থাইরয়েড ক্যানসার নির্মূলে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ভূমিকা
নিউক্লিয়ার মেডিসিনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। আজ ২১ জানুয়ারি, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৭৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মিজানুল হাসান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : নিউক্লিয়ার মেডিসিনের আওতায় আপনারা কী কী রোগ নির্ণয় করেন এবং চিকিৎসা করেন?
উত্তর : আণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার—এ বিষয়টির সঙ্গে আমরা পরিচিত। আণবিক শক্তির ধ্বংসের খবর আমরা জানি। আমরা হিরোশিমা, নাগাসাকির ভয়াবহতা দেখেছি। এর পরও আমরা আরো এ রকম নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনা দেখেছি। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে আমরা একে মানবদেহের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাসেবায় এটি ব্যবহার করছি। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করে আমরা রোগ নির্ণয় এবং তার প্রতিকার করছি। এই শাখাকেই নিউক্লিয়ার মেডিসিন বা বাংলায় পরমাণু চিকিৎসা বলতে পারেন।
প্রশ্ন : রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য এর কী কী শাখা রয়েছে?
উত্তর : আসলে এখন নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের যাত্রা শুরু হয়েছে। আজকে এই বর্তমান অবস্থায় এসে আমি বলতে পারি, শরীরের এমন কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই, যেখানে নিউক্লিয়ার মেডিসিন অথবা পরমাণু চিকিৎসা ব্যবহার হচ্ছে না। যেমন : থাইরয়েড, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র, লিভার, হাড় বা অস্থি—সব পদ্ধতিতেই আমরা নিউক্লিয়ার মেডিসিন ব্যবহার করছি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেন্টার সরকারি পর্যায়ে কোথায় কোথায় আছে, যেখানে আপনারা এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকেন?
উত্তর : আমি যেখানে কাজ করছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়—এটা আমাদের জাতীয় ইনস্টিটিউট। ঢাকায় সরকারি পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে আমাদের আরো দুটি ইনস্টিটিউট আছে। এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে যেগুলো পুরোনো মেডিকেল কলেজ, সেসব মেডিকেল কলেজে, বর্তমানে বাংলাদেশ পরামাণু শক্তির অধীনে সরকারি পর্যায়ে ১৫টি নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেন্টার রয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার সেন্টারে রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য কী কী ভাগ রয়েছে?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের যে ইনস্টিটিউট, সেটি জাতীয় ইনস্টিটিউট। অন্যান্য ইনস্টিটিউটে বর্তমানে সাতটি বিভাগ রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি বিভাগ সরাসরি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে জড়িত।
আমি যদি বিভাগ হিসেবে বলি, প্রধান বিভাগ হলো নিউক্লিয়ার সেন্টিগ্রাফি। মানুষের যখন ক্যানসার হয়, এই ক্যানসার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা বোল স্ক্যান করে থাকি। আমাদের নিউক্লিয়ার নেফ্রোলজি বিভাগ রয়েছে। কিডনি সম্বন্ধে আমরা বিভিন্ন রোগ খুব সহজে নির্ণয় করতে পারি। কিডনির কার্যকারিতা কেমন, সেটা করতে পারি। নিউক্লিয়ার কার্ডিওলজি আমাদের একটি বড় বিভাগ, যেখানে হৃদযন্ত্রে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না, সেটি দেখছি। থাইরয়েড আমাদের একটি বড় বিভাগ। এখানে থাইরয়েডের সব ধরনের রোগ নির্ণয় করা হয় এবং এসবের চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে।
বাংলাদেশে অনেকে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বলতে আলট্রাসাউন্ডকে বলে থাকে। আমি এখানে দর্শকের জন্য বলতে চাচ্ছি, আসলে আলট্রাসাউন্ডকে আমরা পিয়র নিউক্লিয়ার মেডিসিন বলতে পারি না, যেহেতু সেখানে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহৃত হয় না। এখানে হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ব্যবহার হয়।
প্রশ্ন : চিকিৎসার বিষয়ে আপনারা নিউক্লিয়ার মেডিসিনের আওতায় মূলত কী কী রোগের চিকিৎসা করে থাকেন?
উত্তর : থাইরয়েড গ্রন্থির অতিপ্রদাহ নির্মূলের জন্য আমরা এটি ব্যবহার করি। এ ছাড়া থাইরয়েড ক্যানসারের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। থাইরয়েড ক্যানসার নির্মূলের জন্য নিউক্লিয়ার মেডিসিনের কোনো বিকল্প নেই।
প্রশ্ন : অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?
উত্তর : পার্থক্য হলো, নিউক্লিয়ার মেডিসিনে যে কাজ করি একে আমরা আমাদের ভাষায় বলি মলিকিউলার ইমেজিং। যেকোনো একটি প্রদাহ হোক, ক্যানসার হোক—অনেক আগেই আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারব। এতে এর ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে। এবং তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যাবে। যত দ্রুত আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারব, তত দ্রুত আমরা চিকিৎসা করতে পারব। এতে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।