বিশ্ব দন্ত্য চিকিৎসক দিবস
বাংলাদেশে দন্ত্য চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা

আজ ৬ মার্চ, বিশ্ব দন্ত্য চিকিৎসক দিবস। দিবসটি নিয়ে কথা বলেছেন ডা. আশাফুজ্জোহা রাজ। বর্তমানে তিনি রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড ও রাজ ডেন্টাল সেন্টারের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩১৮তম পর্বে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
প্রশ্ন : আজকের দিনে আপনাদের কর্মসূচি কী থাকে? একটু জানতে চাই।
উত্তর : একটু বলে নিই, এটি হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড ডেনটিস্ট ডে’। ডেনটিস্ট শব্দটিতে কিন্তু আমরা খুব বেশি অভ্যস্ত নই। আসলে এটি আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন বা বাংলাদেশের যে ডেনটিস্টরা রয়েছেন, আমরা এই শব্দটিকে ব্যবহার করি, ডেন্টাল সার্জন হিসেবে। কারণ ডেনটিসট্রির একটি সংজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকার ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন। এটি একটি বিজ্ঞান ও শিল্প। যেখানে মুখের অভ্যন্তরের সব কিছুর রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি রোগের প্রতিরোধ এবং মুখের মধ্যে যেই আঘাত পায় সেটি, পাশাপাশি কোনো জন্মগত ত্রুটি – এসব চিকিৎসা ডেনটিসট্রির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এখানে একটি ভ্রান্ত ধারণা অনেকের মধ্যে রয়েছে যে, ডেনটিস্ট মানে কেবল দাঁতের ডাক্তার বা শুধু দাঁত ফেলাই তাঁদের কাজ। ডেন্টাল শব্দের অর্থ কিন্তু কেবল দাঁত নয়।
প্রশ্ন : আমরা কিন্তু ওরাল সার্জারি বা ওরাল ক্লিনিক বিষয়টি দেখি। সেটি আসলে কী?
উত্তর : ডেন্টাল শব্দের অর্থ কেবল দাঁত নয়। এর প্রকৃত অর্থ হলো দাঁত সম্পর্কীয়। এখানে দাঁতের পাশাপাশি আমাদের চোয়ালের হাড়, ঠোঁট, জিহ্বা, তালু, মুখের স্নায়ু, লালাগ্রন্থি সবকিছু এই ডেন্টাল শব্দের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে এই দিনটি খুব বেশি জনপ্রিয় নয়। কারণ আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ এখনো দাঁতের চিকিৎসাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। তবে যে কোনো উন্নত দেশে এই দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। এই দিনে রোগীরা তাদের ডেন্টাল সার্জনকে শুভেচ্ছা জানায়, কার্ড দেয়, ফুল দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনিক্যাল সাক্ষাতের মাধ্যমে নতুন ডেন্টাল রোগের তথ্য তারা নিয়ে আসে। মানুষকে সচেতন করতে এই দিনটি সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে এখন ডেনটিসট্রির অবস্থা কী?
উত্তর : কিছুদিন আগে আমাদের দেশে একটি ধারণা ছিল, দাঁতের সমস্যা মানেই দাঁত ফেলে দেওয়া। তবে বর্তমানে দেশে যে প্রেক্ষাপট তাতে আমাদের দেশের ডেন্টাল সার্জনরা উন্নত বিশ্বের সমমানের বলা যেতে পারে। আমাদের দেশে এখন সব ধরনের চিকিৎসা হয়। যেমন : উন্নত বিশ্বে উদ্ভাবিত যে কোনো ডেন্টাল পদ্ধতি খুব সহজেই আমাদের দেশে এখন চলে আসছে। আমাদের দেশের ডেনটিস্টরা নিজ উদ্যোগে দেশে বা দেশের বাইরে ট্রেনিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন দাঁত ফেলে দেওয়ার চিকিৎসাটি আর নেই। একমাত্র আক্কেল দাঁত ছাড়া মুখের কিন্তু সব দাঁতই অনেক অবস্থাতেই রাখা যায়। এ ধরনের চিকিৎসা এবং চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আমাদের দেশে আছে।urgentPhoto
প্রশ্ন : অনেক রোগী কিন্তু ডেনটিস্টদের কাছে আসতে ভয় পান। এ বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর : এই ভয়ের যে একেবারে যুক্তি নেই তা নয়। এই ভয়ের কারণ হচ্ছে রোগীদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা। দেখা যায় আগের রোগীদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শুনেছে। অনেক আগে দাঁত তুলতে গিয়ে ওই রোগী হয়তো ব্যথা পেয়েছিল বা ফিলিং করেছিল, ব্যথা করছে। এসব অভিজ্ঞতা শুনে ভয় পায়। সেই অবস্থা কিন্তু এখন আর নেই। গত পাঁচ-সাত বছরে ডেনটিসট্রি অনেক এগিয়ে গেছে। একটি রোগীর আমরা পুরোপুরি রোগ নির্ণয় করতে পারি। যেই চিকিৎসাটি দরকার সেটিই আমরা রোগীকে দিতে পারি। দেখা যায় রোগীর যেখানে ফিলিং লাগবে সেখানে ফিলিংই করা হয়। তবে এটি যদি রুট ক্যানেলের পর্যায়ে চলে যায়, তখন ফিলিং করে লাভ হবে না। আমরা বুঝতে পারি সহজে কোন সময় ফিলিং লাগবে, রুট ক্যানেল লাগবে, নাকি সংরক্ষণ করাই যাবে না। এই জিনিসগুলো এখন আমাদের দেশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাই রোগীরা যদি ভালো জায়গায় গিয়ে ভালো চিকিৎসা নেয়, তাহলে কিন্তু, এই ভয়ের কোনো কারণই এখন নেই।
প্রশ্নর: সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিনটিতে কি আপনাদের কোনো কর্মসূচি থাকে?
