নববর্ষ উদযাপন ও সুস্থ থাকার উপায়

আজ পয়লা বৈশাখ। পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর এই নববর্ষের উৎসব সুস্থভাবে উদযাপনের জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। আজ ১৪ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০০৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মিনহাজ রহিম চৌধুরী।
প্রশ্ন : পয়লা বৈশাখ উদযাপনে তো সবাই ঘর থেকে বের হবেই। এ সময় প্রচণ্ড গরম হয়। কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে মেলাকে উদযাপন করতে?
উত্তর : প্রত্যেকেরই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত। দুটো প্রস্তুতি থাকা দরকার। গরমের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আবার একপশলা বৃষ্টি আসছে, তার জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। মূলত প্রস্তুতিটা গরম ও রোদকে ঘিরেই নেওয়া দরকার। সে জন্য মাথায় রাখা দরকার, গরমে আমাদের শরীরে কী ধরনের রোগ বা উপসর্গ তৈরি হতে পারে। এই পরিবেশে খুব মৃদু সমস্যা থেকে প্রচণ্ড বড় আকারের সমস্যা হতে পারে। মৃদু আকারে সমস্যার মধ্যে হতে পারে ঘামাচি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, অনেকক্ষণ হাঁটতে থাকলে পায়ে পানি চলে আসে। এগুলো হলো সাধারণ সমস্যা। এগুলোর বাইরে যখন আরো তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, যখন আমরা প্রচণ্ড রোদে যাই, আমাদের শরীর চায় এর সঙ্গে সমন্বয় করতে। সমন্বয় করতে গিয়ে ঘাম হয়। কিন্তু যদি তাপমাত্রা অনেক বাড়তে থাকে, তখন শরীর এই সমন্বয় করতে পারে না। তখনই শরীরের মধ্যে নানা রকম উপসর্গ ও রোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একটি ব্যথাদায়ক অবস্থা হচ্ছে মাংসপেশির সংকোচন। এটি ব্যথাদায়ক অনুভূতি তৈরি করে। এ অবস্থা হলে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। একটু ঠান্ডা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সুবিধার্থে যদি ছাতা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে ভালো হয়। এটি সঙ্গে থাকলে বৃষ্টিতেও কাজে লাগবে এবং প্রচণ্ড রোদেও কাজে লাগবে। রোদ থেকে রক্ষা পেতে সান-প্রোটেকশন ক্রিম ব্যবহার করতে পারি। কারণ, অনেকেই চাইবেন চামড়াটা যেন নিরাপদ থাকে। আর কারো যদি সমস্যা হয়েই যায়, তাহলে তাঁর সঙ্গে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের দায়িত্ব একটু বেশি হবে। ব্যক্তির নিজের তো দায়িত্ব থাকবেই, পাশাপাশি পাশে যিনি থাকবেন তিনি খেয়াল রাখবেন, তাঁকে যেন একটু পানি খাওয়ানো যায়। পাশাপাশি ওআরএস বা সাধারণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
এ ধরনের মানুষের ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়। এটি আরো কিছু রোগের জন্ম দেয়। আরেকটি বিষয় হয় হিটস্ট্রোক। এটি অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। এটি যেন না হয়, এর জন্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রশ্ন : এ সময়ে সবার মধ্যেই পানি খাওয়ার একটি প্রবণতা থাকে। অনেকেই ডাবের পানি বা বিভিন্ন পানীয় জাতীয় জিনিস খান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী?
উত্তর : প্রতারকদের খপ্পরে পড়লে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক তো নিজেকেই থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ পানি তো নিয়ে যাওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়, মিনারেল ওয়াটার কেনার চেষ্টা করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি না থাকলে ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই পানি নেওয়ার জায়গাটি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নেওয়া দরকার।
আরেকটি জায়গায় সতর্ক থাকতে বলব, বিভিন্ন ধরনের খাবার, যেমন—চটপটি, ফুচকা এসব খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এগুলো আমাদের সকলেরই পছন্দ। মেলায় গেলে মানুষ এসব খাবার খেতে চাইবেন। সে ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ থাকবে, খাবারগুলো যদি আমরা এমনভাবে বাছাই করতে পারি, এগুলো যেন গরম ও সেদ্ধ করা হয়, সেগুলো তুলনামূলকভাবে রোগ-জীবাণুমুক্ত হবে।
প্রশ্ন : যাঁরা বিভিন্ন ধরনের সিস্টেমিক রোগে আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ওষুধ সঙ্গে নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না?
উত্তর : বিশেষ করে বয়স্করা অনেকেই হয়তো উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের রোগী থাকবেন। অনেকেরই ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগ থাকতে পারে। তাঁরা ওষুধের কথা কোনোভাবেই ভুলবেন না। তাঁদের প্রতিদিন ওষুধ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ওষুধগুলো নিয়ে বের হতে হবে এবং যেখানেই থাকেন না কেন, ওষুধগুলো খেতে হবে। এটা কোনোভাবেই ভোলা যাবে না।