শীতে রোগবালাই বাড়ে কেন?
শীতের সময় বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে সর্দি কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পায়। আজ ৬ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৫৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. আসাদুল কবীর। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : শীতের সময় সাধারণত কোন কোন রোগ বাড়ে?
উত্তর : শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আমরা পেয়ে থাকি, সেটি হলো সর্দিকাশি, এইগুলো নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি আসে। এই সময়ে হালকা জ্বর এবং সর্দিকাশি বেশি হয়। এ ছাড়া কিছু সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণের মধ্যে সবচেয়ে যেটি ভয়াবহ তার নাম নিউমোনিয়া। বাচ্চা ও বয়স্ক লোকদের এটি বেশি হয়। এটি একটি সংক্রমণ ব্যাধি। একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। যেহেতু বাচ্চাদের এবং বয়স্ক মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই শীতের সময় এই রোগটি খুব বেশি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া হাঁপানি, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা যাদের বহুদিনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ রয়েছে, তাদের রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : এই রোগগুলো শীতে বাড়ে কেন?
উত্তর : বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যারা এই ঋতুতে খুব সক্রিয় থাকে। এবং তারা সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তারা এই সময়ে সহজে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। কুয়াশার কারণে ব্যাকটেরিয়া ওপরে উঠতে পারে না, নিচে ঘুরে বেড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাস যখন নিচ্ছে, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো খুব সহজে শরীরে প্রবেশ করছে। নিউমোনিয়ার কারণে যেসব ভাইরাসগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো সহজেই শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছি এবং আক্রান্ত হচ্ছি। যাদের একটু অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, চট করে একটু ঠান্ডা লাগলে কারো কারো সর্দি লেগে যায়। কারো কারো ধুলাবালিতে হাঁচিসর্দি লেগে যায়। তাই এই সময়ে এই প্রকোপ একটু বেশি।
আবার আপনি যদি নিউমোনিয়ার কথা চিন্তা করেন, এটি কেন হচ্ছে? এটি হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার কারণে। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, কিছু বলতে পারে না। আবার অপর দিকে বয়স্ক লোকদেরও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের বিভিন্ন রোগের কারণে, বয়সের কারণে এই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এই কমে যাওয়ার কারণে তাঁরা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।urgentPhoto
প্রশ্ন : একজন মানুষ যদি এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাঁর তো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তবে সাধারণ সর্দিকাশিতে অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আপনি একটু বলবেন কী ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সর্দিজ্বরে চিকিৎসকের কাছে যাবেন? আর যাওয়ার আগে তাঁদের করণীয় কী?
উত্তর : আসলে সাধারণত যাদের হালকা জ্বর আসে, অথবা একটু কাশি বা সর্দি হলো, তখন ওষুধ খুব সহজেই খেয়ে ফেলে। প্যারাসিটামল বা অ্যান্টি হিসমটামিন। এসব ওষুধ খাওয়ার পরও যদি কাশি হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, কাশি সাদা থেকে হলুদ হয় এবং যদি ঘন ঘন শ্বাস নেয়, বিশেষ করে বাচ্চারা- তাদের অবশ্যই খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে ঘনঘন শ্বাসকষ্ট হলে বা বুকের খাঁচা নিচু হয়ে আসছে এ রকম লক্ষণের পরও যদি চিকিৎসকের কাছে না নেয় তাহলে কী বিপদ হতে পারে?
উত্তর : নিউমোনিয়া থেকে তো অনেক ধরনের জটিলতা বৃদ্ধি পাবে। শ্বাসতন্ত্র অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। তার শরীরে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাকে আইসিইউতে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হতে পারে। নয়তো সে শ্বাসতন্ত্র অকার্যকর হয়ে মারা যেতে পারে। নিউমোনিয়ার কারণে অনেক শিশুই মৃত্যুবরণ করে। এ ছাড়া বয়স্ক লোকও নিউমোনিয়ার কারণে শেষ বয়সে মারা যান। সুতরাং এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। যদি জ্বর ভালো না হয়, শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়। আর কফের সঙ্গে যদি রক্ত আসে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : শিশুদের সাধারণ সর্দিকাশিতে পরিচর্যা কীভাবে নেওয়া উচিত?
উত্তর : একটি বিষয় হচ্ছে শুধু সাধারণ সর্দিকাশির জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যদি কোনো সংক্রমণ থাকে, যেটি একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাহলে অবশ্যই তখন স্কুল যেতে না দেওয়া ভালো।
প্রশ্ন : কোনগুলো ছড়াতে পারে। একজন অভিভাবক বুঝবেন কীভাবে?
উত্তর : যখন দেখা যাবে তার কফ হচ্ছে, প্রচুর জ্বর আছে, তাকে তখন অবশ্যই স্কুলে যেতে দেবে না। তার জন্য বাসায় থেকে পরিচর্যা করতে হবে। এবং যদি আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রশ্ন : এক বাচ্চা থেকে আরেক বাচ্চার ভেতর যেন সংক্রমণ না ছড়ায় সেজন্য কী করতে হবে?
উত্তর : সাধারণ সর্দিজ্বরে বাচ্চাকে কোথাও যেতে দেবেন না এটা ঠিক নয়। আপনি রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
শীতে ভাইরাসজনিত রোগও হয়। এ ধরনের রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এ রকম হলে আমরা বলি বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন না। কারণ তার গায়ে ব্যথা বা টিপিক্যাল কতগুলো সমস্যা থাকে।
প্রশ্ন : শীতজনিত সমস্যায় বড়দের যে শ্বাসকষ্ট হয়, সে বিষয়ে একটু বলুন।
উত্তর : যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি রয়েছে এদের তীব্রতা বেড়ে যায়। সাধারণত দেখা যায় রোগীর সকালবেলা শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। অথবা রাতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ঘুম ভেঙে গেছে। সে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে আসবে। হাসপাতালে গেলে আমরা তাৎক্ষণিক কিছু জিনিস দিয়ে দিই যাকে রেসকিউ থেরাপি বলে। যাতে প্রচণ্ড রকম যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি থেকে সে পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। এরপর পরবর্তীকালে আবার ডোজ দিয়ে দিই। আপনি খেয়াল করবেন শীতের মধ্যে অ্যাজমা, সিওপিডি রোগীর শ্বাসকষ্ট হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এদের যদি অ্যান্টিবায়োটিক বা নেবুলাইজেশনে কাজ না হয় তখন বলি আমাদের কাছে চলে আসতে। নতুন করে তখন চিকিৎসা করা হয়। আসলে এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সব সময় থাকা উচিত।