উত্তরর: এবার এই দিনটিতে ‘বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি’ একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া আমাদের দেশে যে বেসরকারি বা সরকারি হাসপাতালগুলো আছে এখানেও দেখা যায় চিকিৎসকরা সচেতন করার জন্য ব্রাশের পদ্ধতি দেখায়। কীভাবে দাঁত ও মাড়িকে ভালো রাখা যায়, এ ধরনের পরামর্শ আমরা রোগীদের দিয়ে থাকি এই দিনটিতে। যাতে করে রোগীরা একজন থেকে আরেকজনকে বলে দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধের ওপর ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের এখন পর্যন্ত ডেনটিস্টদের সংখ্যা খুবই কম। সারা বাংলাদেশে মনে হয় প্রায় আট হাজারের মতো অনুমোদিত ডেন্টাল সার্জন রয়েছেন।
প্রশ্ন : একটা অভিযোগ আমরা শুনি, রোগীদের কাছে যে দাঁতের চিকিৎসায় ব্যয় খুব বেশি। যাদের সামর্থ্য কম তাদের জন্য খুব কষ্ট হয়ে যায়। তাদের জন্য কী বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে?
উত্তর : একটি কথা সবাইকে বিশেষভাবে বলা উচিত ডেন্টালে ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিস এখন দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা কিন্তু চেষ্টা করি দেশের মানুষের অবস্থা বুঝে অনেক কম পয়সায় চিকিৎসা দিতে। এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। নেটে ঢুকলেই মানুষ দেখতে পারে আশপাশের দেশে কী পরিমাণ খরচ। আপনি দেখবেন এখন প্রবাসীরা শুধু নয়, ভিনদেশি মানুষও বাংলাদেশে আসছেন উন্নত চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত কম খরচে নেওয়ার জন্য। তারপরও আমি বলব, ডেন্টাল চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল আমাদের দেশে। তবে বেসরকারি মেডিকেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও কিন্তু যন্ত্রপাতির উন্নতি হয়েছে। সেখানে রোগীরা অনেক কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারে।
প্রশ্ন : কোন কোন জায়গায় গেলে এই সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর : রাজধানীর কথা চিন্তা করলে বলব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে ডেন্টাল ইউনিট খুবই শক্তিশালী। শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে রয়েছে। ডেন্টাল কলেজে রয়েছে। এখন সলিমুল্লাহতে ডেন্টাল কলেজ ইউনিট রয়েছে। আর ঢাকার বাইরেও জেলা পর্যায়ে অনেক উন্নত হয়েছে। এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই।
প্রশ্ন : দীর্ঘক্ষণ লাইনে থেকে রোগীরা সেবা নিচ্ছে। তাদের সেই ব্যবস্থা থেকে উন্নতি করার কোনো প্রচেষ্টা আছে কি?
উত্তর : আমার জানা মতে, প্রতিটা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব উদ্যোগে এবং ডেন্টাল সোসাইটির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ডেন্টাল সেবা যেন প্রতিটি মানুষের মাঝে পৌঁছে যায় সেই চেষ্টা করছে। তারপরও যেখানে কম খরচ, সেখানে রোগীরা একটু ভিড় করবেই। আর এর চিকিৎসা পদ্ধতিও একটু সময়সাপেক্ষ। আর রোগীরা কখন আসে? আসে কিন্তু শেষ পর্যায়। যখন চিকিৎসটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল অবস্থায় পৌঁছে যায়।