ত্বকে র্যাশ ওঠে কেন, প্রতিকার কী?

বিভিন্ন কারণে আমাদের ত্বকে র্যাশ হতে দেখা যায়। কিছু র্যাশ নিয়ে চিন্তার কারণ না থাকলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে র্যাশের চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে। আজ ১ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে ১৯৯২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. কমল কলি হোসেন, তিনি ইউএসএ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাইমারি কেয়ার প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার।
প্রশ্ন : ত্বকে র্যাশ বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : র্যাশ হলে সাধারণত আঁচের মতো হয়, ঘামাচির মতো হয়, অনেক সময় চর্বিযুক্ত (ফ্যাটি) টিস্যু ধরনের হয়। যেমন, সিস্ট, ফ্যাটি টিস্যু বা বিনাইন, ত্বকের অনেক ধরনের অসুখের কারণেও র্যাশ হতে পারে। এ ছাড়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল র্যাশ, এলার্জিক র্যাশ, অটো ইমিউন র্যাশ হতে পারে। এই সমস্যা ছোটদের থেকে বড়দের সবারই হতে পারে।
প্রশ্ন : প্রাথমিক অবস্থায় এর লক্ষণগুলো কীভাবে বোঝা যায়। এর কারণগুলো কী?
উত্তর : অনেক রকম লক্ষণ থাকে। নতুন শিশু থেকে বলি। প্রথম দিন থেকে ২৮ দিনে গায়ে একধরনের র্যাশ হয়। অনেকে সেটাকে মাসিপিসি বলে। এটা সেরে যায়। এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। আবার অনেক সময় দেখা যায় শিশু গোসল করছে, মায়েরা পাউডার দিয়ে দিচ্ছে, তেল দিচ্ছে বা কাজলের ফোটা দিচ্ছে- অনেক সময় এগুলো থেকেও শিশুর গায়ে র্যাশ ওঠে। এর ফলে দেখা যায় গা লাল হয়ে যাচ্ছে। শিশু যখন আরেকটু বড় হয় তখন অন্য ধরনের র্যাশ হতে পারে। যেমন নয় মাস বয়স থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের মধ্যে ভাইরাসের কারণে এক ধরনের র্যাশ হয়। তবে এই র্যাশ তিন বছরের মধ্যে বেশি হয়। সেটাকে রোজিওলা বলে। এতে সাধারণত তিন দিন জ্বর হয়। অথবা তিন থেকে পাঁচদিন অনেক জ্বর থাকে। এরপর জ্বরটা যখন সেরে যায় তখন র্যাশটা দেখা দেয়। তবে এখানে শিশু অতটা অসুস্থ বোধ করে না। এ সময় অনেকের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল ইয়ার (কান) ইনফেকশন হয় তো থাকে। তখন আমরা এন্টিবায়োটিক দেই। না হলে দেই না।
এরপর আরেকটু বড় হলে যখন খেলা করছে, ঘাসে যাচ্ছে, কোনো গাছের সঙ্গে ঘষা লাগছে- এর থেকেও অনেক সময় র্যাশ হয়। আরেকটি র্যাশ এক্সিমা থেকে হয়, ছোট থেকে শুরু করে সবারই হয়। গরমের সময় র্যাশ বেশি দেখা দেয়। চিকেন পক্সের ফলে গায়ে অনেক সময় র্যাশ দেখা যায়।
প্রশ্ন : এত ধরনের ত্বকের র্যাশের কথা বলছিলেন, প্রাথমিকভাবে আপনাদের করণীয় কী?
উত্তর : একেকটি রোগ একেকভাবে ঠিক করা হয়। যদি কেউ রোজিওলার সমস্যা নিয়ে আসে সে ক্ষেত্রে মায়েদের বুঝিয়ে দেই কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি ভালো হয়ে যাবে। সেটাতে তেমন কিছু করতে হয় না। চিকেন পক্সের ক্ষেত্রেও র্যাশ হলে তেমন কিছু করতে হয় না। কেবল চুলকানির জন্য একটু ওষুধ দিতে হয়। দাগটা থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রে, তাই আমরা বলে দেই শিশুর নখটা ছোট করে কেটে দেবেন যাতে না চুলকায়। চুলকানি বন্ধ করলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তবে আগে আমরা যেমন গুরুতর চিকেন পক্স দেখতাম এখন আর তেমন হয় না।
প্রশ্ন : গরম থেকে যে র্যাশগুলো হচ্ছে সেগুলো প্রতিরোধের কোনো উপায় আছে কী?
উত্তর : অনেক সময় গরম পানি গোসলের সময় ব্যবহারের ফলে র্যাশ হয়। তখন বলতে হবে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। ঠাণ্ডার দিন হলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। পাতা বা ঘাসের কাছে গেলে যদি র্যাশ হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রতিরোধের মধ্যে আরেকটি হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। বাইরে থেকে এসে ভালো করে হাত ধুতে হবে যেন কোনো রোগজীবাণু ঘরে না নিয়ে আসে। অনেক সময় ফ্লুও সঙ্গে আসে। বাচ্চারা অনেক সময় স্কুল থেকেও জীবাণুটি ঘরে বহন করে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন : তখন স্কুলগুলোর কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন? বা একটি শিশু থেকে আরেকটি শিশু আক্রান্ত হচ্ছে সেখানে কী করণীয় বলে মনে করেন?
উত্তর : বাইরের দেশে স্কুলে নার্স থাকেন। তিনি শিশুর স্বাস্থ্যের তত্ত্বাবধায়ন করেন। তিনি যদি শিশুটির গায়ে কোনো রকম র্যাশ দেখেন তাহলে স্কুলে যেতে নিষেধ করেন।
প্রশ্ন : অনেক ধরনের র্যাশের কথা বললেন। কিন্তু র্যাশ হলে যদি চিকিৎসকের কাছে না যায় তাহলে কী জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : অবশ্যই রয়েছে। আবার ভাইরাসের কথা বলি, চিকেন পক্স থেকে যদি চোখে র্যাশ হয়, মুখে হয়, সেকেন্ডারি কোনো ইনফেকশন হয়- এসব সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেক সময় আমরা গরমের দিনে দেখি ব্যাকটেরিয়াল পাঁচড়া বা ফোড়া হয়। কেউ হয়তো দেখল র্যাশ হয়েছে তখন মুখটা খুটাতে যায় তখন হয়তো সংক্রমণ হয়ে যায়, ছড়িয়ে যেতে পারে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্ক্যাবিজ। এটি খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। স্ক্যাবিজ যখন হয় তখন বাড়ির সবাইকে চিকিৎসা করা উচিত। একে খোস-পাঁচড়াও বলে। যে জিনিসপত্র রোগী ব্যবহার করছে তাও পরিষ্কার করে দিতে হয়।
প্রশ্ন : বলছিলেন স্ক্যাবিজের চিকিৎসা সবার নিতে হবে। কী ধরনের চিকিৎসা নিতে হবে?
উত্তর : চিকিৎসা সহজ। বেশ ছড়িয়ে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। একটি ওয়েন্টমেন্ট আছে স্ক্যাবিজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেটা সারা শরীরে মাখবে। যদি শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে হয় তাহলে ১২ ঘণ্টা রাখতে হবে। আর বড়দের ২৪ ঘণ্টা রাখতে হবে। এরপর সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে। আবার যদি চুলকানি হয় তাহলে এক সপ্তাহ পর পুনরায় এটি ব্যবহার করতে হবে।