লেজার চিকিৎসা থেকে কি ক্যানসার হয়?
বর্তমানে ত্বকের চিকিৎসায় লেজার ব্যবহৃত হচ্ছে। লেজার চিকিৎসা করলে ক্যানসার হয় কি না বা লেজারের আলো ত্বকের কোনো ক্ষতি করে কি না- এসব নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। আজ ২৪ জানুয়ারি এনটিভি স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৭৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. রোকন উদ্দিন। বর্তমানে তিনি এনাম মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি যোগ হয় এবং আমরা এগিয়ে যাই। তারই একটি হচ্ছে লেজার। আপনি একটু বলবেন, লেজার কী? ত্বকের চিকিৎসায় এর ব্যবহার কোথায় হয়?
উত্তর : সাধারণভাবে বলতে গেলে লেজার একটি আলোকরশ্মি। এটা দিয়ে আমরা অবাঞ্চিত টিস্যুকে নষ্ট করি। যে টিস্যুকে আমরা রাখতে চাই না, সেটিকে কাটাকাটি না করে বা কোনো রকমের ক্ষতি না করে ঠিক করতে চাই, সেখানে লেজারের ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী সমস্যা বা রোগের ক্ষেত্রে লেজার ব্যবহার করেন?
উত্তর : আমাদের দেশে অবাঞ্চিত লোমের ক্ষেত্রে লেজার অনেক বছর ধরে ব্যবহার হচ্ছে। আপনি জেনে খুশি হবেন, সারা বিশ্বে চার ধরনের লেজার ব্যবহৃত হচ্ছে; বাংলাদেশেও আমরা চার ধরনের লেজার ব্যবহার করছি। ত্বকের গর্ত ঠিক করার জন্য, বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করছি এখন। জন্মগতভাবে রক্তনালির ত্রুটি ঠিক করার জন্য আমরা ভাসকুলার লেজার ব্যবহার করছি। আন্তর্জাতিক মানের যা যা দরকার, সবই আমাদের দেশে রয়েছে। একটি ভালো সেন্টারে যা যা থাকে আমাদের সেন্টারে এখন সেই সুবিধা আছে।
প্রশ্ন : ত্বকের কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেজার ব্যবহার করছেন এবং এর ফলাফল কেমন?
উত্তর : সিস্টিক একনির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া রক্তনালির বিকলাঙ্গতা ঠিক করার জন্য, তিল বা শরীরের সূর্যের তাপমাত্রার জন্য যে সমস্যা হয়, সেগুলো ঠিক করার জন্য লেজারের ব্যবহার হয়।
শ্বেতী রোগীকে ভালো করার জন্য আমরা স্বাভাবিক চামড়া নষ্ট করে ফেলি। এই চিকিৎসা করলে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন : লেজার নিয়ে আমাদের রোগীদের মধ্যে প্রচলিত কিছু ভয় কাজ করে। যেমন : লেজার একটি আলো। এতে ক্যানসার বা অন্য কোনো সমস্যা হবে কি না? ভালো হয়ে যাওয়ার পর আবারও ব্যবহার করতে হয় কি না? এই আলো ব্যবহারের পর ত্বক পুড়ে যাবে কি না? ভবিষ্যতে দাগ আরো বাড়বে কি না- এসব। এই বিষয়ে একটু পরামর্শ দেন?
উত্তর : লেজার যখন দেওয়া হয়, তখন কিছু আলো প্রতিফলিত হয়ে যায়। কিছু আলো আসপাশে ছড়িয়ে যায়, কিছু আলো পরিবহন হয়, কিছু আলো নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রতঙ্গে গিয়ে লাগে।
আমাদের চামড়ায় যে পানি রয়েছে, হিমোগ্লোবিন রয়েছে এবং ম্যালানিন আছে- এরা লেজারের আলো শোষণ করতে পারে। আমরা কী করতে চাচ্ছি, সেটির উপর কী ধরনের আলো ব্যবহার করব সেটি বোঝা যাবে। নির্দিষ্ট অঙ্গে যখন এটি শোষণ হচ্ছে তখন সেখানে তাপ উৎপন্ন হচ্ছে। যখন তাপ উৎপন্ন হয়, তখনই এটি ধ্বংস হয়। তাপ যখন উৎপন্ন হয়, তখন প্রশ্ন আসে এটি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না। আশপাশের ভালো টিস্যুগুলোও তখন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যন্ত্র যদি সঠিক না হয়, ভালো মানের না হয় সেক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা তৈরি হবে। আর যন্ত্রের পেছনে যে লোকটি কাজ করছে সেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : এর থেকে কি ক্যানসার হওয়ার ভয় রয়েছে?
উত্তর : লেজার থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনো ভয় নেই; একদমই নেই।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের লেজার চিকিৎসার ব্যয় কেমন?
উত্তর : অবাঞ্চিত লোমের ক্ষেত্রে যদি হরমোনে সমস্যা না থাকে, পলিসিস্টিক রোগ না থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যয় খুব বেশি নয়। হয়তো তিনটি থেকে পাঁচটি সেশন লাগবে।মোটামুটি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় পাঁচ থেকে সাত সেশনের একটি চিকিৎসা করা সম্ভব।