বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস
সঠিক চিকিৎসায় রোগ নিয়ন্ত্রণ হয়
আশপাশে হয়তো দেখেছেন এমন কাউকে, যাঁর হাত অনবরত কাঁপতে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিরাই পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত।
এটি বেশ পুরোনো রোগ। ১৮১৭ সালে জেমস পারকিনসন ছয় ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে এ রোগ সম্বন্ধে বর্ণনা দেন। তাঁর নামানুসারে এ রোগের নাম রাখা হয়েছে।
ব্রিটেনের প্রতি ৫০০ জনে একজন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে এমন কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
অনেকে মনে করেন, এ রোগ ভালো হয় না বা এ রোগের চিকিৎসা নেই। তাই তাঁরা নিয়তি বলে মেনে নিয়ে কষ্টকর জীবনযাপন করতে থাকেন।
তবে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা আছে। তবে ওষুধের মাধ্যমে তা পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না, এটাও সত্য। ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
পারকিনসন্স রোগের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১১ এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
কারণ
এ রোগের কারণ কী, তা আজো জানা যায়নি। মস্তিষ্কের সাবসটেনশিয়া নিগ্রা নামক স্থানে ডোপামিনযুক্ত স্নায়ু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এ রোগ দেখা দেয়। তবে মনে করা হয়, জেনিটিক মিউটেশন বা রূপান্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের টক্সিন ও ভাইরাসের সংক্রমণে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
সাধারণত বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের হার বাড়ে। বংশে কারো পারকিনসন্স থাকলে আক্রান্তের হার চার থেকে ছয় গুণ বাড়ে। এ ছাড়া যাঁরা আগাছা ও পোকামাকড় দমনের ওষুধ ছিটানোর কাজে জড়িত থাকেন, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে।
লক্ষণ
পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় অনেক পড়ে। শুরুতে লক্ষণ এতটা বোঝা যায় না। সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। হাঁটাচলা করতেও সমস্যা দেখা দেয়। সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটতে থাকে রোগীরা।
হঠাৎ করে ঘুরতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যেমন : বাহু বাঁকাতে গেলে বেশ বেগ পেতে হয়। গলার স্বর ভারী হয়ে যায়। কথা বলতে গেলে তা জড়িয়ে যায়। হাঁটতে গেলে অনেক সময় শরীরের সঙ্গে হাত লেগে থাকে।
রোগ নির্ণয়
পারকিনসন্স রোগ নির্ণয় করতে পারে এমন কোনো পরীক্ষা নেই। চিকিৎসকরা রোগের ইতিহাস শুনে ও শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হন।
চিকিৎসা
পারকিনসন্স রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। রোগের লক্ষণ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। লেভোডোপা ও কার্বিডোপা সেবনে লক্ষণগুলো অনেকাংশে কমে যায়। এখন পর্যন্ত পারকিনসন্স রোগের এটাই সেরা ওষুধ। এ ছাড়া ব্রোমোক্রিপটিন, সেলেজিলিন, এমানটিডিন, অ্যান্টিকলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সার্জারি করা যায়। তবে আমাদের দেশে তা হয় না বললেই চলে।
এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই আক্রান্তদের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা জরুরি।
- পারকিনসন্স রোগে আক্রান্তদের পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল থাকতে হবে।
- আক্রান্তদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এ জন্য আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- আক্রান্তরা অনেক সময় হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। আবার বয়স বেশি বলে পড়ে গিয়ে শরীরের হাড় ভেঙে যায়। এটি প্রতিরোধ করতে হলে সচেতন হতে হবে। হাঁটার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। কেউ ডাকলে হঠাৎ করে না ঘুরে আস্তে আস্তে ইউ-টার্ন নিন। হাঁটার সময় সঙ্গে কোনো কিছু বহন করবেন না। এমন পোশাক পরুন, যেটিতে বোতাম কম বা চেইন আছে।
- রোগটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও ভালো ফল পাওয়া যায়নি। তবে গবেষকরা বলেছেন, কফিজাতীয় তরল পান করলে এ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।