পয়লা বৈশাখের স্বাস্থ্য সচেতনতায় ১০ পরামর্শ
আসছে নববর্ষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই। পান্তা-ইলিশের সঙ্গে চলবে এ পার্বণ, আর দিনভর ঘোরাঘুরি। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, হৈ-হুল্লোড়। এমন দিনে যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তো কেমন লাগবে? স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
১. পান্তা-ইলিশে অসুস্থ হবেন না
পান্তা-ইলিশ বাংলা নববর্ষের অন্যতম প্রধান আয়োজন। সাতসকালে উঠে পান্তা-ইলিশ দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের আয়োজন। কিন্তু পান্তা-ইলিশ খাওয়ার পর যদি সারা দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়, তাহলে তো নববর্ষের আনন্দ সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। পান্তা যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলে বিপত্তি বাধতেই পারে। পান্তা সারা রাত ধরে জমাতে হয়। এ জন্য পান্তা খুব যত্ন করে ঢেকে রাখুন। লক্ষ রাখুন, এতে যেন টিকটিকি বা মাছি না বসে। কারণ, এগুলোর দ্বারা হতে পারে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া। এখন গরমের সময় বলে অনেকক্ষণ ধরে পান্তা জমালে তা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নষ্ট হতে পারে, যা খেলে আপনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। বাইরে পান্তা-ইলিশ খেতে হলে সাবধান! প্রতিবছর কিন্তু আনন্দঘন এই দিনে হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি হন। তাই বাইরে না খেয়ে বাসায় নিজেই বানিয়ে নিন যত্ন করে। দিনটি আনন্দেও কাটান, সুস্থ থাকুন।
২. পোশাক হোক আরামদায়ক
প্রতিবছর নববর্ষে বেশ গরম থাকে। তার ওপর থাকে মাথার ওপর সূর্যের প্রখর রোদ। এই গরমে পোশাক যদি আরামদায়ক না হয়, তাহলে গরম বেশি লাগবে, ঘাম বেশি হবে। অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। গরমে সুতি কাপড় পরাই ভালো। বেশি রঙিন এবং সম্পূর্ণ কালো পোশাক না পরাই শ্রেয়। চিরায়ত বৈশাখী লাল পাড়ের সাদা শাড়ি ও সাদা পাঞ্জাবি আরামদায়ক হবে।
৩. প্রচুর পানি পান করুন
সারা দিন ছোটাছুটিতে সহজেই পানিস্বল্পতায় পড়তে পারেন আপনি, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই দিন প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সঙ্গেই রাখুন। যদি দেখেন আপনি খুব তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছেন, অস্থির লাগছে, মেজাজ খিটমিটে হচ্ছে, তাহলে বুঝবেন শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেরি না করে পানি পান করুন।
৪. স্যালাইন পান করুন
গরমে আমাদের শরীরে যে ঘাম হয়, তাতে পানির সঙ্গে লবণও থাকে। বেশি ঘাম হলে শরীরে লবণের ঘাটতি হতে পারে। শুধু পানি পানে এ ঘাটতি দূর হবে না। স্যালাইন পান করতে পারেন। অনেকে মনে করতে পারেন, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বুঝি স্যালাইন পান করা যাবে না। এ ধারণা ঠিক নয়। একদিন দু-একটা স্যালাইন খেলে কিছুই হবে না। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের নিয়মিত স্যালাইন খেলে সমস্যা হবে।
৫. রাস্তার জুস এড়িয়ে চলুন
নববর্ষের দিন বাইরে ঘুরতে এসে গরমে অনেকেই রাস্তার পাশের জুস, ফলমূল, আখের রস দেদার পান করেন। এটা খুবই ক্ষতিকর। রাস্তার পাশের দোকানগুলো জুস বানাতে ফোটানো পানি ব্যবহার করা হয় না, বেশির ভাগই ট্যাপের পানি। এই জুস খেলে পেটের পীড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. একটানা পরিশ্রম নয়
একটানা ছোটাছুটি করলে পরিশ্রান্ত হবেন তাড়াতাড়ি। এর ফলে অনেকের মাথাব্যথা হতে পারে। তাই ঘুরতে বের হয়ে একটানা না হেঁটে কিছুক্ষণ বসে জিরিয়ে নিন। সকালের কাজ শেষে দুপুরে বাড়ি গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে আবার ঘুরতে বের হতে পারেন। এতে ক্লান্ত হবেন না, চাঙ্গা লাগবে।
৭. ছাতা ব্যবহার করুন
নববর্ষে সাধারণত কাঠফাটা রোদ থাকে। এই রোদে ঘোরাঘুরি করলে হতে পারে মাথাব্যথা; অতিরিক্ত ঘাম থেকে দেখা দিতে পারে পানিস্বল্পতা। শুধু কি তাই? ত্বক পুড়ে কালো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই বাইরে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে ছাতা রাখুন।
৮. ডায়াবেটিস আক্রান্তদের সচেতন হতে হবে
নববর্ষে ঘুরতে বের হলে বেশ পরিশ্রম হয়। বেশি পরিশ্রম করলে দেখা দিতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়া। রক্তে শর্করার মাত্রা কমলে এটা হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে মাথা ঘোরে, মাথা ঝিঁঝিঁ করে, অস্থির লাগে, চোখে অন্ধকার দেখে, মেজাজ খিটমিটে হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। এ লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে মিষ্টিজাতীয় খাবার পুড়ে দিন। কিছুটা শক্তি ফিরে পাবেন তিনি।
৯. হিটস্ট্রোক থেকে সাবধান
গরমে দেখা দিতে পারে হিটস্ট্রোক। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণগুলো হলো, দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, ঘাম হওয়া বন্ধ হয়ে শরীর লালচে হয়ে যাওয়া, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, আচার-আচরণে পরিবর্তন, যেমন—হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া, অস্থিরতায় ভোগা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা, খিচুনি থেকে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। হিটস্ট্রোকের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হলো আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা কমাতে হবে। এ জন্য কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্রই আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোদ থেকে সরিয়ে ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে। শরীরের কাপড় যতটুকু সম্ভব খুলে ফেলে শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, তবে বরফ-শীতল পানি ঢালা যাবে না। কারণ, এতে করে রক্তনালিগুলো সংকোচনের ফলে দেহের তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে আরো বাড়বে, রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে। কুঁচকি ও বগলের নিচে আইস প্যাক রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসবে।
১০. শিশুদের খেয়াল রাখুন
একটু ঘামলেই শিশুরা পানিস্বল্পতায় বেশি ভোগে। হিটস্ট্রোকেও বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। বাইরে গেলে তাদের দুরন্তপনার কোনো শেষ নেই। তাই শিশুদের দিকে বেশি খেয়াল রাখুন। রোদে যেন বেশি দৌড়াদৌড়ি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পানি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি পরিমাণে দিতে হবে।
লেখক : ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু, মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।