শীতে শুকনো কাশি হলে
শীত এলেই অনেকে কাশিতে আক্রান্ত হন। কাশির সঙ্গে কফ বের হয় খুবই কম, হয় না বললেই চলে। তবে এ সময়ের কাশি বেশ বিরক্তির উদ্রেক করে। কাশির কারণে ঘুমানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। গলার মধ্যে অস্বস্তি লাগে। কাশতে কাশতে গলায় ব্যথা হয়ে যায়।
শীতের দিনে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে, রাস্তাঘাটে বাড়ে ধুলোবালি। এসব কারণে কাশি বাড়ে। ধূমপায়ী ও হাঁপানি আক্রান্তদের শীতে কাশির তীব্রতা বাড়ে। এ ছাড়া শিশুরা ব্রঙ্কিওলাইটিস, বয়স্করা ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিয়েকটেসিসে আক্রান্ত হলেও কাশি বাড়ে। এসব ক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে কফ থাকে। জ্বরও থাকতে পারে। এ সময় দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
সাধারণ কাশির চিকিৎসা আপনিই করতে পারেন। এ ধরনের কাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। ঠান্ডা লাগলে কাশি বাড়ে। তাই ঠান্ডা পরিহার করতে হবে। বাইরে বেরোলে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম কাপড় পরুন। মাথায় টুপি বা মাফলার পরতে ভুলবেন না। একটা মোটা জামা না পরে একাধিক জামা পরুন। এতে দেহ থেকে তাপ কম পরিবাহিত হবে। ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
বাইরে গেলে মাস্ক পরে নিন। কুসুমগরম পানি দিয়ে গোসল করুন। খুব ভোরে বা বেলা পড়ে গেলে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাবেন না। কুসুমগরম পানি পান করতে পারলে ভালো হয়।
কাশি হয়ে গেলে কুসুমগরম পানি আদার রস, তুলসী পাতার রস, লবঙ্গ, লেবুর রস, মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা মধু বাদ দিন। কয়েক দিন বিশ্রাম নিলেও কাশি কমে যায়। কাশি বেশি হলে ব্রঙ্কোডায়লেটর (ব্রডিল), অ্যান্টিহিস্টামিন, কফ সাপ্রেসেন্ট ওষুধ সেবন করলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়। এ ধরনের কাশিতে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
তবে জ্বর এলে, শ্বাসকষ্ট বেশি হলে, লালচে বা হলুদ রঙের কফ, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। ধূমপান বাদ দিন। কাশি প্রতিরোধ বা এর তীব্রতা কমানোর জন্য নিউমোনিয়া (তিন বছর পরপর) ও ফ্লুয়ের (প্রতিবছর) টিকা বয়স্করা নিতে পারেন। বাংলাদেশের সর্বত্র এ টিকা পাওয়া যায়।
শীতের শুরুতে হাঁপানি আক্রান্তদের কাশি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়। তাই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হয়। তবে ভাইরাস দিয়েও কোনো কোনো সময় এদের কাশি হতে পারে। এতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাশির তীব্রতা অনুযায়ী স্টেরয়েড ইনহেলার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং সালবিউটামল ইনহেলার ঘনঘন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
কাশি দীর্ঘমেয়াদি হলে, ঘুম ভেঙে গেলে, কাশতে কাশতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।