দাঁতের রং বদলের কারণ, করণীয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভ্যাসে এবং অন্যান্য কারণে দাঁতের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। আর তখনই আমরা বুঝতে পারি দাঁতের আসল রঙের পরিবর্তন ঘটেছে। সব সময় দাঁতের প্রদর্শন কিংবা ব্যবহারের কারণে আমরা দাঁতের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য ব্রাশের মাধ্যমে পরিষ্কার করে থাকি। এরপরও নানা কারণে দাঁতের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় এবং স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন ঘটে। ফলে দাঁত দেখতে সুন্দর লাগে না।
দাঁতের রং পরিবর্তনের কারণসমূহ
বিভিন্ন ধরনের পানীয় যেমন কফি, চা, ওয়াইন ইত্যাদি দাঁতের মধ্যে দাগের সৃষ্টি করে। অব্যাহতভাবে উল্লিখিত পানীয় পান করার ফলে দাঁত স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায় এবং দাঁতের স্বাভাবিক রং বদলে যায়। এর ফলে দাঁত লালচে রং ধারণ করতে পারে। আমাদের দেশে গ্রামের পাশাপাশি শহরের পান-সুপারি খাওয়ার প্রচলন আছে। সামাজিক প্রচলন কিংবা অভ্যাসগত কারণে যারা পান-সুপারি খেয়ে থাকেন, তাঁদের দাঁতের উজ্জ্বলতা খুবই দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। দাঁতের রং সাদা থেকে ধীরে ধীরে কালচে রং ধারণ করে। বিড়ি, সিগারেট, গুল (তামাকের বিশেষ ধরনের গুঁড়ো) ইত্যাদি গ্রহণের ফলেও দাঁতের রঙের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
বিশেষ কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। যে রোগীদের মাথায় কিংবা ঘাড়ে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তাদের দাঁতের রং পরিবর্তন হয়ে থাকে। সন্তানসম্ভবা নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ওষুধ সেবনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ট্রেট্রাসাইক্লিন কিংবা ডক্সিসাইক্লিন ওষুধ সেবনের কারণে শিশুটির দাঁতের রঙের পরিবর্তনসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
ডেন্টাল ক্যারিজ সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত। দাঁতে যদি গর্ত হয় তাহলে সেটি পূরণের জন্য যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তা অনেক সময় দাঁতের রঙের চেয়ে ভিন্ন হয়। এ কারণেও দাঁত কালো কিংবা সাদা দেখা যায়। আঘাতজনিত কারণে যখন কোনো দাঁতের রঙের পরিবর্তন ঘটে, তখন আক্রান্ত দাঁতটি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
খেলাধুলা, মারামারি অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে সাধারণত সামনের দাঁত আঘাতপ্রাপ্ত হয়। দাঁত আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর দাঁতটিকে যদি যথাযথ চিকিৎসা না করানো হয়, তাহলে সেটি আস্তে আস্তে মরে যায়। তখন দাঁতটি অন্য দাঁত থেকে আলাদা রং ধারণ করে।
প্রতিরোধ
আমরা দাঁতের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা এবং রং সহজেই ধরে রাখতে পারি। তবে মনে রাখতে হবে, মুখের যত্নের কোনো বিকল্প নেই। পানীয় পানের ক্ষেত্রে রঙিন পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। তামাক, জর্দা, পান, চুন দাঁত ও মুখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এগুলো যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত।
গর্ভবতী মায়েদের বেলায় ওষুধ সেবনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আঘাতজনিত কারণে যে দাঁতের রঙের পরিবর্তন ঘটে, তার দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। কেননা আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় লেশন থাকার কারণে এ থেকে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিকার
* দাঁত লালচে কিংবা কালো আকার ধারণ করলে পলিশিংয়ের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি।
* আঘাতজনিত দাঁত রুট ক্যানেল থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পন্ন করার পর দাঁতের রং অনুযায়ী ক্যাপ লাগানো যেতে পারে।
লেখক : ডা. আহমাদ বুলবুল, পি জি টি ট্রেনি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা