে মানুষ আক্রান্ত হয় নানা ব্যাধিতে। দূষিত বায়ু সেবনে মানুষের মধ্যে স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ হতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে বিবিসি দাবি করেছে, দূষিত বাতাস মানুষের রুচি ও খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যে কারণে স্থূলতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই ব্যক্তির স্বাস্থ্য প্রায় একই রকম এবং তাঁরা খাবারও খাচ্ছেন একই। এঁদের একজন বসবাস করছেন বিশুদ্ধ বায়ুতে। আর অপরজন থাকছেন ধোঁয়া ও রাসায়নিক দ্রব্যে দূষিত বায়ুতে। কয়েক বছর পর দেখা যাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির ওজন বৃদ্ধির হার প্রথমজনের চেয়ে বেশি।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর গবেষকদের মতে, গাড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়াসহ দূষিত বায়ুতে এমন কিছু রাসায়নিক বস্তু থাকে যা মানুষের শক্তি খরচের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে এই নেতিবাচক প্রভাব বোঝা যায় না। কয়েক বছরের ব্যবধানে এর প্রভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তখন স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর গবেষক হং চেনের মতে, দূষিত বায়ুর নেতিবাচক প্রভাব শুধু ফুসফুসেই নয়, শরীরের অন্য অঙ্গের ওপরও পড়ে। এই বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর গবেষক হং চেন গত ১৪ বছরে কানাডার ওন্টারিওর ৬২ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নথি নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, ওই সময়ের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১১ শতাংশ বেড়েছে। তাঁর মতে, চীনসহ এশিয়ার কিছু শহরে বায়ুদূষণের হার বেশি, সেখানে এর নেতিবাচক প্রভাবও বেশি হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক শহর ও গ্রাম এই দুই ধরনের পরিবেশে ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে এই দুই অঞ্চলের বায়ু তৈরি করা হয়। এরপর কিছু ইঁদুরকে রাখা হয় শহুরে দূষিত পরিবেশে, বাকিগুলোকে রাখা হয় গ্রামের পরিবেশে। প্রথম কয়েক সপ্তাহে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। দশ সপ্তাহ পরে দুই পরিবেশে থাকা ইঁদুরের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়ে।
গবেষণায় দেখা যায়, শহুরে দূষিত বাতাসে থাকা ইঁদুরের শরীরে, পেটে ও এর ভেতরের অঙ্গে অপর ইঁদুরের চেয়ে বেশি চর্বি জমেছে। গ্রামের পরিবেশের চেয়ে শহরের পরিবেশে থাকা ইঁদুরের শরীরে চর্বি জমার হার ২০ শতাংশ বেশি।
গবেষকরা বলেন, দূষিত বায়ুতে থাকা আণুবিক্ষণিক ক্ষুদ্র পদার্থ শরীরের মধ্যে ঢুকে মানুষের স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে। এর ফলে মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ইনসুলিন নিঃসরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া শরীরের পেশি কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মাইকেল জেরেট বলেন, দূষিত বায়ুর কারণে মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ খাবার গ্রহণে প্রভাব পড়ে। শরীরে শক্তির ভারসাম্যও একসময় নষ্ট হয়, যা থেকে হজম প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে মানুষের মধ্যে দুশ্চিতাও দেখা যায়।